আধুনিক যুগে নারীরা সমাজের নেতৃত্বে চলে আসায় সমাজে নারী সংক্রান্ত সমস্যাগুলোই গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠছে বেশী, ন্যাপকিন,ব্রা,সেলওয়ার কামিজ, এসবই এখন বাংগালী সমাজগুলো তথা বাংলাদেশের প্রধান আলোচ্য বিষয়। অপরদিকে দূর্নীতি, সমাজের উন্নয়ন, ধর্ষন প্রতিরোধ, আইন শৃংখলা এসব এখন সেকেন্ডারী বিষয় ।
কোথায় যেন শুনেছিলূম, সম্ভবত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাঁর চন্দ্র-সূর্য নামক প্রবন্ধে লিখেছিলেন {কোথাও ভুল করে থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন } "পৃথিবীর সভ্য জাতি নামে খ্যাত অংশগুলো যখন বিভিন্ন বড় বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, গবেষনায় উন্মেষ ঘটিয়ে চন্দ্র সূর্যের দূরত্ব নিরূপণে ব্যস্ত আমরা বাংগালীরা ঠিক তখন টিনেজ মেয়েদের ন্যাপকিনের দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিরুপণে ব্যাস্ত ........"
আধুনিক যুগে বাংলাদেশের চালচিত্র অত্যন্ত বেদনাদায়ক এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ।একাত্তুর টিভির একটা অনুষ্ঠানে আজকে দেখলাম চার-পাঁচজন নারী অত্যন্ত মজা করে করে টিনেজ মেয়েদের বয়োসন্দ্ধিকালে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে খোশ গল্প করছেন । একজন মা বললেন তিনি নাকি তার ছেলেকে একদিন ডেকে এনে বললেন বাবা জানো, তোমাদের যেমন বয়োসন্দ্ধিতে শরীরে পরিবর্তন আসে, গালে দাড়ি গজায়, আমাদেরও (মা ) তেমন কিছু পরিবর্তন হয়,অত:পর মাটি ছেলেটিকে তাদের কিভাবে কি হয় তা জানিয়ে দিলেন এবং ছেলেটিকে তাদের ঋতুস্রাবের ব্যপারটি জানাতে পারায় অনুষ্ঠানে বেশ তুষ্টি প্রকাশ করলেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য আলোচকবৃন্দদের কথা বার্তা শোনার আর রুচি হয় নি ।
যাই হোক, মেয়েদের ঋতুস্রাব হওয়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে যেভাবে ঠাকঢোল পিটিয়ে সচেতনতা তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে, আজ থেকে ১০/১৫ বছর পূর্বে এমনটা দেখা যায় নি,অথচ তখনও মেয়েদের ঋতুস্রাব হতো, তারা তাদের মায়েদের কাছ থেকে বিষয়টা জেনে নিয়ে মায়েদের পরামর্শমত সুন্দরভাবেই সমস্যাগুলোকে টেকেল দিতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
একাত্তুর টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে মা টি যেভাবে তার ছেলের মনোজগতে মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে ভাবার অবকাশটুকু তৈরী করে দিয়েছেন, তাতে ছেলেটির মনে কোন তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া না ঘটলেও একটা দীর্ঘমেয়াদী মানসিক বিকৃতি তৈরী করতে পারে , যে বয়সে ছেলেটি বন্ধু বান্ধবদের সাথে ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় মেতে থাকবে, বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করবে , সেই সময়টায় তার কচি মনে নারীদের শারিরীক ব্যপার নিয়ে ভাববার অবকাশ তৈরী করা কি আদৌ কোন সুস্থ কাজ হয়েছে ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ ভোর ৪:০৯