প্রশ্ন-৫ঃ ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতি মাসে যে লাভের অংশ আমরা পাই এটা নেয়া কি বৈধ নাকি তা হারাম সুদ হিসেবে গণ্য হবে????
প্রশ্নকারীঃ ছন্নছড়া যোবায়ের।
উত্তরঃ প্রিয় ভাই, আস-সালামু আলাইকুম। আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে চাই যে, আমাদের দেশে দু'ধরণের ব্যাংক রয়েছে। এক ধরনের ব্যাংক হল কনভেনশনাল ব্যাংক আর অন্য ধরণের ব্যাংক হল ইসলামী ব্যাংক। আপনি যদি কনভেনশনাল ব্যাংকের কথা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বলতে হয়, ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতি মাসে যে লাভের অংশ গ্রাহকরা পেয়ে থাকেন তা নেয়া বৈধ নয়; বরং তা হারাম সুদ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ, কনভেনশনাল ব্যাংকসমুহ ঘোষণা দিয়ে স্পষ্টত সূদের ভিত্তিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এগুলো যেমন সূদের ভিত্তিতে আমানত গ্রহণ করে তেমনি সুদের ভিত্তিতে অর্থায়ন করে থাকে। আর সূদ এমন একটি হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয় যার বিষয়ে শরীয়তে কোন ভিন্নমত নেই। উপরন্তু সূদের নিষিদ্ধতার বিষয়ে ইসলাম অত্যন্ত কঠিন ও অনমনীয়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা'আলার ঘোষণা হল,
"আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সূদকে করেছেন হারাম" [ সূরা নং ২ (আল-বাক্বারা), আয়াতঃ ২৭৫]
মহান আল্লাহ্ তা'আলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ প্রদান করে বলেনঃ
''ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করা এবং সূদ থেকে যা বাকি রয়েছে তা ছেড়ে দাও- যদি তোমরা মু'মিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে (তোমাদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধের ঘোষণা জেনে নাও, আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই জন্য, তোমরা (সূদী কারবার দ্বারা অন্যের উপর) জুলুম করেবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না"। [সূরা নং ২ (আল বাক্বারা), আয়াতঃ ২৭৮-২৭৯]
যারা সূদ খায় ক্বিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে একই সূরাতে বলা হয়েছেঃ
"যারা সূদ খায় তারা (ক্বিয়ামতের দিন) কেবল সে ব্যক্তির দাঁড়ানোর মত দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়। এটা এ কারণে যে, তারা বলে, বেচা-কেনা (ব্যবসা-বাণিজ্য) তো সূদের মতোই ' [সূরা আল বাক্বারা, আয়াতঃ ২৭৫]
সূদের লেনদেন ও সূদের সাথে সংশ্রব রাখা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত জাবের (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা সূদ খায়, সূদ দেয়, সূদের হিসাব লেখে এবং সূদের সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহ (ছা.) তাদের উপর লা'নত করেছেন এবং এরা অপরাধের ক্ষেত্রে সকলেই সমান।' [সহীহ মুসলিম]
আর আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকিং এর বিষয় বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বলতে হয় যে, ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতি মাসে যে লাভের অংশ গ্রাহকরা পেয়ে থাকেন তা নেয়া বৈধ; কারণ, ইসলামী ব্যাংকসমূহ সূদের ভিত্তিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে না বরং এগুলো শরীয়াহ্ অনুমোদিত পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করে এদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এগুলো প্রধানতঃ আল-ওয়াদিয়াহ ও মুদারাবা সহ বিভিন্ন শরিয়তসম্মত পদ্ধতির ভিত্তিতে আমানত গ্রহণ করে এবং প্রধানতঃ মুশারাকা (অংশীদারিত্ত্ব), মুরাবাহা (লাভের ভিত্তিতে বিক্রি), বাই-মুআজ্জাল (বাকীতে বিক্রি), বাই-সালাম (অগ্রিম মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে এবং পণ্য পরে নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহরে ভিত্তিতে কেনা-বেচা), ইজারা (ভাড়া), খিদমাহ (সার্ভিস) ইত্যাদির ভিত্তিতে অর্থায়ন করে থাকে। এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার ঘোষনা হলঃ
"আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সূদকে করেছেন হারাম" [ সূরা নং ২ (আল-বাক্বারা), আয়াতঃ ২৭৫]
তবে কোন ইসলামী ব্যাংক যদি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শরীয়াহ বিরোধী বা সূদী লেনদেন করে তাহলে গ্রাহকের উপর কোন পাপ বর্তাবে না। এজন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়ী হবে। ইসলামী ব্যাংকিং -এর ঘোষণা দিয়ে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংকিং এর অনুমতি নিয়ে যে ব্যাংকসমূহ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা যেন প্রকৃত অর্থেই শরীয়াহ পরিপালন করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপরিহার্য দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সূতরাং আপনি যদি সূদী লেনদেনের সাথে জড়িত হয়ে থাকেন তাহলে যথাশীঘ্র ইসলামী লেনদেনের সাথে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করা সমীচিন হবে বলে আমরা মনে করি।
মহান আল্লাহ তা'আলা সবচে' ভাল জানেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:২৪