ভাষা হলো মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম । এটি পরম দয়ালু আলাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত যা আলাহ তায়ালা নিজেই মানুষকে শিা দিয়েছেন। “করুণাময় আল্লাহ, শিা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন অভিব্যক্তি প্রকাশের পদ্ধতি” (সুরা আর-রাহমান:১-৪) ভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার কারো নেই। শিশু যেমন মায়ের কোলে আশ্রয় নিয়ে নিরাপত্তা বোধ করে এবং পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে ঠিক তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমে সবাই স্বাচ্ছন্দে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে যখন উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় তখন মাতৃভাষার মর্যাদা রার্থে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠে এবং বাংলাভাষাভাষীরা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারী অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে মাতৃভাষার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশ করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ২১শে ফেব্র“য়ারীকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করার পর মাতৃভাষার চর্চা ও সংরন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তা-ভাবনা ও আবেগ অনুভুতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাতৃভাষাসমূহকে বিলুপ্তির হাত থেকে রা করার জন্য এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্নমূখী পদপে গ্রহন করা হচ্ছে।
মানুষের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধ্বনিকে ভাষা বলে। আর মাতৃভাষা (গড়ঃযবৎ ঞড়হমঁব) হলো একান্ত নিজের ভাষা যা শৈশবে কেউ মা-বাবার নিকট থেকে শিখে। মায়ের ভাষা হলো সেই ভাষা যা কেউ তার মায়ের কাছ থেকে জন্ম সূত্রে লাভ করেছে। অন লাইন বিশ্বকোষ ডরশরঢ়বফরধ অনুসারে মাতৃভাষা (গড়ঃযবৎ ঞড়হমঁব) এর দু’টি প্রতিশব্দ হলো ঘধঃরাব খধহমঁধমব (স্বদেশী ভাষা) এবং ঋরৎংঃ খধহমঁধমব (প্রথম ভাষা)। ‘স্বদেশী ভাষা’ পরিভাষাটি কখনো এমন ভাষা বুঝাতে ব্যবহৃত হয় যখন কোন ভাষাভিত্তিক দেশের অধিবাসী সে দেশের ভাষায় পারদর্শী হয়। আর ‘প্রথম ভাষা’ বলতে ঐ ভাষা বুঝায় যে ভাষা কেউ সবচেয়ে ভাল বলতে পারে। তবে মাতৃভাষাকে শুধু কারো মায়ের ভাষা বলে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। কারণ কিছু পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মায়েরা তাদের স্বামীর দেশ ও সমাজে ভিন্ন কোন ভাষার পরিবেশে বাস করে যেখানে অন্য কোন ভাষা প্রথম ভাষা হিসেবে প্রচলিত। সেখানে শিশু তার পিতার স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়। এই েেত্র অবশ্য মাতৃভাষাকে মায়ের দেশের ভাষা হিসেবে মাতৃভাষা বলা যেতে পারে। যাই হোক, মাতৃভাষা সকলের নিকট চির অহঙ্কার ও গৌরবের। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা । আমরা গর্ব করি বাংলা ভাষা নিয়ে ।
পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার সংখ্যা হয়তো কখনোই নিরুপন করা সম্ভব হবে না। কারন বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান ভাষাসমূহ ছাড়াও ধর্মভিত্তিক, অঞ্চল ভিত্তিক, গোত্র ভিত্তিক অসংখ্য ভাষার জন্ম হয়েছে, বিকাশ ঘটেছে আবার এগুলোর মধ্যে অনক ভাষার বিলুপ্তিও ঘটেছে। বিশ্বখ্যাত ভাষাতত্ববিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুলাহর মতে পৃথিবীতে ২ হাজার ৭৯৬টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। ঊঃযহড়ষড়মঁব খধহমঁধমবং ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ নামক ভাষা বিশ্বকোষের বর্ণনা অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে ৬৯১২ টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। ভাষার এই ভিন্নতা, এই বৈচিত্র্য মহান আলাহ তায়ালারই কুদরত, তাঁরই নিদর্শন। তিনি ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষকে একই ভাষাভাষী করে সৃষ্টি করতে পারতেন কিন্তু এমনটি না করে তিনি হাজারও মাতৃভাষার এক বৈচিত্রময় বর্ণিল জগত সৃষ্টি করেছেন। আলাহ তায়ালা বলেন: “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রুম:২২)
মানুষের ভাব প্রকাশের মতা যেহেতু মহান স্রষ্টা আলাহ তায়ালার এক নিদর্শন এবং ভাষার ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য যেহেতু তার অপরীসীম মতার প্রমাণ বহন করে তাই ইসলাম স্বাভাবিকবভাবেই এই ভাষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে, একে লালন করে এবং এই মাতৃভাষার মাধ্যমে যুগে যুগে স্রষ্টার অমীয়বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে। আলাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের নিকট যুগে যুগে যে সব আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন তা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় পাঠিয়েছেন। আলাহ তায়ালা বলেন ঃ “আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার জাতির লোকদের ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, আলাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়” (সূরা ইবরাহীম ঃ ৪) যেমন হজরত দাউদ (আ.)-এর নিকট যাবুর কিতাব তাঁর মাতৃভাষা ইউনানী বা আরামিক ভাষায়, মুসা (আ.) এর নিকট তাওরাত তাঁর মাতৃভাষা ইবরানী বা হিব্র“ ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এমনিভাবে ঈসা (আ.)-এর নিকট তাঁর মাতৃভাষা সুরিয়ানী বা সিরিয়ার ভাষায় ইঞ্জিল কিতাব এবং মুহাম্মদ (স.) এর নিকট তাঁর মাতৃভাষা আরবী ভাষায় আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়। এসব আসমানী কিতাব তাদের স্বজাতির ভাষায় অবতীর্ণ করা না হলে এর মাধ্যমে হেদায়াত লাভ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ত এবং এগুলো নাজিলের উদ্দেশ্য ব্যহত হত। কারণ আসমানী কিতাব নাযিলের মূল উদ্দেশ্য হলো তা পাঠ করা, অনুধাবন করা এবং এর আলোকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন পরিচালনা করা। তাই আলাহ তায়ালা বলেন, “এই কুরআন আমি আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমার তা অনুধাবন করতে পার” (সূরা ইউসুফ ঃ ২)
কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, “আর যদি আমি কুরআন অনারবদের ভাষায় নাজিল করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত এ আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়নি কেন? এ কেমন কথা? অনারবী কিতাব আর আরবী ভাষী রাসূল! আপনি বলুন এ কুরআন মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও ব্যাধির প্রতিকারস্বরূপ। কিন্তু যারা ঈমান আনে না তাদের কাছে রয়েছে বধিরতা বরং কুরআন তাদের জন্য অন্ধত্ব স্বরূপ” (সূরা হা-মীম আস-সাজদা ঃ ৪৪)
যদি আলাহ তায়ালা এভাবে নবী রাসূলদের নিকট নিজ নিজ মাতৃভাষায় কিতাব নাযিল না করতেন তাহলে তাদের জাতির লোকজন আলাহ প্রদত্ত হেদায়াতের অমীয় বাণীর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতো। কারণ আসমানী কিতাব না বুঝে তন্ত্র-মন্ত্রের মতো মুখে আওড়ানোর জন্য প্রেরিত হয়নি। চিনির বস্তা বহন করেও গাধা যেমন চিনির স্বাদ লাভ করতে পারে না তেমনি আলাহ প্রদত্ত কিতাব না বুঝে পড়ে বা পরম শ্রদ্ধায় শেলফের মধ্যে সাজিয়ে রেখে দিলে মহান স্রষ্টার হেদায়াত লাভে মানুষ ধন্য হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে অথচ তারা এটি বহন করেনি (পাঠ করে ও মর্ম উপলদ্ধি করে তদনুযায়ী কাজ করেনি) তাদের দৃষ্টান্ত হলো পুস্তক বহনকারী গাধার মতো! কত নিকৃষ্ট সে স¤প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে!” সূরা জুমু‘আ: ৫)
মহান স্রষ্টার সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আরবী ভাষায়। তাই যারা আরবী ভাষা-ভাষী নন তাদের উচিত আরবী ভাষা শেখা অথবা অন্তত মাতৃভাষায় আল-কুরআনের অনুবাদ পড়া। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে দ্বিতীয় ভাষা যত ভালভাবেই শেখা হোক বা শুনার চেষ্টা করা হোক তা কোনভাবেই মাতৃভাষার মত আবেদন সৃষ্টি করতে সম হয় না বা হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পারে না। যাদের মাতৃভাষা বাংলা তারা বিদেশী ভাষায় যতই পারদর্শী হোক না কেন মাতৃভাষা তাদের মনে যে আবেদন সৃষ্টি করে অন্য কোন ভাষা ঠিক তেমন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। বিদেশী ভাষা শোনার সময় শ্রোতা সেটাকে মনে মনে বাংলায় অনুবাদ করে বুঝতে চেষ্টা করে। আর সকলের পে আরবী ভাষায় পারদর্শী হওয়া সম্ভব হয়না। তাই মাতৃভাষায় কুরআন চর্চা করা কুরআন শরীফ জানা ও বুঝার েেত্র কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ কারনেই ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় মুসলিম দিগি¦জয়ীরা বিভিন্ন দেশ ও জনপদ জয় করে সেখানে তাদের স্বীয় ভাষা প্রচলনের জন্য কোন দেশেই জবরদস্তি করেননি; বরং সেসব অঞ্চলের মাতৃভাষার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ছিল অপরীসীম। তাই ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনকালে বাংলা ভাষার প্রভুত উন্নতি ল্য করা যায়।
ইসলাম মাতৃভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক উপভাষার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কুরআন সাতটি উপ-ভাষায় নাজিল হয়েছে’। উপভাষার মাধ্যমে কুরআন নাজিলের ঘটনা নি:সন্দেহে মাতৃভাষার মর্যাদাকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
বিভিন্ন ইবাদত ও দোয়ার েেত্রও ইসলাম মাতৃভাষার চর্চাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আল-কুরআনুল কারীম যেহেতু আলাহ তায়ালার প থেকে নাযিলকৃত শব্দ ও অর্থের সমন্বয়ে ভাষার সর্বোচ্চ মানের অর্থ ও অলঙ্কার সমৃদ্ধ ভাষা এবং অন্য ভাষায় এর একেবারে যথাযথ বা প্রকৃত অনুবাদ করা সম্ভব নয় তাই শুধু নামাজে তেলাওয়াতের েেত্র আল-কুরআনের অনুবাদ তিলাওয়াত করা অনুমোদিত নয়।
তবে অন্যান্য দোয়ার েেত্র মাতৃভাষা চর্চার অনুমোদন রয়েছে। বরং যারা আরবী ভাষায় পারদর্শী নন তাদের জন্য মাতৃভাষায় দোয়া করাই উত্তম। মাতৃভাষার মাধ্যমে মনে অভিব্যক্তি যেভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় বিদেশী অন্য কোন ভাষায় তা সম্ভব হয় না। মাতৃভাষার মাধ্যমে বান্দা তার মনের সকল আকুতি প্রকাশ করতে পারে এবং তাঁর রহমতের ও মার আশায় থেকে প্রশান্তি লাভ করে। রাসূল (সা.) বলেছেন: “বান্দা যখন সিজদার মধ্যে থাকে তখন সে তার প্রভুর সবচাইতে নিকটে থাকে, তখন তোমরা বেশী করে দোয়া কর।” ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, নামাজের রুকু ও সিজদার সময় যেহেতু কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করার অনুমোদন নেই তাই সে সময় বান্দা তার ইচ্ছা অনুযায়ী মাতৃভাষার মাধ্যমে যে কোন ভাল দোয়া করতে পারে।
মাতৃভাষা আলাহতায়ালার একটি নেয়ামত। এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। একে মানুষের কল্যানের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। ভাষা হলো ভাবের বাহন । ভাব যদি ভাল হয় তাহলে ভাষা ভাল হবে। আর ভাব যদি মন্দ হয় তাহলে ভাষা মন্দ হবে। তাই ভাষার প্রশ্নে এ কথা বলা কখনোই সঙ্গত হবে না যে আরবী ভাষা বা উর্দু ভাষা ইসলামী ভাষা, সংস্কৃত ভাষা হিন্দুদের ভাষা আর ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ ভাষা ইহুদী-খ্রীস্টানদের ভাষা। কারন সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁরই নিদর্শন। তবে অশ্লীল ও অকল্যানকর কাজে আলাহর এই নিদর্শনকে ব্যবহার করে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের অনিষ্ট করার, সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিক মুল্যবোধের জন্য তিকর গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক ও বক্তব্য চর্চার অধিকার সৃষ্টিকর্তা কাউকে দেন নি। ভাষার পবিত্র রূপকে ভাল ও কল্যানকর উদ্দেশ্যে ব্যবহারে যেমন স্রষ্টার প থেকে পুরস্কার ও প্রশংসার ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি একে কলুষিত করা হলে বা নান্দনিক সৌন্দর্য নষ্ট করা হলে শাস্তি ও নিন্দার ব্যবস্থাও রয়েছে। আলাহ তায়ালা বলেন: “তুমি কি ল্য কর না, আল্লাহ তায়ালা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন: একটি পবিত্র বাক্য হলো একটি পবিত্র গাছের মতো। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন- যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে। এবং একটি নোংরা বাক্যের উদাহরন হলো একটি নোংরা বৃ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই। (সুরা ইবরাহীম: ২৫-২৬) আর মানুষ যে কোন কথা বা ভাষাই মুখ থেকে বের করুক না কেন তার রেকর্ড ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার নিকট সংরতি থাকে। “সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ (রেকর্ড) করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” (সুরা ক্বাফ:১৮)
ইসলাম মাতৃভাষাকে শুদ্ধভাবে চর্চা করার প।ে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) সবচাইতে শুদ্ধ ভাষায় স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন: “আমি আরবদের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ভাষাভাষী”। সবাই যেন ভালভাবে বুঝতে পারে এজন্য ত্রে বিশেষে কোন কথা তিনি তিন বার উচ্চারণ করতেন। আমাদের সমাজেও শুদ্ধভাবে কথা না বলাটা ত্র“টি হিসেবে গন্য করা হয়। আামাদের সমাজের ধর্মীয় নেতাদের এ বিষয়ে আরো মনোযোগী হওয়া উচিত। তাদেরকে রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরনের স্বার্থে এবং মানবতাকে সত্য, সুন্দর ও কল্যানের দিকে আরো গ্রহনযোগ্য পদ্ধতিতে আহবান করার উদ্দেশ্যেই মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চার দিকে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের নিকট পৌছানোর জন্য ভাষার ব্যবহার এমন হওয়া উচিত যা মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত ও উদ্বেলিত করে।
মায়ের প্রতি মানুষের ভালবাসা যেমন একটি স্বভাবজাত বিষয় তেমনি মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসাও চিরন্তন। ড. মুহাম্মদ শহীদুলাহ বলেছেন, ‘মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি এ তিনটি মানুষের পরম শ্রদ্ধার বস্তু’। মাতৃভাষার প্রতি আবেগ, অনুভূতি, উচ্ছ্বাস ও ভালবাসার প্রকাশকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে না। যেমন: রামনিধি গুপ্তের কবিতায়: নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনা স্বদেশী ভাষা/ পুরে কি আশা/ কত নদী সরোবর/ কি বা ফল চাতকীর/ ধারা জল বিনে কভূ/ ঘুচে কি তৃষা। কবি আব্দুল হাকিমের কবিতায়: যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ/ সেই বাক্য বুঝে প্রভূ আগে নিরঞ্জন। অতুল প্রসাদ সেনের: মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা। মাইকেল মধুসুদন দত্তের: পালিলাম আজ্ঞা সুখে পাইলাম কালে/ মাতৃভাষার রূপ-খনি পূর্ণ মনিজালে।
কিন্তু এ বন্দনার েেত্র এমন কিছু বক্তব্য ও কবিতার শ্লোক চোখে পড়ে যা অনেক েেত্র অতিরঞ্জন এবং মানুষের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বন্দনা অর্থহীন ও পরিত্যাজ্্য। যেমন: কবি আব্দুল হাকিমের কবিতায়: যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী/ সে সবে কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি। অথবা: ‘মাতৃভাষার প্রতি যাহার শ্রদ্ধা নাই সে মানূষ নহে’
মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই পৃথিবীর সব মাতৃভাষার সংরনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ভুমিকা পালন করতে হবে । সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে সমাজের সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা করা একান্ত বাঞ্ছণীয়। মাতৃভাষাকে রূপে-গুণে সমৃদ্ধ করার ল্েয জ্ঞানের প্রতিটি শাখার বিশ্বখ্যাত ও মূল্যবান গ্রন্থসমূহ যেমন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, বিশ্বকোষ, কাব্য, উপন্যাস, বিজ্ঞান গ্রন্থ ইত্যাদি মাতৃভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা আবশ্যক। যত ুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা হোক না কেন মাতৃভাষা যাতে কোনভাবে বিলুপ্ত না হয় সে জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী।