ফেসবুকে আমার এক বন্ধু পোস্ট করেছেন, "নগর পুড়লে দেবালয় কি এড়ায়?" ঘটনাক্রমে তিনি আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী । এখানে আমার জবাব হচ্ছে, জী না এড়ায় না কিন্তু দেবালয়বাসী যদি আগে জানতে পারতো নগর পুড়তে যাচ্ছে, তাহলে হয়তো তারা আগে থেকেই আগুন নেভানোর জন্য পানি নিয়ে তৈরি থাকতো
এখানে প্রসঙ্গ হচ্ছে, অতিবৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের খুলে দেওয়া বাধের কারণে ডাউনস্ট্রিমে থাকা আমাদের দেশের নদীগুলো অতিরিক্ত পরিপূর্ণ হয়ে দেশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে । বিশেষ করে, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ইত্যাদি আরও জেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখন এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন । এই মানুষগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও কম নয় । সাথে ডুবে যাচ্ছে একের পর এক ধর্মীয় উপসানলায় । ভারতীয় মিডিয়া কি এখন একবারও এটা নিয়ে কোন সংবাদ পরিবেশন করছে ? তাদের মন্দিরও তো পানির নিচে, তাহলে কয়েকদিন আগে এই মন্দির নিয়ে মায়াকান্না কি ছিল তাদের কোন প্রোপাগান্ডা ?
আমি অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই - বোন দের দেখেছি, তারা এ দেশের নাগরিক হলেও তাদের ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ভারতকে অনেক পছন্দ করে, অনেকে আবার প্রায়ই মুখে না বললেও মনে মনে ভারতকে নিজের দেশই মনে করে। যেন আত্মার সম্পর্কে আত্মীয়। যেহেতু ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তাই এ দেশীয় অনেকের আত্মীয় ভারতে বাস করে, এমনকি আমি শুনেছি সেই সুবাদে অনেকে ভারতেও জমিও কিনে রাখেন এক প্রকার সিস্টেম করে।
আমার বলার উদ্দেশ্য এটা না যে আমি তাদের ভারতপ্রীতিকে অন্যায় বলছি। সেটা তারা করতেই পারে। কিন্তু ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বাংলাদেশীদের প্রতি প্রীতি নেই। তারা বরাবরই সুযোগসন্ধানী, তারা স্বার্থের জন্য সবকিছু করবে, এটা আরও প্রতিফলিত হয় ভারতের শাসকগোষ্ঠীর বারংবার নেওয়া পদক্ষেপে। আমি কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাসমূহকে আমলে নিয়েই বলছি।
এই তো গত কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছু দাবী দাওয়া নিয়ে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি নেয় এ দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়। এ কথা অস্বীকার করার জো নেই যে তাদের অনেকের বাসাবাড়ি কিংবা মন্দির ইত্যাদি জায়গা সে সময় অনেক ভাংচুর করা হয়েছে কিন্তু সেগুলোর অনেকগুলো ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি পুরাতন আক্রোশ কিংবা আওয়ামী লীগেরই নির্দেশে গোপন পরিকল্পনায় সংঘটিত হওয়া ঘটনার বহিঃপ্রকাশ। আর এতে ইন্ধন দান করে ভারত, বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া। এ দেশীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই বোন দের জন্য তাদের নাকিকান্না তখন রীতিমতো দৈনিক চর্চার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল।
অথচ সম্প্রতি এটা কি হলো, একের পর এক নদীর বাধ খুলে দিয়ে নির্বিচারে হিন্দু মুসলমান সব ভাসিয়ে দিচ্ছেন। ঘটনাপ্রবাহ হচ্ছে, ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত ডম্বুর হাইড্রইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দেয়া হয়েছে কারণ ত্রিপুরাতে ব্যাপক বর্ষণ হয়েছে ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে । ডম্বুর বাধ গেট খুলার পর এখন শুনছি তিস্তা বাধের গেট ও নাকি খুলে দিবে । আচ্ছা মানলাম, তাদের ওদিকে যেহেতু পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল, তাই বাচার জন্য তারা বাধ খুলে দিয়েছে। কিন্তু বন্ধু দাবী করা রাস্ট্র কেন আগে থেকে এ দেশীয় মানুষকে সতর্ক করলো না? কমপক্ষে কয়েকদিন আগে তারা যাদের জন্য নাকিকান্না করলো, তাদের বাচানোর জন্য বা তাদের নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য তো সতর্ক করতে পারতো। কিন্তু না, এখন মন্দির মসজিদ দেখার টাইম নাই, নিজে বাচলে বাপের নাম।
এ থেকেই কি বুঝা যায় না, কতটা সুযোগসন্ধানী রাস্ট্র এই ভারত। মাওলানা ভাসানী তো এই কারণেই বলেছিলেন, " ভারত আমাদের জাত শত্রু, এই কথা যে প্রজন্ম বুঝতে পারবে, সে প্রজন্মই এই জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান"। এখন মাওলানা ভাসানীর কথা আবার অনেকের ভিতরে চুলকানির উদ্রেক ঘটায়, কি আর করার ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:১৬