সতর্কিকরণঃ এই পোস্টর শুরুতে ১০ লাইনের একটি পদ্য আছে (তবে ইহা কবিতা পোস্ট নহে) ।
কোন বৃক্ষের খাইলে রস
বিবি থাকেন চির বশ ।।
কোন গাছের রস করলে পান
বৃদ্ধ ব্যক্তি হয় জোয়ান ।।
কোন গাছের এমন মধু
খাইলে ভালোবাসে বধূ ।।
কোন গাছটি হয় রসের রাজা রাজা
*** যুগ* রাখে তাজা ।।
জানতে হলে পড়ুন এইবেলা
নতুন রসে পুরান খেলা।।
কলেজের ছাত্র থাকা কালিন সময়ে নিয়মিত রেলওয়ে বুক স্টলে নতুন কি বই আসিলো জনিতে ঢু মারিতাম। সে সময় নিয়মিত ভাবে দিকানের কোনে বইয়ের ঢিপিতে লতা পাতার গুন, প্রেম পত্র লেখা শিক্ষা, গরিবের প্রেম এই জাতীয় বইগুলি দেখিতে পাইতাম। দোকানের মালিককে একদিন জিজ্ঞাসা করিলাম--- বিক্রি হয় না, অনেকদিন ধরিয়া পড়িয়া আছে এই রূপ বই দোকানে রাখেন কেন? সের দরে বেচিয়া দিলেও তো কিছু জায়গা বাহির হয়। দোকানদার জানাইলো এই বইগুলি তাহাদের বহুল বিক্রিত বই এর স্তুপ, স্টক কয়েকদিনেই শেষ হইয়া যায়, আবার স্টকে আনা হয়। এই জন্য নিয়মিত ঐ একই জাতীয় বইয়ের স্তুপ দেখিতে পাই। কি ধরণের সাধারণ জ্ঞান হইতে বঞ্চিত হইতেছি জানিবার জন্য দোকানদারের কথায় অনুপ্রাণিত হইয়া এক খানা পুস্তিকা ক্রয় করি -- নাম ''নতুন রসে পুরান খেলা'', লেখক - সোলায়মান খোয়াজপুর। উপরের পদ্যখানি ঐ বইয়ের প্রচ্ছদ হইতে টুকলি করা। পুস্তিকা পাঠে অনেক কিছুর সহিত ইহাও জানিতে পারিলাম --মসুর ডাল এবং কিসমিস বরফ গলা জলে পিশিয়া পুলটিস বানাইলে কি কাজে লাগে ইত্যাদি।
যৌবন ধরিয়া রাখার আগ্রহ শুধু বাংলাদেশের লোকদের মধ্যে আছে এমন নহে। পৃথিবী জুড়িয়া সকল সময়েই এই রূপ ব্যক্তির অভাব ছিল না যাহারা অনন্ত যৌবন প্রাপ্ত হইতে চাহিয়াছিলেন। হেরোডোটাস এর লেখা হইতে আমরা ফাউন্টেন অফ ইউথের কথা জানিতে পারি। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ইহার সন্ধানে অনেক অভিযান হইয়াছে। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান মুভির একটা উল্লেখ যোগ্য অংশ এই ফাউন্টেন অফ ইউথ কে কেন্দ্র করে আবর্তিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে অভিযাত্রী পনস ডি লিওন এর নামে শহরও আছে । ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের মাঝেও ও খিজির আলাই হিস সালাম এবং আবে হায়াত লইয়া কিছু ঘটনার বর্ণনা আছে।
যৌবন ধরিয়া রাখিবার আগ্রহে আমি কোন অন্যায় দেখি না। তবে যৌবন ধরিয়া রাখিবার জন্য বিভিন্নজন বিভিন্ন সময়ে যে পন্থা অবলম্বন করিয়াছেন তাহার মধ্যে কিছু পৈশাচিক (এলিজাবেথ বাথোরি), কিছু অমানবিক, কিছু বিষয় চিন্তার খোরাক যোগায়, আবার কিছু বিষয় হাস্যকর। সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের যৌবন ধরিয়া রাখিবার প্রয়াস আমার ক্ষুদ্র মগজে চিন্তার উদ্রেক করিয়াছে। বিশিষ্ট স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি এবং চেতনাবিদ জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী ৭১ বছর বয়সেও যৌবন ধরিয়া রাখিয়াছেন। সম্প্রতি উনি আংগুল চোষার অভ্যাস শুরু করায় প্রতিয়মান হইতেছিল ওনার যৌবন শিশুত্বের দিকে যাত্রা শুরু করিতেছে। উনার জীবনী বিশ্লেষণ করিয়া দেখিতে পাইলাম উনি আদিতে টেন্ডু পাতার ব্যবসা করিতেন। আজ হইতে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে উনি মিয়ানমার হইতে টেন্ডু পাতা আনিয়া বাংলাদেশে বিক্রয় করিয়াছেন। এই কারণে প্রথম অবস্থায় আমি অনুমান করিয়াছিলাম চিরযৌবনা এই ব্যক্তির যৌবনের রহস্য হয়তো টেন্ডু পাতা। কিন্তু আরো অগ্রসর হইয়া দেখিলাম যে আরো অনেকেই টেন্ডু পাতার ব্যবসা করে, অনেকই খায়, কিন্তু কেহই ওনার মতো চিরযৌবন প্রাপ্ত হন নাই। বিধায় এই তত্ত্ব পরিত্যাগ করিতে হইল।
আমার পরবর্তী অনুমান ছিল ওনার স্ত্রী ভাগ্য। উনি বিশিষ্ট পীর বংশে বিবাহ করিয়াছেন। ওনার স্ত্রী ইয়েমেনি (বা আরো সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে বাগদাদী) পীরের বংশধর। কিন্তু ভালোভাবে চিন্তা করিয়া দেখিলাম আরো অনেক পীর আছে যাহাদের বাবা- মা উভয়েই পীরের বংশধর- পীরের সিলসিলা, পীরের খানদান। কিন্তু ঐ সব পীরানে পীরদের চুলদাড়ি সাদা হইয়া গিয়াছে, ওনারা বৃদ্ধ হইয়া গিয়াছেন এবং কেহ কেহ স্বর্গবাসী হই্য়া গিয়াছেন। কাজেই এই থিওরিও পরিত্যাগ করিতে হইল
অবশেষে আমার চক্ষু খুলিয়া দিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিন্তাবিদ জগন্নাথ বেশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জনাব মিজানুর রহমান চেতনাবাদি । ৬১ বছর বয়স্ক মিজানুর রহমান বলিয়াছেন তিনি বিচি হইতে চান না, তাহার প্রাণ প্রিয় সংগঠন যুবলীগের দায়িত্ব পাইলে তাহার জগতে চাহিবার আর কিছু থাকিবে না। ৬১ বছর বয়সে নব যৌবন প্রাপ্ত হইয়া দেশের যুবসমাজকে তিনি হেদায়েত করিতে চান। এক্ষণে বোঝা গেল যৌবনের রহস্যের চাবিকাঠি হইলো ''যুবলীগ''।
**যাহাদের বয়স পঞ্চাশের কম তাহারা ইনফ্যান্ট লীগে যোগদান করিয়া লেবেনচুশ চুশিতে পারেন। মা-জননী দের প্রতি অনুরোধ, আপনারা যুবতি লীগে জয়েন না করিয়া লরিয়েল এবং গার্নিয়েরএর উপর আস্থা রাখুন। কখনো কোন নরাধম যদি ইঙ্গিত করে আপনার বয়স ১৮ বছরের একদিন ও বেশি তবে নিশ্চিত জানিয়া রাখিবেন সেই ব্যাটা অতিশয় অভদ্র , দুরাচার এবং সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
**প্রথম ছবিটি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকা হইতে চুরি করা। দ্বিতীয় ছবি Fountain of Youth Archaeological Park এর ওয়েব সাইট হইতে চুরি করা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:৩৯