একলা মানুষ মাতৃগর্ভে, একলা মানুষ চিতায়, একলা পুরুষ কর্তব্যে, একলা মানুষ পিতাই, মধ্যিখানের বাকি সময় একলা না থাকার অভিনয়'। নচিকেতার সেই গানের কথা। একলা না থাকার অভিনয় করতে গিয়ে বেশ কিছু বছর আগে সময়ের মারপ্যাচে ফেঁসে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে পুরনো কাহিনী মনে করে মন খারাপ করছি কেন? না ঘটনা মোটেও মন খারাপের না। ওই সময়ের পরিচিত নাম্বার থেকে আজ একটা 'ম্যাসেজ' পেলাম; 'কেমন আছিস, তোর কি একবারও ফোন দিতে ইচ্ছে করে না?' একবার ভাবলাম রিপ্লাই দিই, পরে কেন জানি ইচ্ছে হলো না। একটা সময় আমার জন্য ওর সময় ছিলো না, এখন আমার সময় নেই, ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু পাঁচ বছর পূর্বের কাহিনী ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যের জন্য নিজেকে এতো তুচ্ছ ভেবেছি এখন নিজের প্রতি মায়া হয়!
সুনীলের 'নিজের আড়ালে' কবিতাটি তখন পড়লে বোধহয় ভালো হতো;
'সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে, মানুষ দেখে না, সে খোঁজে ভ্রমর কিংবা দিগন্তের মেঘের সংসার, আবার বিরক্ত হয়, কতকাল দেখে না আকাশ, কতকাল নদী, আর রমনীর কাছে গিয়ে বারবার হয়েছে কাঙাল'
'রমনীর কাছে গিয়ে বারবার হয়েছে কাঙাল' শুধুমাত্র এই লাইনটির কারণে আমার এক বন্ধুর যে কিনা কবিতা পড়ে না, কবিতাটি খুব পছন্দ হয়! বেচারা! দুবছর আগে যে কিনা তার প্রেমিকা আরেকজনের সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করছে শুনে বিশ্বাসই করতো না, বলে ইম্পসিবল, তোরা মিথ্যা বলতেছিস। মমিনদের বোধহয়এমনই হয়!
মানুষ বোধহয় আসলেই একা! নাইলে এতোদিন পরে কেন সেই মানবী ফিরে আসতে চাইবে? বেশ কিছুদিন ধরে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে, আমিই পথটা বন্ধ রেখেছি, 'নো ইউটার্ন'। আমার এমন পরিবর্তন দেখে মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই। পেছনের সময়গুলোতে ফিরে গেলে শুধু ওকেই দেখতে পাই! সেসব ঘুমহীন রাতে জগজিৎ সিংয়ের সব গজলই মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। ড্রয়ারে এতো ফোনকার্ড ছিল, কেউ দেখলে জিগেস করতো আমি ফোনকার্ডের ব্যবসা করি কিনা! ওকে এতো বেশি ফোন করতাম দেখে বিরক্ত হতো, মাঝে মাঝে পাত্তাই দিতো না। এখন তবে কেন এই ফিরে আসা? মানুষ কি তাহলে সত্যিই একা?
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। সে তার আপন গতিতে চলে যাচ্ছে। আমার সময় ও ভালো মন্দে চলে গেছে, চলে যাচ্ছে। শুধু সময়ের সাথে আমরা পরিবর্তন হচ্ছি এই যা!
ঠিক ওই সময়টাতে এক পারস্য রমনীকে চিনতাম, যাকে শুধু সুন্দরী বললে কম বলা হবে। অসম্ভব ধরণের ভালো মেয়ে ছিলো সে। এক বাঙালির মন পাবার আশায় কতো চেষ্টাই না করলো, বাংলা কোর্সে ভর্তি হয়ে টুকটাক বাংলা পর্যন্ত শিখেছিল। ইন্টারনেট ঘেঁটে বাংলা গান শুনা থেকে শুরু করে বাঙালি কালচার সব তার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। এই মেয়ে একবার আমাকে বলে, 'জাস্ট মেরি মি, আই এ্যম রেডি টু গো হোয়্যারএভার ইউ টেক মি'। আমি পাত্তা দিতাম না।
এখন মাঝে মাঝে ওকে মিস করি। ভাবি একটা মেইল দিই, সে তো রিপ্লাই দিবেই! আবার চিন্তা করি সে ও যদি আমার মতো করে ভাবে 'নো ইউটার্ন'!
পেন্সিলের 'বোহমিয়ান জীবনের একটা রাত' লেখাটি পড়ে লিখতে ইচ্ছে হলো।
নচিকেতার একলা চলতে হয় এখানে শুনতে পারবেন।