Click This Link
২১শ দৃশ্য (তিথির বাসা)
(খোরশেদ বারান্দায় স্যুট বুট পরে দাঁড়িয়ে আছে। কলিং বেল টিপল। তিথি দরজা খুলল। খোরশেদকে দেখে হতবাক)
তিথি : আ-রে খোরশেদ? তুমি হঠাৎ .... এই বেশে.....?
খোরশেদ : কেন? এ পোশাকে আমাকে বেমানান লাগছে না-কি?
তিথি : হ্যাঁ ... তা....তো একটু বেমানান লাগছে।
খোরশেদ : আমি হত দরিদ্র সে জন্য? তোমার আমেরিকান বরের শরীরে খুব ভাল মানাবে, তাই না?
তিথি :

খোরশেদ : আগে বলিনি বলে যে কখনোই বলব না সে রকম কি কোন লিখিত চুক্তি তোমার সাথে হয়েছে?
তিথি : খোরশেদ তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ভেতরে এসে বস, এক গ্লাস ঠাণ্ডা সরবত খাও- মাথা ঠাণ্ডা হবে।
খোরশেদ : বসার দরকার নেই। আমার মাথা ঠিকই আছে। আমি আমার দেনা মেটাতে এসেছি।
তিথি : তোমার দেনা? কার কাছে?
খোরশেদ : তোমার কাছে। গত সাত মাসে তুমি আমার পেছনে যত টাকা খরচ করেছ, সে টাকা।
তিথি : মানে? খোরশেদ তুমি কি বলছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
খোরশেদ : না বোঝার কিছু নেই। তুমি আমাকে মোবাইল কিনে দিয়েছ, সিএনজিতে চড়েছি- ভাড়া দিয়েছ, সিনেমা দেখেছি- টিকিট কেটেছ, রেষ্টুরেন্টে খেয়েছি-বিল দিয়েছ। এখন আমি এ টাকাগুলো ফেরত দেব।
তিথি : খোরশেদ তুমি ছোট লোকের মত কথা বলছ।
খোরশেদ : তোমার সামনে নিজেকে বড়লোক হিসেবে জাহির করার কোন শখ আমার নেই। বল কত টাকা দেব?
তিথি : (চাপা স্বরে ক্ষোভের সাথে) খোরশেদ তুমি এখান থেকে চলে যাও।
খোরশেদ : তোমার টাকা না দিয়ে আমি যাচ্ছি না।
তিথি : সেদিন বললে তোমার অফিস বন্ধ হয়ে গেছে, টিউশনিটাও হারিয়েছ। এখন এত টাকা পেলে কোথায়?
খোরশেদ : যেখানেই পাই, এটা নিশ্চিত জেনো, তোমার বাবার সিন্দুক থেকে চুরি করিনি (খোরশেদ পকেট থেকে এক তোড়া টাকা বের করে তিথির দিকে এগিয়ে দিল) যেহেতু তোমার আমার কারও কাছেই প্রপার হিসেব নেই, তাই গড় পড়তায় ধরে নিলাম। এখানে ত্রিশ হাজার টাকা আছে।
তিথি : (মুখ শক্ত করে) খোরশেদ আমি টাকা নেব না। তুমি যাও এখান থেকে।
খোরশেদ : নেবে না কেন? একজন কপর্দকহীনের সাথে প্রেমের নাটক করে বিয়ে করছ আমেরিকান চাচাতো ভাইকে। কেন? কারণ তার টাকা আছে। এখন টাকার প্রতি বৈরাগ্য দেখাচ্ছ কেন? (খোরশেদ এক রকম জোর করে টাকাগুলো দিল) এই টাকাগুলো ইচ্ছে হলে রেখো না হলে ফেলে দিও। খোরশেদ আর কারও কাছে ঋণী থাকবে না।
( খোরশেদ চলে গেল। তিথির হাত থেকে টাকা মেঝেতে পড়ে গেছে। সে ফুঁপিয়ে ফুঁটিয়ে কাঁদছে।)
২২শ দৃশ্য (খোরশেদের ছাত্রীর বাসা) (খোরশেদ ডোরবেল টিপছে। টিসার মা দরজা খুলল)
টিসার মা : কি ব্যাপার খোরশেদ সাহেব? আপনি?
খোরশেদ : ভয় পাবেন না ম্যাডাম, আমাকে টিউশনিতে পুনঃর্বহাল করার অনুরোধ নিয়ে আপনার কাছে আসিনি। এসেছি আপনার টাকা ফেরত দিতে।
টিসার মা : আমার টাকা ফেরত দিতে এসেছেন? কিসের টাকা?
খোরশেদ : আপনি সেদিন বেতনের সঙ্গে যে বাড়তি পাঁচশ টাকা দিয়েছিলেন সে টাকা (খোরশেদ টাকা এগিয়ে দিল) এই নিন।
টিসার মা : এটা ফেরত দিচ্ছেন কেন? আমি তো এ টাকা দিয়েছিলাম আপনি অভাবে আছেন বলেছেন সেজন্য।
খোরশেদ : আমি অভাবে আছি বলেছিলাম, তাই বলে এটা বলিনি যে আমাকে ভিক্ষে দেন।
টিসার মা : (রাগত স্বরে) আপনি এখন এসে এসব কথা কেন বলছেন? যখন দিয়েছিলাম তখন বলেন নি কেন?
খোরশেদ : বলিনি কারণ তখনকার সিচুয়েশন ছিল ভিন্ন। এখন সিচুয়েশেন পাল্টেছে। (টাকা টিসার মা'র হাতে দিয়ে) চলি, টিসাকে আমার আদর জানাবেন। সে খুব ভাল মেয়ে। আর হ্যাঁ, যাবার আগে একটা কথা বলে যাই, অভাব যে কাররই থাকতে পারে তাই বলে সবাই ভিক্ষুক না। ধনে বড় হয়েছেন, মনে বড় হোন।
(খোরশেদ চলে গেল। টিসার মা অবাক হয়ে তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে আছে)
২৩শ দৃশ্য (মেস)
(খোরশেদের ঘর। খোরশেদ কাপড় চোপড় ভাঁজ করে ব্যাগে রাখছে। তপন পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকে দেখছে। এল মনির।)
মনির : কি ব্যাপার খোরশেদ, এতদিন তুমি কোথায় ছিলে?
খোরশেদ : (ঘুরে মনিরের দিকে তাকিয়ে) কোথায় ছিলাম সে কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?
মনির : (রাগত স্বরে) তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?
খোরশেদ : কিভাবে কথা বলব? (দুই হাত ঘষতে ঘষতে) চামচার মত হাত ঘষে ঘষে। ওসব ভুলে যান। ঐ দিন শেষ হয়ে গেছে। খোরশেদ এখন কোন শালাকে পরোয়া করে না।
(মনির দাঁত কিড়মিড় করে কিছু একটা বলতে গেল, তপন তার কাঁধে হাত রেখে তাকে থামিয়ে দিল)
তপন : খোরশেদ তুমি কাপড় চোপড় গোছাচ্ছ কেন? এখানে আর থাকবে না?
খোরশেদ : না। বাড়ি চলে যাচ্ছি।
মনির : বাড়ি চলে যাচ্ছ মানে? আমাদের টাকা না দিয়েই চলে যাবে?
খোরশেদ : আপনার ধারণা হল কিভাবে আপনার টাকা না দিয়ে আমি চলে যাব? কত টাকা যেন পান আপনি?
মনির : (খোরশেদের কথার ধরণ দেখে বিস্মিত) সাড়ে চার হাজার।
খোরশেদ : (পকেট থেকে টাকা বের করে মনিরের হাতে দিয়ে) এই নিন, এখানে পুরো সাড়ে চার হাজার টাকা আছে। (তপনকে) তপন তুমি কত টাকা পাও?
তপন : ঠিক মনে নেই..... হাজার তিনেক হবে।
খোরশেদ : (পকেট থেকে বান্ডিল টাকা বের করে সেখান থেকে ছয়টা পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে তপনের হাতে দিয়ে) এখানে তিন হাজার টাকা আছে।
মনির : তুমি এত টাকা কোথায় পেলে?
খোরশেদ : ডাকাতি করেছি। (মনিরের দিকে তর্জনি তাক করে) আপনার কোন সমস্যা আছে?
মনির : (রাগত স্বরে) খোরশেদ, তুমি কিন্তু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছ।
খোরশেদ : আপনার যতটুকু প্রাপ্য তার চেয়ে অনেক ভাল ব্যবহার করছি। শুনুন, যাবার আগে একটা সত্যি কথা বলে যাই। আপনি একটা খিটখিটে মেজাজের বাজে লোক। আপনার আচার আচরণ অনেকটা ছোট লোকের মত।
(মনির কিছু বলতে পারছে না, রাগে থর থর করে কাঁপছে)
তপন : খোরশেদ তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছ?
খোরশেদ : (কাপড় গোছাতে গোছাতে) হ্যাঁ।
তপন : গ্রামে গিয়ে কি করবে?
খোরশেদ : কিছু জমি জমা আছে। হাল চাষ করব।
তপন : তিথির সাথে যোগাযোগ হয়েছে?
খোরশেদ : হ্যাঁ, হয়েছে। সকল দেনা মিটিয়ে এসেছি।
তপন : দেনা মিটিয়ে এসেছ মানে?
খোরশেদ : তপন প্লিজ, এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
(তপন চুপ হয়ে গেল। বদরুল এল।)
বদরুল : কি ব্যাপার খোরশেদ সাহেব, এতদিন কোথায় ছিলেন?
খোরশেদ : এইতো একটা জরুরী কাজে বাইরে ছিলাম। আপনি এসেছেন ভাল হয়েছে, আমি মেস ছেড়ে দিচ্ছি। আমার কাছেতো আপনার চার মাসের ভাড়া পাওনা, তাই না?
বদরুল : জ্বি।
খোরশেদ : (পকেট থেকে টাকা বের করে গুণে কয়েকটা বদরুলের হাতে দিয়ে) চার মাসের আটশ টাকা করে মোট বত্রিশ’শ টাকা। এখানে সাড়ে তিন হাজার টাকা আছে। বাকীটা ফেরত দিতে হবে না। (কাপড়েরর ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে তপনের কাঁধে হাত রেখে) তপন, তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার দুর্দিনে তুমি আমাকে যে সাহায্য করেছ সেটা আমি কখনই ভুলব না । আসি, খোদা হাফিজ।
২৪শ দৃশ্য (বশির মিয়ার রেষ্টুরেন্ট)
(রাত। বশির ক্যাশ কাউন্টারে বসে টাকা গুণছে। খোরশেদ এল)
বশির : কি বাকীতে খাইতে আইছেন? সেইদিন আপনারে বলছিলাম না, বাকীতে খাইতে আইলে ঘাড় ধইরা বাইর করে দেব?
খোরশেদ : বাকীতে খেতে আসিনি বশির মিয়া। বাকী শোধ করতে এসেছি।
বশির : (আনন্দিত স্বরে) তাই নাকি? ভাল ভাল, খুব ভাল। দেন তাড়াতাড়ি শোধ দেন। (একটা টালি খাতায় চোখ বুলিয়ে) মাত্র চারশ তেষট্টি টাকা। দেন।
(খোরশেদ পাঁচশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিল)
বশির : আমার কাছে ভাংতি নাই।
খোরশেদ : ভাংতির দরকার নেই। বাকীটা রেখে দাও।
বশির : (টালি খাতায় লম্বা দাগ দিয়ে) দিলাম কেটে। আপনের কাছে আমার আর কোন পাওনা নাই।
খোরশেদ : (ঠাণ্ডা স্বরে) ভুল বললে বশির মিয়া, আরও সামান্য কিছু পাওনা আছে।
বশির : (আনন্দিত স্বরে) আরও পাওনা আছে?
খোরশেদ : হ্যাঁ।
(খোরশেদ বশিরের গালে প্রচণ্ড একটা চড় বসিয়ে দিল। বশির চেয়ার থেকে ছিটকে মেঝেতে পড়ল। সে গালে হাত দিয়ে বিস্ফারিত চোখে খোরশেদের দিকে তাকিয়ে রইল।)
খোরশেদ : আমি কুত্তার বাচ্চা নই- মানুষের বাচ্চা।
(খোরশেদ চলে যাচ্ছে। বশির সেদিকে তাকিয়ে আছে।)
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:২৬