somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমায় একটু একা থাকতে দাও!

১৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বছর আগে অচেনা এই শহরটাতে খুব একা লাগত। বন্ধু ছিলো হাতেগোণা দু একজন। তখন নিঃসঙ্গতাকে জীবনের অভিশাপ মনে হতো। এখন আমার চারপাশে শ-খানেক বন্ধু। অথচ ইদানিং আমি পুরনো বন্ধু 'নিঃসঙ্গতা'কে খুঁজে ফিরছি! বোহেমিয়ান জীবন আমার খুব পছন্দের। কিন্তু অনেক না পাওয়ার মতো 'বোহেমিয়ান' জীবনটা আমার পাওয়া হলো কই! কলেজে থাকতে শখে গিটার কিনেছিলাম শিখবো বলে, বাবার ভয়ে শেষে খাটের নিচে ওই গিটারের জায়গা হয়েছিল। জীবনের প্রথম ভালো লাগা মানবীর দেয়া চিঠিটার উত্তর দিতে ও সাহসে কুলোয় নি। পরে কোন এক হাদারামের সাথে মানবীর চিঠি চালাচালির খবর শুনে আমার বন্ধুরা আমাকে সার্টিফিকেট দিয়েছিল, 'তুই একটা গাধা'! আমি প্রতিবাদ করিনি।

ঘুরাঘুরি আমার খুব প্রিয়। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ঘুরে বাংলাদেশটাকে, দেশের মানুষগুলোকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। কোথাও ঘুরতে গেলে বাবার জবাবদিহীতা এড়াতে দিনে গিয়ে দিনে বাসায় ফিরতে হতো। জবাবদিহীতা আমার কখনো সহ্য হতো না, এখনো না। শিকল দিয়ে কাউকেই বেঁধে রাখা হয় না। তারপরেও সব মানুষই কোন-না-কোনো সময় অনুভব করে তার হাতে-পায়ে কঠিন শিকল। শিকল ভাঙতে গিয়ে সংসার বিরাগী গভীর রাতে গৃহত্যাগ করে। ভাবে, মুক্তি পাওয়া গেল। দশতলা বাড়ির ছাদ থেকে গৃহী মানুষ লাফিয়ে পড়ে ফুটপাতে। এরা ক্ষণিকের জন্য শিকল ভাঙার তৃপ্তি পায়। আমি গৃহত্যাগ করেছি সেই কবে, দীর্ঘ আট বছর। শিকল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি কই! ব্যস্ততা আমার পিছু ছাড়ছে না।

নওরিনের সাথে কথা বলি না প্রায় দুই মাস হয়ে গেলো।ওর কথা বলতে ইচ্ছে করে কিনা জানি না। আমি মাঝে মাঝে পুরনো অভ্যেসবশত ফোনটা তুলে পরিচিত নাম্বারটাতে ডায়াল করে ফেলি, আবার লাইন কেটে দিই। মনে মনে বলি নো ইমোশনস, 'আই হ্যাভ টু বি ক্রুয়েল অনলি টু বি কাইন্ড'! ওকে সাফ সাফ বলে দিয়েছিলাম সারাক্ষণ তোমার প্যানপ্যানানি ভালো লাগে না, তুমি অন্য কোন সুপুরুষকে খুঁজে নাও, আমাকে একা করে দাও! ব্যস, এইটুকুই সব শেষ। আমার এমন আচরণ খুবই অস্বাভাবিক লাগছে? লাগুক অস্বাভাবিক। মানুষকে সবসময় স্বাভাবিক লাগবে এটা কোন কাজের কথা না। প্রাণী হিসেবে মানুষ চরম অস্বাভাবিক। সে স্বাভাবিকের ভঙ্গি করে পৃথিবীতে বাস করে।

আমেরিকাতে 'Hobo' সম্প্রদায় বলে একটা গোষ্ঠি আছে। এরা ইচ্ছে করে সব ঠিকানা নষ্ট করে ঠিকানাবিহীন মানুষে পরিণত হয়েছে। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিকানাবিহীন থাকার আলাদা মজা আছে। ঠিকানাবিহীন হতে পারব না জানি! অন্তত কিছুদিনের জন্য আমি একা হতে চাই, খুব একা! কিন্তু কিভাবে? এই শহরটাতে আমার অনেক বন্ধু হয়ে গেছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যেখানেই যাই প্রায়ই কোন-না-কোন পরিচিত মুখ সামনে পড়ে যায়। চারপাশে এতো চেনা মুখ দেখতে ইদানিং কেন জানি ভালো লাগছে না! অন্জন দত্তের একটা গান খুব শুনছি। ক্লান্ত আমি, শ্রান্ত আমি, আমায় একটু একা থাকতে দাও! বেশ কিছুদিন ধরে চেনা শহরের বাইরে কোথাও চলে যাবার চিন্তা করছি। সাত পাঁচ ভেবে যাওয়া হচ্ছে না। একাকীত্বের স্বাদ নিতে, বাসা বদলে বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যেতে খুব চেয়েছি, পারলাম কই! সাময়িক হলেও ইমোশনের কাছে হার মানতে হলো।

ইদানিং আমার কি হয়েছে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। কিচ্ছু ভাল লাগে না। বন্ধুরা বলে বিয়ে করে ফেল, তাইলে এই অসুখ সেরে যাবে। অসহ্য! এইজন্যই চাচ্ছি দূরে কোথাও চলে যেতে। দেশে গিয়ে কোনরকম পালিয়ে এসেছি। মা আমার বিয়ে বিয়ে করে মাথা ঝালাপালা করে ফেলছে। মাকে বলি এসব বিয়ে বন্ধনে জড়াতে পারব না। মন চায় না হৃদয় জড়াতে কারো চিরঋণে! মা অবশ্য রবীন্দ্রনাথ বুঝে না। রবীন্দ্রনাথের একটা লাইন মনে আছে? 'মন চায় হৃদয় জড়াতে কারো চিরঋণে' মাঝেখানে শুধু আমি একটা 'না' বসিয়ে দিয়েছি।

অনেকক্ষণ ধরে আকাশটাকে দেখছি। এই শহরে অনেক না থাকার মাঝে এই একটা জিনিস আছে। আকাশ দেখতে পারার পূর্ণ স্বাধীনতা! আমি নিশ্চিত বৃষ্টি আজ ঘন জাল ঝড়াবে এই শহরে। পুরো শহর জুড়ে চাদর টেনেছে মেঘেরা! তছনছ করে দেবে লুটতরাজের হল্লা তুলে। নিশ্চুপ এই রাতে, ছায়া ছায়া এই ঘরে, একা আমি জানালার এপাশে বসে ঝুম বৃষ্টির অপেক্ষা করছি। এইতো এলো বুঝি! সাঁই সাঁই বাতাসে ভেজা গন্ধ পাচ্ছি, উলঙ্গ গাছ নাইতে নামছে, সুখের বসনে। জানালার পর্দাগুলো পতপত করে উড়ছে। অবশেষে প্রতিক্ষিত বৃষ্টি এলো, আকাশ ভেঙ্গে। সমস্ত শহর যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঝম ঝম ঝরছে। এ যেন আমি ঝরছি, নির্মমরুপে ঝরছে আমার নিঃসঙ্গ হওয়ার স্বাধীনতা!


'আই হ্যাভ টু বি ক্রুয়েল অনলি টু বি কাইন্ড'> লাইনটি শেক্সপিয়রের।

ডিসক্লেইমার: এই শহরে ঝম ঝম বৃষ্টি হতে কখনো দেখিনি, শহর ভেসে যাবে তো দুরের কথা! এটা আমার কল্পনা মাত্র। একটা বইয়ে পড়েছি যেকোন ইচ্ছে নাকি কল্পনা শক্তি দিয়ে জয় করা স্বম্ভব। মাঝে মাঝে আমি চেষ্টা করি। কল্পনা দিয়ে নিজের মতো করে সবকিছু সাজিয়ে নিই, আবার ভাল না লাগলে ভেঙ্গেও দিই। আজ এই রাতে ঝম ঝম বৃষ্টি দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নীলপরী আর বাঁশিওয়ালা

লিখেছেন নিথর শ্রাবণ শিহাব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

আষাঢ়ের গল্পের আসর

সন্ধার পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে দিনের মত আলো করে। কান ফাটিয়ে দেয়া আওয়াজ। কারেন্ট নেই প্রায় তিন ঘণ্টার ওপর। চার্জারের আলো থাকতে থাকতে রাতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে ক্ষমার অফারের সাথে শর্তগুলো প্রচার হয়না কেন?

লিখেছেন আফনান আব্দুল্লাহ্, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১

ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×