৫ আগস্ট, ২০১০। চিলির উত্তরাঞ্চালের সান হোসে সোনা ও তামার খনিধসে ৩৩ জন শ্রমিক দুই হাজার ৪১ ফুট নিচে আটকা পড়েন। ১৩ অক্টোবর, ২০১০। দুর্ঘটনার ৬৯ দিন পর তাদের সবাইকে সফলতার সাথে উদ্ধার করা হয়।
১০ অক্টোবর, ২০১০। প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে আমিনবাজারে তুরাগ নদে পড়ে ডুবে যায় একটি বাস। ৫৪ ঘন্টার চেষ্ঠায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার বিগ্রড, র্যাব, পুলিশ মিলে বাসটিকে উদ্ধার করেন। সাথে উদ্ধার করা হয় ১৩ টি লাশ। বাকি গুলো? পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোতা নদের(আমাদের কর্মকর্তাদের ভাষায়!!!) স্রোতে ভেসে গেছে বাকি দেহগুলো।
দুটি ঘটনাই আমাদের শিক্ষা দেয়। একটির উদ্ধারকাজে প্রকাশ পেয়েছে প্রচন্ড মনোবল, সাহসিকতা, আন্তরিকতা, দক্ষতা, প্রচেষ্টা। অন্যটিতে চরম ঔদ্যাসীনতা, অদক্ষতা, অবহেলা।
প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত পাবলো নেরুদার দেশ চিলি সাংঘাতিক কোনো উন্নত দেশ নয়। বিবিসিতে সরাসরি দেখলাম, তাদের উদ্ধারকর্মীদের নৈপুন্য ও দক্ষতা। ৪.৫ মিটার উচ্চতার ফিনিক্স ২০৪১ ফুট নিচ থেকে একে একে তুলে এনেছে ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে একজন বলিভিয়ার নাগরিক। সে জন্য উদ্ধারকাজ দেখতে ছুটে এসেছেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালোস। আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে ৩১ বছরের ফ্রোরেনসিও আভাতোজ উঠে আসার পর চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা যে ভাষণ দিয়েছেন তাও অনেক সংযত।
আমরা জনসংখ্যায় চিলির চেয়ে চৌদ্দগুন(!) এগিয়ে। আর কচুরিপানা ভাসা নদের মধ্যে একটি বাস শনাক্ত করে তুলতে লাগল ৫৪ ঘন্টা। স্বাধীনতার ৩৯ বছরে সরকারি পযার্য়ে কোন দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠেনি। এরা কাজের চেয়ে কথায় পটু। এর আরেকটি নির্দশন হলো আইএসপিআরের বক্তব্য। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের(আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “প্রতিকূল অবস্থা সত্তেও সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সশ্রস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।…সময় নষ্ট না করে সেনাবাহিনীর রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার্স ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। কঠোর ও বিপৎসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন ডুবুরিরা।” হায়রে আমার সফল অভিযান ! একটি ভাঙ্গা বাস তুলে আনা যদি সফল অভিযান হয়, তাহলে ৬৯ দিন বদ্ধ খনিতে ৩৩ জনকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রেখে জীবিত উদ্ধার করা কি? আমাদের মন্ত্রী ও আমলাদের আরাম-আয়েসের জন্য বাড়ি-গাড়ি সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু একটি মাঝারি দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যোগাড় করা হয়নি।
আমিনবাজারের হতভাগ্যদের জন্য শোক প্রকাশ করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। দুঃখ প্রকাশ করছি সেই হতভাগ্য স্বজনদের জন্য, যারা তাদের প্রিয় মানুষটির মৃতদেহ খুঁজে পায়নি।
ধিক্কার আমাদের সরকারকে, অভিনন্দন চিলির সরকারকে।