আওয়ামী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে দেশে এসেছে স্বাধীনতা ২.০ । নতুন এই সময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি বাক স্বাধীনতা, জনগনের ক্ষমতা, ন্যায়ের বিজয়ের শক্তি ইত্যাদি । নিরস্ত্র প্রায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জন করে এই ২য় স্বাধীনতা, যেখানে ছাত্র ছাত্রীদের অবদান ছিল অপরিসীম ।
এই ছাত্র ছাত্রীদের দাবি হচ্ছে এক নতুন বাংলাদেশ, যেখানে অন্যায়কে সরাসরি না বলা যাবে । এরই ধারাবাহিকতায় সেই ছাত্র জনতার ব্যক্তিগত চাওয়ার প্রতিফলন ঘটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় । বাংলাদেশকে দেশ বিদেশে সম্মান বয়ে নিয়ে আসা ড: মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় সরকার, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দুইজনও উপদেষ্টা পদে শপথ গঠন করেন ।
কিন্তু কথা এগুলা না, আওয়ামী রেজিম এত সহজে তাদের ১৭ বছরের আঁকড়ে রাখা ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ । তাই তো সন্ত্রাসী বাহিনীদের গোপনে বিভিন্ন একশনে নামাচ্ছে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা এই দলের কিছু জা*নোয়ার নেতা-নেত্রীরা । এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক স্থাপনা যেমন মন্দির, মাজার ইত্যাদি ভাঙচুর, হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘর বাড়ি ভাঙচুর ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে জনতা কিংবা বিরোধী মতের মানুষজন আওয়ামী সমর্থিত কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সাথে প্রতিশোধপন্ন আচরণ প্রদর্শন করে, তবে এগুলোর বেশিরভাগই করে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে পাতি কর্মীরা । কেন করেছে জানেন? যাতে আপনারা বলতে বাধ্য হন, আমরা তো আওয়ামী আমলেই ভালো ছিলাম । এখন তো ভালো নেই আমরা ।
এর ফলশ্রুতিতে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত একটি জায়গা, শাহবাগে আন্দোলনে নেমে গেলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনতার একাংশ । দৃষ্টিকটু ব্যাপার হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাত্র একদিন পরেই এই আন্দোলন শুরু করে তারা । যদিও তাদের উপর হামলা নিঃসন্দেহে জঘন্য ব্যাপার কিন্তু নতুন একটি সরকারের সাথে তাদের নেতৃত্ববৃন্দ আলোচনায় না গিয়ে জনতা নিয়ে আন্দোলন শুরু করায় কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটছে অনেকের মনে ।
প্রশ্ন নাম্বার ১, এটা আওয়ামী রেজিমের একটি দূরদর্শী চাল নয়তো ? কেননা তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে পারলে পারতপক্ষে এই নতুন সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে । তখন তারা বলার সাহস পাবে তাদের বিকল্প এই নতুন সরকার নয় । স্ট্রং একটি সোর্স থেকে খবর পাওয়া যায়, এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরাও সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছে ।
প্রশ্ন নাম্বার ২, এটা ভারত সরকারের কোন ষড়যন্ত্র নয় তো ? এটা হলে, নির্ঘাত আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসবে । ছোট ছোট বাচ্চারাও জানে, আওয়ামী রেজিম এই ১৭ বছর টিকে ছিল ভারত সরকারের পছন্দের প্রতিবেশী দেশের সরকার হিসেবে । আর বর্তমান ভারত সরকার তাদের দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য যতই বিভীষিকা হোক না কেন, তাদের নাকিকান্নার উদ্রেক হয়, যখন এই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের কিছু হয় । আবার এই দেশে কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব পর্যায়ে সরাসরি ভারত সরকারের সমর্থন আছে, যে কারণে এখানে একটি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন নাম্বার ৩, আদতে এই আন্দোলনরত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন কি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর আস্থা একেবারেই রাখতে চায় না? এমনটা মনে হচ্ছে, তারা তো নতুন সরকারকে একটা চান্স দিয়ে দেখতে পারতো । দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনি বিশেষ করে পুলিশ মাঠে নেই এখন । কেন? এর উত্তর কারো অজানা নয় । নতুন সরকার আসলে প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের আইন শৃঙ্খলা পুনর্গঠন করা । এই সময়টাও কেন তারা দিতে চাচ্ছেন না?
ইত্যাদি আরও অনেক প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে দেশের অন্যান্য ছাত্র জনতার মনের মাঝে । এর উত্তরগুলো এমন যে আমরা জানি কিন্তু বলবো না । তবে মাত্র কয়েকদিন আগে জুডিশিয়াল ক্যু এর একটি অপচেষ্টার পরে মনে হচ্ছে সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আরেকটি ক্যু করার চেষ্টা চালানো যাচ্ছে, যেখানে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র । যাই হোক, এই ঘটনার পিছনের বিষয়গুলো এখন জোরেশোরে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি । একজন দালালের বাচ্চার জায়গা এই স্বাধীন বাংলাদেশ ২.০ এ হওয়া উচিত না।
সকলকে ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:০১