- আচ্ছা, চলো, আজকে রাস্তার পাশে বেলাল ভাইয়ের ফুচকা খাই ।
- না, কেন, তুমি না আমাদের রিলেশন হওয়ার সময় বলেছিলা, রাস্তার পাশে কোনকিছু তুমি খাও না । আর রাস্তার পাশে খাবার তো না-ই । তাহলে ?
-আরে ধুর, বাদ দাও তো, বেলাল ভাইয়ের ফুচকার অনেক সুনাম । সমস্যা নেই, চলো খাই ।
আবির ওর গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো চুলকাতে থাকে । নীলার আচরণগুলো কখনই তার কাছে পরিস্কার নয় । আবির আর নীলা দুইজনেই একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে । আবির অবশ্য নীলার চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র । ওদের মধ্যে ভাব হওয়ার ব্যাপারটাও একটু অদ্ভুত । একদিন বৃষ্টির দিনে আবির পথে আনমনা ভাবে চলার সময় খেয়াল না করে কাঁদার মধ্যে পড়ে যায় । সেটি দেখে আশেপাশের সবাই হেসে দেয় । কাঁদায় পড়ার পর আবির কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার পর সবার হাসি দেখে সেও হেসে দেয় । এই ব্যাপারটিই এক পাশ থেকে খেয়াল করে নীলা । সেখান থেকেই ভালো লাগা শুরু । এরপর আবিরের সম্পর্কে নীলার খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু । হ্যাঁ, আবিরকে নীলাই প্রপোজ করে । আবির প্রথমে কিছু না বললেও, হ্যাঁ বলতে তিনদিন সময় নেয় ।
তবে আবিরের কাছে নীলা মেয়েটাকে বরাবরই একটু অদ্ভুত লাগে । একদিন ওকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলো বসুন্ধরা সিটি । সেখানে আবিরকেই একটা শার্ট আর এক জোড়া জুতা কিনে দিলো । আবির কত না করলো, কিন্তু কে শোনে কার কথা । নীলা প্রায়ই বলে, আচ্ছা, তোমাকে যে বয়ফ্রেন্ড বলে আর দশটা মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবো, আমার মান-সম্মানটা থাকবে ? তাই আবির আর সেদিন না করেনি । এত পাগলামির মাঝেও এই নীলা মেয়েটাই এখন আবিরের জীবন ।
আরেকদিন হলো কি, নীলা একদিন ক্যাম্পাসে একটি ছোট বক্স গিফট র্যাপ করে নিয়ে আসছে আবিরের জন্য । আবির অনেক অনুরোধ করে গিফটটি না নেওয়ার জন্য । কিন্তু যখন আবির খেয়াল করে নীলার চোখ ছলছল, তখন আর সে গিফটটি না নিয়ে পারে না । গিফট র্যাপটি খুলে অবাক হয় আবির । ভিতরে একটি মোবাইল । নীলাকে জিজ্ঞেস করতেই বলে, "আব্বু আমাকে জন্মদিনে কি দেবে জিজ্ঞেস করলে আমি বলি আরেকটা মোবাইল কিনে দাও । আমার তো একটা মোবাইল আছেই, আমি আরেকটা মোবাইল দিয়ে কি করবো ? তাই এইটা তুমিই রেখে দাও ।" আবির কিন্তু কিছু বলতে পারে না । নীলার আচরণগুলো দেখলে মাঝে মাঝে ওরও কান্না পায় কিন্তু সে কখনই নীলার সামনে কান্না করে না, গোপনে, একাকী করে ।
আচ্ছা, মেয়েটাকে তো ও কোনদিন বলিনি, তাহলে মেয়েটি এতকিছু জানে কি করে ? ও কিভাবে জানে আবিরের সারামাসের খরচের যোগান হয় শুধুমাত্র টিউশনির টাকা দিয়ে ? বাড়ি থেকে টাকা তো আসেই না বরং ওকেই বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় । আচ্ছা, মেয়েটি কেন শুধু ওর জন্য দামী কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার শখটা বাদ দিয়েছে ? ওর জন্যই কেন জীবনে কষ্টগুলোকে আপন করে নিতে চাইছে ? জীবনে কি ভালবাসাটাই সব ? আবেগটাই সব ? বাস্তবতার কি কোনই জায়গা নেই এখানে ? আবিরের মনে হাজারটা প্রশ্ন কিন্তু এটা সেও জানে এই প্রশ্নগুলো কখনই নীলাকে করা হবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৭