somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনিসুল হকের সুত্র

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউটনের চতুর্থ সূত্রটি অনেক আগেই আবিষ্কৃত ছিল, সম্প্রতি সেটি মান্য করা হচ্ছে। সূত্রটি হলো, একজন মানুষের জনপ্রিয়তা টেলিভিশনের মাইক্রোফোনের সামনে উচ্চারিত তাঁর কথামালার বিপরীত আনুপাতিক। অর্থাৎ যিনি যত বেশি কথা বলবেন, তাঁর জনপ্রিয়তা তত কমবে।
এটা শত শত বছর আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। এ কারণেই লোকে বলে, নীরবতা হীরন্ময়। বলা হয়ে থাকে, তোমাকে দুটো কান আর একটা মাত্র মুখ দেওয়া হয়েছে। দু কান দিয়ে তুমি বেশি শুনবে, একটা মুখ দিয়ে তুমি খাবে, থুতু ফেলবে, হাসবে, কাঁদবে এবং মাঝেমধ্যে কথা বলবে।
কিন্তু এই যুগে নীরব থাকা মুশকিল। কারণ, এই যুগে টেলিভিশন নামে একটি যন্ত্র প্রচলিত হয়েছে, যার একটা চোঙ থাকে, যেটা নেতা-নেত্রীদের সামনে ধরা হয় এবং বলা হয়, কথা বলুন।
কথা বলতে গেলে সব কথা ঠিকঠাক বলা যায় না। আপনি একটা জিনিস লিখলেন, সেটা আপনি বারবার করে যাচাই-বাছাই করতে পারবেন, কাউকে দিয়ে দেখিয়ে নিতে পারবেন, ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু উপস্থিত যা বলবেন, তাতে তো ভুল হতেই পারে। আর আপনি মুহূর্তের উত্তেজনায় যা বলবেন, খানিকক্ষণ পরে উত্তেজনা মিটে গেলে আপনি তা আর বলবেন না।
অনেকেই মনে করেন, দু কথা শুনিয়ে দিতে পারলে গৌরব বাড়ে। তাই কটু কথা বলাটাকে তাঁরা বেশ একটা কাজের কাজ বলে গণ্য করেন। কথা বলার সুযোগ পেলেই তাঁরা অন্যের নিন্দা করেন। কটুকাটব্য করেন। তিনি বুঝতেও পারেন না, এতে তাঁর জনপ্রিয়তা কমে। লোকে তাঁকে পছন্দের তালিকা থেকে সরিয়ে অপছন্দের তালিকার দিকে নিতে থাকে। এ কারণে সবচেয়ে ভালো হলো, কথা না বলা। তারপরে ভালো হলো, কম বলা। তারপর ভালো হলো, মধুর কথা বলা। কবির ভাষায়, কাকের কর্কশস্বর বিষ লাগে কানে, কোকিল অখিল প্রিয় সুমধুর গানে। কথা যদি বলতেই হয়, ভালো কথা বলাই ভালো।
নিউটনের এই চতুর্থ সূত্রটা সম্প্রতি তিনি নতুন করে উপলব্ধি করেছেন। তিনি বুঝেছেন, জনপ্রিয়তা যদি বাড়াতে হয়, ভোট যদি পেতে হয়, তা হলে কথা কম বলতে হবে। বিশেষ করে, অত্যন্ত বিপজ্জনক যন্ত্র টেলিভিশনের মাইক্রোফোনে কথা না বলাই লাভজনক ও সুফলদায়ক। এর আগে তিনি একবার, প্রায় বছর দুয়েক, কোনো কথাই বলেননি, যা বলেছিলেন হিসাব করে বলেছিলেন, তখন তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছিল। তারপর কী হলো, একদিন তাঁর মুখের অর্গল গেল খুলে। তিনি অবিরাম কথা বলতে লাগলেন। আর তাঁর কথা মানেই এর নিন্দা, ওর সমালোচনা। অমনি নিউটনের চতুর্থ সূত্র কাজ করতে শুরু করল। তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ নিচে নামতে লাগল।
এখন তিনি ঠিক করেছেন, আর টেলিভিশনের ক্যামেরাগুলোকে তাঁর ত্রিসীমানার মধ্যেই আসতে দেবেন না। এর চেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক আর কিছুই হবে না। এটা হবে ভীষণ উপকারী। তাঁর জনপ্রিয়তা আবার বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে তাঁর প্রতিপক্ষ মুখ খুলেছেন। আর যথারীতি ওই প্রতিপক্ষ ভুল কথা, অপ্রিয় কথা, হাস্যকর কথা বলছেন। এভাবে যদি তিনি কথা চালিয়ে যেতে থাকেন, তা হলে কথা কম বলার যে গৌরবে তিনি এত দিন অভিষিক্ত ছিলেন, সেখান থেকে তাঁর চ্যুতি ঘটবে। তাঁর ক্ষেত্রেও নিউটনের চতুর্থ সূত্র কাজ করতে শুরু করবে। তিনি জনপ্রিয়তা হারাতে থাকবেন।
কাজেই আমরা তাঁকেই অভিনন্দন জানাব, যিনি সঠিক কাজটি করেছেন, যিনি হূদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন যে টেলিভিশনের ক্যামেরাগুলোকে এক শ হাত দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। তাঁর এই উপলব্ধি দীর্ঘস্থায়ী হোক। তা তাঁকে দীর্ঘস্থায়ী ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেবে। আর যিনি কথা বলবেন, তিনি ভুল বলবেন, কটু কথা বলবেন, তাঁর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী হবে। কে না জানে যে বোবার শত্রু নেই।
ইশপকে রাজা বলেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার রেঁধে আনতে। ইশপ রেঁধে এনেছিল জিহ্বার নানা পদ। রাজা বললেন, এটা সবচেয়ে দামি খাবার? এত কিছু থাকতে। ইশপ বললেন, মহারাজ, এই সেই জিব, যা দিয়ে আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করি, মানুষের মধ্যে প্রেমের বার্তা, কল্যাণের বার্তা প্রচার করি, সুন্দর কাব্য উচ্চারণ করি। কাজেই জিহ্বার চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না।
তখন রাজা ইশপকে বললেন সবচেয়ে কম দামি খাবার বানিয়ে আনতে। ইশপ আবার রেঁধে আনলেন জিহ্বারই নানা পদ। রাজা বললেন, সে কী ইশপ। তুমি তো একই জিনিস আনলে। ইশপ বললেন, মহারাজ, এই সেই জিব, যা দিয়ে আমরা পরস্পরের নিন্দা করি, গালিগালাজ করি, কটু কথা কই। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে? কাজেই এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে খাবার।
তবে শেক্সপিয়ার আবার অন্য কথা বলেছেন জিব নিয়ে। তিনি বলেছেন, সেই লোক কোনো লোকই না, যার জিব আছে আর সেই জিব দিয়ে যে কোনো নারীকে জয়ই করতে পারে না। উল্লেখ্য, এখানে শেক্সপিয়ার জিব বলতে কথা বুঝিয়েছেন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×