পাবনার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে আরো কয়েকটি জায়গায় নিয়োগ নিয়ে কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে। পাবনার এ ঘটনায় প্রশাসনের যে কান্না শুরু হয়েছে তা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা স্পিকারের ভাষায় ‘আল্লাহই ভালো জানেন'। গত ২৯-০৯-১০ রাত ১২টায় বাংলাভিশনের সংবাদ সারাদিন অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল অকপটে শিকার করেছেন আর তা হলো এ ঘটনা পাবনাকে আপাততো শান্ত মনে হলেও অশান্ত করেছে দেশের পুরো প্রশাসনকে। যার রেশ যদি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে তবে তা বর্তমান আওয়ামী সরকারের জন্য নির্বাচনী ফলাফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে এতে সন্দেহ নেই।
আমরা সেদিন পাবনার ঘটনায় কি দেখলাম
২৬-০৯-১০ তারিখ পাবনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২১ জন আসামী আদালতে আত্মসমর্পণ করে। আদালত অবশ্য তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আসামীরা আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে বিজয় সূচক ‘ভি' চিহ্ন প্রদর্শন করেছে। বিজয় অবশ্য তাদেরই হয়েছে। আসামীদের দাবি ছিল ডিসিকে অপসারণ হয়েছেও তাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বরিশালের মনপুরায়। আদালত চত্বরেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা মিছিল করেছে (ছবি ও সংবাদ সূত্র যুগান্তর ২৭ সেপ্টেম্বর পৃ:১৪)। ...... তখন আসামীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক আর এক নেতাকে বলছে ‘চিন্তা করিস না' আর তোকে ব্যাগ টানতে হবে না। কারাগারে যাওয়ার পর তোর কথা প্রধানমন্ত্রীও জানবে। তারপর তুই বড় নেতা হয়ে যাবি, এভাবেই বড় নেতা হতে হয়। এ সময় ঐ যুবক বলেন, কষ্ট হলো এজন্য যে, বড় কোন অন্যায় না করেও কারাগারে যেতে হচ্ছে। অথচ জড়িত থাকা সত্ত্বেও বড় বড় নেতাদের নামে মামলা হয়নি। মাঠে নামিয়ে দিয়ে সরে পড়েছে। কোন কিছু প্রকাশ করবো না মুখ বুজে সব গিলে গিলে রেখে দেব (যুগান্তর ২৭/০৯/১০)।
সব দোষ মিডিয়ার
পাবনায় এ ঘটনার সকল দোষ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম চাপালেন মিডিয়ার উপর। করলেন নির্ভেজাল মিথ্যাচার ‘যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই'।
পাবনার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন ও সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম গতকাল সন্ধ্যায় পাবনা জেলা প্রশাসক অফিস কক্ষে এক প্রেসব্রিফিং-এ বলেছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নয়। একই সাথে তিনি বলেন, ঐ ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকালকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অঙ্গুলি হেলান দিয়ে বলেছেন, তারা গত ২৩ সেপ্টেম্বর সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় সভায় কান্নাকাটি করেননি। তদের কাছে কোন সাহায্য চাননি। তারা চেয়েছে সরকারের এবং আইনের কাছে বিচার। পত্রপত্রিকায় তা অতিরঞ্জিত ভিত্তিহীন ও অমূলক বলা হয়েছে। (সংগ্রাম ২৮-০৯-১০ পৃ:১)
এখনও কী থেমে আছে ডিজিটাল নিয়োগ
ঘটনা প্রবাহ শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ : ২৪ সেপ্টেম্বর ১২টা এই মাঝ রাতে পূর্ব তালিকা মতে প্রার্থীদের ফোন করে মেডিকেল কলেজে ডেকে আনা হয়। তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় নিয়োগপত্র। নির্দেশ দেয়া হয় পরদিন শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে নির্দেশমতো তারা পরদিন ৮টার পূর্বেই কাজে যোগ দেন। এরপর কলেজ বোর্ডে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা টাংগিয়ে দেয়া হয়। নিয়োগ প্রত্যাশীরা তালিকা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তারা এরই মধ্যে কিভাবে কাজে যোগ দিয়েছে তা নিয়েও শুরু হয় গুঞ্জন। এ নিয়োগ কেলেংকারীর পিছনে অভিযোগ উঠেছে বরিশালের এক শীর্ষ আওয়ামী নেতার দিকে। ঐ নেতার বাসায় রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাপটপ নিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন কয়েকজন। এর আগে এই কলেজের অধ্যক্ষ তার ব্রিফকেস ভর্তি তদবির জমার কথা বলে বিপাকে পরেছিলেন। এ সংবাদও প্রকাশ হয়েছিল মানব জমিনে। যদিও দেখা গেল এক আওয়ামী নেতা একাই ৪০টি পদে তার দলীয় লোক নিয়োগ দিয়েছেন।
নিয়োগ পরীক্ষা নিতে গেলে কারচুপি করতে সমস্যা হবে ভেবেই বাতিল করা হয় লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত। আর মৌখিক পরীক্ষার নামে হয় ব্যাপক জালিয়াতি। .... নিয়মানুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সব পর্যায় সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল নিয়োগপত্র পাবেন নির্বাচিতরা। তাও আবার পাঠাতে হবে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষা। ঐ দিনই নিজ স্বাক্ষরে সবার হাতে হাতে নিয়োগপত্র দেন অধ্যক্ষ। অথচ পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল অবৈধ। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নিয়োগপত্র গেলে যোগদানের অন্তত ৪/৫দিন সময় লাগতো। তা ছাড়া ফ্লুইড দিয়ে ঘষামাজা হয়েছে নিয়োগপত্রের রেজিস্টার। মোছামুছি করে লেখা হয়েছে ৩ জনের নাম। ৭ নং সিরিয়ালের আশরাফুজ্জামান ৯ নং সিরিয়ালের আসাদুজ্জামান এবং ৩২ নং সিরিয়ালের জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। নিয়োগ নিয়ে কোন রকম আর্থিক কেলেংকারি হয়েছে কিনা তা জানা না গেলেও তদবির এবং তালিকার বাইরে যে একটি নিয়োগও হয়নি সেটা নিশ্চিত (যুগান্তর ২৭/০৯/১০)।
ঘটনাস্থল বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল)
দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্বাচিপ ও বর্তমান আওয়ামী লীগপন্থীদের নিয়ন্ত্রণাধিন বিএমএ -এর কিছু সদস্য সর্বশেষ কুকান্ডটি ঘটিয়েছে গত শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)। ওইদিন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তকে হেনস্তা করেছেন। তাকে কিলঘুষি ক'টা দিয়েছেন জানা যায়নি, তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ক্ষোভ প্রকাশকারীরা তার কলার চেপে ধরে ও তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। (সূত্র : আমার দেশ)। ডাঃ দত্ত নিজে অবশ্য এতটা বাড়াবাড়ির কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আমরা জানি ও সবাই জানে, ওই ঘটনা থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশ ও র্যা ব ছুটে আসে। তারা মাননীয় ভিসিকে সুরক্ষা দিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান এবং অফিস পাহারা দেন। খানিকক্ষণ পর ডাঃ দত্ত পুলিশ প্রহরায় বিএসএমএমইউ এলাকা ত্যাগ করেন। গত শনিবারের এই গোলমালের (ঢাকা শহরে ও আশপাশে সেদিন, ইদানীং প্রায় প্রতিদিনকার মতো সড়ক দুর্ঘটনা ও নানান অঘটনে প্রাণহানি হচ্ছিল বলে অন্য কয়েক জায়গায়ও হাঙ্গামা হয়েছিল) কারণ হচ্ছে, চাকরি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া। যেসব স্বাচিপ ও বিএমএ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার নিয়োগের পরীক্ষায় ফেল মেরেছেন তারাই নাকি নিজেদের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সেই কারণে জোট সরকার আমলে চাকরিবঞ্চিত বলে দাবি করে বলছেন, এবারই তাদের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়ে দিতে হবে। কালের কণ্ঠ পত্রিকার খবর অনুযায়ী স্বাচিপের নেতারা ওই হামলা-হাঙ্গামার পর বিক্ষুব্ধ দলীয় অকৃতকার্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। মনে হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল'-এর ভিসিকে এক্ষেত্রে অকৃতকার্যদের অযোগ্যতার সমস্যাটি ‘পবিত্র দলীয় আদর্শ' বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করে দিতে হবে।
(আমার দেশ ২৭/০৯/১০)
ডাঃ দত্ত নিজে অবশ্য কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন এতটা বাড়াবাড়ি নাকি হয়নি! পাঠক মহল অবশ্য ভাল ভাবেই জানে কতটা বাড়াবাড়ি হলে কেউ সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। ডাঃ দত্তের এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দানই প্রমাণকরে হামলাকারীরা কতটা বাড়াবাড়ি করে ছিল।
কেন ঘটেছিল এ ঘটনা?
চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দলীয় প্রার্থীরা পাস না করায় তারা ভিসি ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। গত ২৪/০৯/১০ তারিখ নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পরদিন শনিবার দুপুরে ঘটে এ ঘটনা। তাদের দাবি চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে ৭০টি পদই আওয়ামী ছাত্রলীগ, স্বাচিপ, এমপি মন্ত্রীদের তালিকা অনুযায়ী ক্যাডারদের! নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়োগের জন্য মাত্র ৭০ পদের বিপরীতে মন্ত্রী এমপি স্বাচিপ ও বিএমএ নেতাদের কাছ থেকে তদবির আসে ৪০০জন প্রার্থীর পক্ষে। তদবির তালিকা থেকে বাদপরা প্রার্থীরা এ কান্ড ঘটান। আরও উল্লেখ্য যে, এই একই নিয়োগ পরীক্ষায় পূর্বেও ব্যাপক নকল হওয়ার কারণে এই কর্তৃপক্ষই তা বাতিল করে নতুন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়।
নড়াইলে বিকল্প আওয়ামী থানা
সোনারগাঁ মডেল থানার গল্প এখন নড়াইল বাসির মুখে মুখে। নড়াইল শহরের রিকশাচালকও জানে এখানে গেলে মুশকিল আছান হয়ে যায়। শাসক দলের ছাত্র এবং যুব নেতারা বিকল্প-এ থানা চালান। বিপদে পরে কেউ থানায় গেলে থানা থেকে কৌশলে বলে দেওয়া হয় একটি ঠিকানা, পুরাতন বাস টারমিনালের কাছে সোনারগাঁ হোটেলে যান। সেখানে ঘুরে থানায় আসুন বিপদ আর বিপদ থাকবে না। এখানে বসেন শাসক দলের বেশ কয়েকজন যুব ও ছাত্র নেতা। তাদের ইশারা ছাড়া থানার দেয়ালে মাথা ঠুকে মরলেও কাজ হয়না, তাদের সংকেত ছাড়া থানায় মামলা রেকর্ড হয়না, পুলিশ নড়েনা, আবার সংকেত পেলে অসম্ভব সম্ভব হয়ে যায়। ভাল মানুষ থানায় ঢুকে চোর-ডাকাত হয়ে বের হয়, চোর ডাকাত ঢুকলে বের হয় সাদা মানুষ হয়ে। নড়াইলের ভদ্রজনরা এটার নাম দিয়েছেন বিকল্প থানা প্রশাসন। সোনারগাঁ নামের একটি হোটেলে বসে নেতারা তাদের আদেশ নির্দেশ দেন বলে সাধারণ মানুষ এর নাম দিয়েছেন ‘সোনারগাঁ মডেল থানা'। থানার কেস মামলা, মাদক বিক্রেতাকে ছাড়িয়ে নেয়া, সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমি কেনা বেচা, ভূমি অফিসে জমি রেকর্ড করা, কারো জমি দখল করে দেয়া, সরকারি বেসরকারি চাকুরি, টেন্ডারবাজি সবখানেই আছে এরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এক বিশাল বাহিনী। বলতে গেলে নড়াইল গোটা প্রশাসন জিম্মি ঐ কয়েক ছাত্র যুব নেতার কাছে। প্রতিদিন বিকাল হলেই সোনারগাঁ হোটেলের সামনে ভিড় লেগে যায়। জেলার নানা গ্রাম থেকে আসে বিচার প্রার্থীরা। বিকল্প থানা প্রশাসনের লোকেরা শালিস বসান, রায়দেন। তাদের শালিস মানে টাকা। যেদিকে টাকা বেশি রায় সে দিকেই। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন গ্রামে কোন গন্ডগোল বাঁধলে বিশাল এক মটর সাইকেল বাহিনী নিয়ে এরা হাজির হয়ে যায় সে গ্রামে। উপযাচক হয়ে কোন এক পক্ষকে আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে (মানবজমিন ২৭/০৯/'১০)।
টাঙ্গাইলের এসপিকে দেখে নেয়ার হুমকি
পাবনায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হাতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার টাঙ্গাইলে এসপিকে হুমকি দিলেন সরকারদলীয় এক নেতা। নিজের পছন্দের লোককে পুলিশের চাকরি না দেয়ায় রোববার জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর সঙ্গে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় এসপিকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন ওই আ'লীগ নেতা। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জেলার সচেতন মহলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। শহরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় প্রশাসনে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জানা যায়, রোববার বেলা ১১টায় জেলার আইন-শৃংখলা কমিটির সভা টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে শুরু হয়। জেলার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আইন-শৃংখলা কমিটির অন্য সদস্যরা মতামত প্রকাশ করেন। সভার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী তার উপজেলার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা না বলে সদর উপজেলার কান্দাপাড়া পতিতালয় এলাকায় অবাধে জুয়া খেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদর মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন সরকার সভায় উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইল শহরের পতিতালয় এলাকায় পুলিশ এবং ডিবি জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করে। ওসির কথা শেষ হতে না হতেই সোহেল হাজারী ওসিকে ধমক দেন এবং তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সোহেল হাজারীকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। এতে সোহেল হাজারী উল্টো পুলিশ সুপারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সুপারকে দেখিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল হাজারী নিজেকে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট দাবি করে সব সময় প্রশাসনের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে প্রশাসনের বিভিন্ন মহল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কতিপয় নেতাকর্মী বিশেষ করে কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী নানাভাবে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে ফায়দা হাসিল করছেন। তার তদবিরে অনেকেই এখন বিব্রত। বর্তমান সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল হাজারীর নিজের পছন্দের কয়েকজন লোককে পুলিশ সুপার পুলিশের চাকরি না দেয়ায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আইন-শৃংখলা কমিটির এ সভায় বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন বলে বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগে জানা গেছে (যুগান্তর ২৭/০৯/১০)।
এদিকে সাভারে উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতার হাতে লাঞ্চিত হন ৩(তিন) সরকারী কর্মকর্তা। যা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক ২-৩ দিন আগে এই তিন কর্মকর্তা ঐ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আর মারধরের ঘটনাতো তাদের শিখিয়েছে আওয়ামী এমপি বদি-আফিল'রা।
ভুয়া মুজিব নগর সার্টিফিকেটে চাকুরী
মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮৯ জন সাবরেজিস্ট্রারের কেউই মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে কোন দায়িত্ব পালন করেননি। টাকার বিনিময়ে তারা ভুয়া মুজিবনগর কর্মচারীর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি বাগিয়েছেন। ১৯৭১ সালে তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ছিল ৩ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে জাল নিয়োগপত্র ও রিলিজ লেটার এবং আত্মীকরণ সংক্রান্ত ভুয়া, জাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেছে তারা চাকরি নেয়ার সময়ে। আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্মীকরণ সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ চিত্র পাওয়া গেছে। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের রায় এবং রায় না মানার জন্য আদালত অবমাননার মামলা করার পর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে ১৯০ জনকে চাকরি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। ১৯০ জন সাবরেজিস্ট্রারের মধ্যে একজন মারা যান চাকরি করার সময়। এই সাবরেজিস্ট্রারদের সম্পর্কে যুগান্তরসহ একাধিক পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়। আইন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত কমিটির সামনে ব্যক্তিগতভাবে ১৮৯ জন সাবরেজিস্ট্রারকে উপস্থিত করানো হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রারদের এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্ম তারিখ এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বয়স কত ছিল তা জানতে চাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কত নম্বর সেক্টরে এবং কার অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সার্টিফিকেটও যাচাই করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট শনিবার আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পেশ করা হয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ ব্যাপারে আগামী সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেছেন, ভুয়া মুজিবনগর সার্টিফিকেট দিয়ে ১৮৯ জন সাবরেজিস্ট্রার চাকরি নিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে গত বছরের মাঝামাঝি তাদের চাকরি দেয়া হয়। তারা সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে মুজিবনগরের ভুয়া লিস্ট সংগ্রহ করে আদালতে মামলা করে। ১৯৭১ সালে ৪ জনের বয়স ছিল তিন বছর, ১৩ জনের বয়স ছিল তিন থেকে ৫ বছর, ৩৯ জনের বয়স ছিল ৫ থেকে ৭ বছর, ২১ জনের বয়স ছিল ৭ থেকে ৮ বছর, ১৮ জনের বয়স ছিল ৮ থেকে ৯ বছর, ১২ জনের বয়স ছিল ৯ থেকে ১০ বছর, ২০ জনের বয়স ছিল ১০ থেকে ১১ বছর, ১১ জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ১২ বছর, ১২ জনের বয়স ছিল ১২ থেকে ১৩ বছর, ১৩ জনের বয়স ছিল ১৩ থেকে ১৪ বছর, ১১ জনের বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৫ বছর, ৮ জনের বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৬ বছর, ৫ জনের বয়স ছিল ১৬ থেকে ১৭ বছর, ২ জনের বয়স ছিল ১৭ থেকে ১৮ বছর এবং ১ জনের বয়স ছিল ১৮ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষাৎকার প্রদানকালে ১৮৯ জন সাবরেজিস্ট্রারকে কোন তারিখে, কোথায় কোন সেক্টরে, কার অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার নিয়োগপত্র প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কে ছিলেন- এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। কমিটির ওই প্রশ্নের জবাবে একজন ছাড়া আর কেউই কোন তারিখ বলতে পারেননি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে যে নিয়োগপত্র ও রিলিজ লেটার দাখিল করেছেন, সেগুলো সাম্প্রতিক সময়ে আগুনের তাপে কিংবা আগুনের ধোঁয়ায় থেকে কিংবা অন্য কোন কৃত্রিম উপায়ে নতুন কাগজকে পুরাতন করা হয়েছে। তবে এগুলোর লেখা সাম্প্রতিককালের (যুগান্তর ২৭/০৯/১০)।
একটি ঘটনা ভিন্ন শিক্ষা
বিএনপি জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রাপ্ত ২৩০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এদের নিয়োগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি ‘ঘুপচি বিজ্ঞপ্তি' কিছু পত্রিকার নগর সংস্করণে করা হয়েছিল।
এটা অবৈধ অথচ ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৬-২০০০ আমলে ঘুপচি বিজ্ঞপ্তি তো দূরের কথা কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী সরকার। এমনকি তৃতীয় শ্রেণী প্রাপ্তদেরকেও। আজ যদি আওয়ামী লীগ এ সমস্ত অবৈধ নিয়োগ নিয়ে তদন্ত ব্যবস্থা না নিয়ে বরং প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে ২৩০ জনকে চাকুরীচ্যুত করে এ ঘটনা আগামীতে তাদেরই শিক্ষার জন্য স্মরণে রাখা উচিত। সামনে জনগণ যদি আবারও বিএনপিকে নির্বাচিত করে অথবা আওয়ামীলীগকে নির্বাচিত না করে তবে এ সমস্ত বিতর্কিত ডিজিটাল দলীয় নিয়োগের কী অবস্থা হবে সময়ই বলে দিবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা ক্ষমতাসীনদের অন্তরদৃষ্টি খুলে দিক। এই কামনা ও প্রত্যাশায়।
আলোচিত ব্লগ
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।