ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। চাদঁটা একটু একটু উকি দিয়ে আবার মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় পায়ের কাছে জ্বালানো পিদিম টা নিভে গেল, চারিদিক অন্ধকার করে দিয়ে। জামাল উদ্দিন একটা পুরাতন খবর পড়ছিলেন সে আলোয়। জুলেখা কে ডাকলে সে আলোটা আবার জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে। কিন্তু জামাল উদ্দিনের কেন যেন ডাকতে ইচ্ছে করছে না । থাক না! এই তো ভালো। পিদিম নিভে যাওয়ার পরের ঘন অন্ধকারটা তাকে কতই না অতীতের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তার এই বায়ান্ন বছরের জীবনের স্বরণীয় সবগুলো মূহুর্তের যেন অন্ধকারের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
ঐতো যেদিন সে অর্পনা কে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে এসেছিল। সেদিনো তো এমন মেঘে ঢাকা রাত ছিল। সন্ধ্যার পর যখন অর্পনা বাবা মার সকল বন্ধন ছেড়ে চলে এসেছিল তার কাছে, ধর্মের সব বাধা ভুলে গিয়ে বিয়ে করেছিল ভিন্ন ধর্মের এক যুবক কে, সে অন্ধকারেই তো জামাল উদ্দিন বাড়ি নিয়ে এসে মার কাছে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। মায়ের সামনে দাড়ানো ছিল স্বচ্ছ চাদেঁর আলোয় আবছা এক রমনীর মুখ। খারাপ তো কাটে নি জীবনের সে অধ্যায় টি। কেটেছিল কি?
ঐ তো যেদিন জুলেখার জন্ম হলো। সেদিনো তো ছিল বর্ষার বৃষ্টি ভেজা এক অন্ধকার রাত। আধার রাতে সকল বেদনার অবসান ঘটিয়ে জন্ম হয়েছিল জুলেখার। অন্ধকার ছিল বলেই কি চাদেঁর আলোয় আরেকটা চাদেঁর মত মনে হয়েছিল জুলেখার মুখ? অন্ধকার ছিল বলেই কি নতুন এক শিশুর কান্না অদ্ভূত এক সুরের মত মনে হয়েছিল তার কাছে? হয়তো হ্যা ! হয়তো না!
আবার যেদিন এমনি এক অন্ধকার রাতে অর্পনার জীবন আলো নিভে গিয়েছিল। মনে পরে সেদিনের কথাও। সেদিন দিনটা কেমন ছিল? হাজার বছরের ধরে জ্বলতে থাকা স্বচ্ছ চাদেঁর আলোয় অন্ধকার এক রাত। হ্যা এমনি তো ছিল সে রাত । স্বচ্ছ আলোয় দেখেছিল মৃত এক চির চেনা মুখ, আর বুকের ভেতর জমতে থাকা হু হু সে কান্না।
বাবা! আলো নিভে গেছে ডাকো নি কেন ? জুলেখার ডাকে স্মতির সূতো টা ছিড়ে বর্তমানে ফিরে এলেন জামাল উদ্দিন। কখন যে পিদিম হাতে পাসে এসে দাড়িয়েছে জুলেখা খেয়ালই করেন নি তিনি। পায়ের কাছে রাখা পিদিম টা জ্বালিয়ে দিয়ে আবার রান্না ঘরে ফিরে গেল জুলেখা।
আহা! এই রাত, আহা! কত হাসি কান্নার স্মৃতি, কত চলে যাওয়া মূহুর্ত। পত্রিকার সে খবর টা আবার পড়তে শুরু করলেন জামাল উদ্দিন।