somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ যাত্রা

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবারের ঈদ যাত্রা বদলে দিয়েছে আমাদের চিরচেনা বাংলাদেশকে। যান জট নেই। জীবনের ঝুকি নিয়ে বাস, ট্রেনের ছাদে হাজারো মানুষের উপস্থিতি নেই । উপচে পড়া মানুষ নিয়ে লঞ্চ যাত্রা নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এমন স্বস্তিদায়ক ঈদ যাত্রা আমরা আর কখনই দেখিনি। শুধু যে বিগত ১৭ বছরেই আমাদের দেশের হাল খারাপ ছিল, এই কথাটা আসলে সঠিক নয়। এর আগেও বাংলাদেশের অবস্থা ভাল ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকায় বেশিরভাগ অরাজকতাই আগে প্রকাশ পেত না। সভ্য দেশগুলো সম্পর্কেও মানুষের তেমন ধারনা ছিল না। জীবন যাত্রার নিয়মিত দুর্ভোগগুলোকে মানুষ নিয়তি বলে ধরে নিত।

শৈশবের ঈদ যাত্রার অভিজ্ঞতা আজ তুলে ধরতে চাইছি। প্রায় । প্রায় ২৫/৩০ বছর আগের কথা। বছরের দুই ঈদের অন্তত একটিতে দেশের বাড়িতে যেতাম। যতদিন দাদা দাদী বেচেঁ ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত এই ধারা চালু ছিল। সে সময়ে বাস টারমিনাল ছিল একটা। সেটা ছিল সায়েদাবাদে। যাত্রার অনেক আগেই সবাই টিকেট কেনার চেষ্টা করত। তা নাহলে ব্ল্যকে দ্বিগুন দাম দিয়ে টিকেট কিনতে হত। নির্ধারিত দিনে খুব ভোরে বাস স্ট্যন্ডে পৌছানো মাত্রই শুরু হত বিড়ম্বনা । লাগেজ বহন করার জন্য দৌড়ে আসতো কিছু লোক। বাবা যতই বলতেন যে, আমাদের ব্যাগ আমরাই বহন করতে পারি, সেসবে পাত্তা না দিয়ে ব্যাগ টানাটানি শুরু করে দিত এই কুলিরা । তাও আবার একজন না কয়েকজন। কুলিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত , ব্যগ টানার কাজটা পাওয়া নিয়ে। বাবা হাল ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতেন সেই বিশ্রী প্রতিযোগিতা থামার জন্য। সেসময়ে এসি বাস সার্ভিস ছিল না। কেবল সিটিং সার্ভিস ছিল। কিন্ত সেই সিটিং সার্ভিসেও বাস কন্ডাক্টাররা বাড়তি মানুষ নিত। এ নিয়ে বাস রওনা হবার আগেই কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়া বেধে যেত সিটে বসে থাকা মানুষের। ঝগড়ার মাঝেই বাস চালক রওনা হয়ে যেত। সেই ছোটবেলায় মনে আছে যে, ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে যাওয়া সেই বাস যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া লাগত। অনেক সময় বসে থাকা অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের বসতে দিয়ে তাদের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করত। চোখে মুখে কৃতজ্ঞতা উপচে পড়ত মানুষগুলোর ।সীটে বসা ও দাঁড়ানোর অদল বদলের সেই চিত্র ছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন। সিস্টেম যেমনই হোক , মানুষ হিসাবে আমদেরতো জুড়ি নাই।

ঢাকা থেকে বের হতেই ১/২ ঘন্টা লেগে যেত যানজটের কল্যানে। প্রচন্ড গরমে হাসফাশ করতে করতে যখন বাস মহাসড়কে পৌছাতো , তখন স্বস্তি ফিরতো দেহে জানালা দিয়ে হুহু করে করে ঢোকা বাতাশে। সেই সাথে চোখ জুড়িয়ে যেত দুই পাশের তীব্র সুন্দর গ্রামীন প্রাকৃ্তিক দৃষ্যে । বয়সে বড় কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ভাই বোন ও কাজিনরা কানে ওয়াকম্যান লাগিয়ে গান শোনা শুরু করত। একটু গান শুনতে চাইলে চোখ কটমট করে তাকিয়ে আবার কানে গুজে দিত ইয়ারফোন। তবে খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হত না সেই আরামদায়ক জার্নি। দুটো ফেরী পার হতে হত। আর ফেরীর জন্য অপেক্ষা করতে হত কয়েক ঘন্টা। চরম বিরক্তি নিয়ে মা সহ আমরা সবাই বলতাম যে, এর পর থেকে দেশের বাড়িতে ঈদ না করে ঢাকায় ঈদ করব ! বাবা ম্লান চোখে তাকিয়ে থাকতেন। তবে বছর ঘুরতেই জার্নির কষ্ট ভুলে গিয়ে আবার ঈদের সময় দাদাবাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিতাম।

ঈদ যাত্রার এক মর্মান্তিক অংশ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। অত্যাধিক যাত্রী বহন করা বাস, লঞ্চ দুর্ঘটনা আমাদের দেশের নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা।আমার ছোটবেলায় আরেক রকম দুর্ঘটনার কথা মনে আছে , সেটা হত ফেরীতে। দ্রুত গতিতে চলা বাসগুলো ফেরীতে উঠে পানিতে পড়ে যেত। কয়েকবার এ ধরনের দুর্ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর যাত্রীরা বাস ফেরীতে উঠার সিরিয়াল চেক করত। যদি সিরিয়াল ১ নাম্বারে থাকত, তাহলে সবাই বাস থেকে নেমে যেত। হেটে হেটে ফেরীতে উঠে আবার বাসে চড়ত যাত্রীরা। এভাবেই চরম ক্লান্তিকর জার্নি শেষে স্বপ্ন যেত বাড়িতে।

বিগত কয়েক দশকে অবস্য অনেক পরিবর্তন এসেছে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায়। কয়েকটা সেতু হয়েছে , বিলাসবহুল বাস / লঞ্চ সার্ভিস হয়েছে। তবে প্রান্তিক লেভেলের দরিদ্র মানুষের কাছে পৌছাতে পারেনি সেবা। উপচে পড়া মানুষ নিয়ে বাস/ ট্রেনের ছাদ বা লঞ্চ যাত্রার প্রচলিত চিত্র এবার বদলে দিয়েছেন ডক্টর ইউনুস। একটা দেশের উন্নয়ন মানে যারা সেতু বা বিল্ডিংগুলোকে প্রদর্শন করত তাদের মুখে চপেটাঘাত এই রিয়েল উন্নয়নের দৃষ্যগুলো। যে তরুনেরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাজপথে রক্ত দিয়ে, হাত পা চোখা হারিয়ে আমাদের এমন উন্নয়নের দৃষ্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছে , তাদের জন্য রইল প্রানভরা দোয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কবি দাউদ হায়দার আর নেই

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৫






‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৩ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপার্থিব ইচ্ছেরা (তসলিমার “কারো কারো জন্য” থেকে অনুপ্রাণিত)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


কেন যে, কেন যে হঠাৎ
কোন নাম না জানা ভোরে
কারো মুখ খুব মনে পড়ে,
মনে পরে অকারণ স্পর্শের,
কাছে বসার এক তিব্র বাসনার।

কতটা পথ, কতটা জীবন বাকি,
তারপরও,
অচেনা হাসি মনে হয় বড্ড চেনা,
অচেনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

---প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৪৫---(কন্যার প্রথম বই এর প্রচ্ছেদ আঁকা)

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭







আব্বু আমার নতুন রং লাগবে ?


কেন ?

রং শেষ।

আর কিনে দিব না, তুমি শুধু শুধু নষ্ট করো।

আমি শুধু নষ্ট করি ..............। তাহলে এই দেখেন ? অফিস... ...বাকিটুকু পড়ুন

২৬ নিহতের বদলা নিতে ২৬ টি রাফাল-এম যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৪


২৬ টি নতুন রাফাল-এম যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। কাশ্মীরে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ২৬ নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফ্রান্স থেকে ২৬ টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। সোমবার এই ক্রয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে নারীর মর্যাদা (পর্ব :৪)

লিখেছেন আরোগ্য, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩

বিবাহ



বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীকে কখনো পশুর পালের সাথে তুলনা করা হত আবার কখনো পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করা হত। যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×