somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাস্ট-নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন এবং ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে আস্তিক-নাস্তিক যুদ্ধ লেগে আছে এবং সেটা যে চলবে তাই স্বাভাবিক। ইসলামি সকল দলের লোকেরাই নাস্তিকদের ঘৃণা করে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির, হেফাজত, হিজবুত তাহরিরসহ সকল দলেরই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। যেসব নাস্তিকরা মহানবী (সাঃ) এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে নিয়ে অশ্লীল ব্লগ বা ফেসবুকে অশ্লীল কথাবার্তা লিখেছে তাদের প্রতি ক্ষোভটা একটু বেশি। থাবা বাবা, ওমর ফারুক লাক্স, সুব্রত শুভ এবং মুক্তমনা ব্লগ, অচলায়তন, ধর্মকারী ব্লগের বিরুদ্ধেই তাদের ক্ষোভ প্রকট। উদাহরণ স্বরূপ থাবা বাবার মৃত্যু। শুধুমাত্র কট্টরপন্থী ইসলামিক দলগুলাই সরাসরি আক্রমণগুলায় জড়িত।

ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল নিজে একজন নাস্তিক মতানুবলম্বী। যাহার প্রমাণগুলা উনার অনেক লেখা থেকেই প্রতীয়মান হয়। তার ভাই হুমায়ূন আহমেদ আস্তিক ছিলেন, না নাস্তিক ছিলেন তা জানিনা। তবে উনার লেখাগুলোতে উনি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মকে খোঁচা দিয়েই লিখতেন। উনার অনেক লেখাতেই উনি নামায পড়ুয়া অনেক ব্যক্তিকে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানব হিসেবে উপস্থাপন করতেন। নামায পড়ুয়া লোকেদের তিনিই সবচেয়ে বেশি হেয় করে লিখেছিলেন। ইসলামকে খোঁচা দিয়ে লেখাগুলোকে অনেকেই “সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে” এরুপ মতামত দেন। তবে ইসলামিদলগুলা মনে করে উনি একজন ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন। তাই শুধুমাত্র ইসলামকেই তিনি সুক্ষ খোঁচা দিতেন। উনার কোন উপন্যাসেই তিনি হিন্দুদের বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের খারাপ বা ভিলেন রুপে অবতীর্ণ করেননি। পক্ষান্তরে জাফর ইকবালের লেখায় ইসলাম বিদ্বেষী নয় বরঞ্চ নাস্তিকতার প্রচারের ব্যবস্থা ছিল। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোতে তিনি কখনোই ইসলামকে খোঁচা দেননি। বরঞ্চ পাতায় পাতায় তিনি উনার নিজস্ব মতবাদ অত্যন্ত ক্রিটিকেল উপায়ে ব্যাখ্যা চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক লেখাতে অবশ্য তিনি দাড়ি-টুপিধারী ব্যক্তিদের তুলে এনেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসলে অনেকেই কিন্তু দাড়ি-টুপি নিয়েই অনেক বাঙ্গালীকে হত্যা-ধর্ষণের সাথে যুক্ত ছিল। সেসব ব্যক্তিদের অনেকেই জামায়াতে ইসলামে যোগ দিয়েছিল বিঁধায় জামায়াতের প্রতি উনার যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে।

যিনি মনে প্রাণে ইসলাম ধর্ম পালন করেন তিনি ইসলামের পক্ষে লিখবেন এটাই স্বাভাবিক। জাফর ইকবালও তার নিজস্ব মতবাদ প্রচারের অধিকার রাখে, যেমনভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধর্ম প্রচারের অধিকার রাখে। এটা সবার ব্যক্তিগত অধিকারও বটে। একজন ব্যক্তি নাস্তিক হয়ে গেল, কি না গেল সেটা জানা আমার জরুরী নয়। আমার কাছে জরুরী কোন ব্যক্তি আমার ধর্মের প্রতি আঘাত হানার চেষ্টা করছে কিনা সেটা দেখা। কোরআনেও সবাইকে যার যার ধর্ম, মতবাদ পালনের অধিকার দেয়া হয়েছে। কাউকে জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে বলেনি। অথবা বলেনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের আঘাত করো। কিংবা বলেনি তাদের মতবাদ প্রচারে বাঁধা সৃষ্টি করো।

জাফর ইকবালের বই পড়ে অনেকেই আজ বিজ্ঞান মনস্ক হয়েছে। কিন্তু সবাই নাস্তিক হয়ে যায়নি। আর হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ে কেউ কেউ ভবঘুরে হিমু সেজেছে যারা মুসলমানের বাচ্চা হয়েও ধর্ম নিয়ে চিন্তা করেনা। তাদের সামনে হুমায়ুনের খারাপ দিকের কথা বললে অথবা হুমায়ুনকে ধর্মবিদ্বেষী বললে তারা ক্ষেপে যায়। যেহেতু তারা ধর্মচর্চা ছেড়ে হিমু সাজে তারা অটোম্যাটিক ধর্ম বিদ্বেষী হবে এটাই স্বাভাবিক।

জাফর ইকবাল নাস্তিক হওয়ায় এবং জামায়াত শিবির বিরোধী হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের তারাও জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি শাবিপ্রবিতে জাফর ইকবালের পদত্যাগপত্র দেখে তারাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। তারা যখন আবার দেখল জাফর ইকবাল সাস্টে থাকবে তখন তাদের মাথায় ভুত চেপে যায়। তাই তারা জাফর ইকবালকে হটানোর জন্য বিভিন্ন স্টেপ নেয়া শুরু করেছে। তার মধ্যে জাফর ইকবালের বাসার সামনে ককটেল ফুটানো, “সচেতন নাগরিক” ব্যানারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া, মাঠ পর্যায়ে সিলেটিদের মাঝে উস্কানি ছড়িয়ে দেওয়ার মত কাজগুলো তারা ভালভাবেই করে যাচ্ছে। সিলেটের বিভিন্ন দলের বড় বড় সাইত্রিশ জন নেতাকর্মী যদিও আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শুধুমাত্র গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সেখানে তারা জাফর বিদ্বেষী মনোভাবও ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর তাই এই আন্দোলন বাস্তবায়নে জামায়াত শিবিরের ছেলেরাই বেশি ভুমিকা পালন করছে। স্পষ্ট বোঝা যায়, তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ একমাত্র জাফর ইকবাল বিদ্বেষ এবং অন্য কিছু নয়।

পরিশেষে বলতে হয়, কথাগুলো কাউকে সমালোচনার জন্য বলা হয়নি। বাস্তবতায় ঘটে যাওয়া সত্য কিছু চিত্র তুলে ধরা হল মাত্র। কেউ এটা থেকে যদি কষ্ট পান তাতে আমি দায়ি নই, বরঞ্চ আপনারা নিজেরাই দায়ি হবেন। হুমায়ূন আহমেদকে খাটো করা বা জাফর ইকবালকে উঁচুতে তোলা অথবা জামায়াত শিবিরের পঁচানো আমার উদ্দেশ্য নয়। জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে সাস্টের যে আন্দোলন এবং এতে শিবিরের সম্পৃক্ততা তুলে ধরাটাই লক্ষ্য। কারণ, সিলেটের ম্যাক্সিমাম অঞ্চলগুলোতে জামায়াত-শিবিরের ব্রাঞ্চ আছে। ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন, ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারসহ অনেক আন্দোলনে জামায়াত শিবিরের লোকেরাই বেশি ভুমিকা পালন করেছে। সিলেটের লোকাল লোকেদের সাথে জামায়াত শিবিরের লোকেদেরই পরিচিতি বেশি। সুতরাং, তারা সিলেটিদের কাছে যা প্রচার করবে সিলেটিরা তাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এই স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোকে তারা চমৎকারভাবে কাজে লাগাচ্ছে। মাঝে মাঝে এসব আন্দোলনে তেল ঢেলে দিচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈপ্লবিক ছন্দ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:১২




বছর তিনেক আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে উড়ন্ত ভঙ্গিতে ছবি তুলেছিলো একটা মেয়ে। তার নাম ইরা।

ইরার ওই ছবিটাই হওয়া উচিত বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতীক। আমাদের মেয়েদের মেধা আছে, অদম্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম ও তার আসল বাস্তবতা

লিখেছেন নীল আকাশ, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭







বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নামে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষের সাথে ভন্ডামি করে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য উপরের ছবিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‌এই সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমি সমস্যার সমাধান কি?

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

দেশে বিশ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা কত জানেন? অসংখ্য। এর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা কেউ দিতে পারেনাই, নামে বেনামে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি, মার্কিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শূন্যতার বিরম্বনা

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৯

"শূন্যতার বিরম্বনা "

তুমি আমার ভিতরে থাকা গভীর কষ্ট,
অনেক টা আলমারীতে তুলে রাখা পরতে না পারা
কাপড়ের মতো।
তুমি আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা গভীর
এক ভালোবাসা,
যেখানে নেই কোনো প্রাকৃতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্রীয় মনোবিকৃতি ও জাতিসত্তার লোপ: নিৎসে, ফুকো, ফ্রয়েড ও মার্ক্সের দর্শনে বাংলাদেশের অন্তর্গত বিপর্যয় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:২৩


আমরা কোথায় যাচ্ছি ? না, এই প্রশ্নটিই ভুল। আমরা আদৌ কোথাও যাচ্ছি কিনা, সেই নিশ্চয়তাই আজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যে সমাজে বাস করি, সেটিকে আর সমাজবিজ্ঞান দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×