বুকের ভেতর পুরানো সেই কষ্টটা ভীষনভাবে তার অস্থিত্ব জানান দিচ্ছে। কোনভাবেই স্থির হতে পারছি না। না বসতে পারছি, না শোতে পারছি। ইতিমধ্যেই ঘামতে শুরু করেছি। আর কিছুক্ষন এইভাবে থাকলে আম্মু টের পেয়ে যাবে। আর একবার টের পেলেই জায়নামাজ বিছিয়ে দুহাত তুলে কাদতে শুরু করবে। আর কিছুক্ষন পর পর এসে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিবে। থাক না বেচারি একটু তার মত। কোন একটা টিভি চ্যনেলের কোন এক বাংলা সিনেমা দেখতে দেখতে একটু আগে হেসে উঠেছিল।
এই অবস্থায় তাকে কোনভাবে জানাতে চাইছি না, আমার অবস্থার কথা। আলমিরা থেকে কোনভাবে সাদা শার্টটা বের করে, গায়ে চড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।
এই শার্টটা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পাগলিটা যেদিন মরল সেদিনও এই শার্টটা পড়েছিলাম। বড্ড এলোমেলো আর চটপটে ছিল ফাজিলটা। ও হ্যা আইসক্রিমের খুব পাগল ছিল। এই শার্টটা তারই দেয়া। ইচ্ছা করেই সাদা রঙের শার্ট দিয়েছিল। খুব ভালো করেই জানে সাদা রঙটা আমার একদমই পছন্দ না। অসহ্য লাগে। যেমন অসহ্য লাগে তার চটপটানি স্বভাবটা।
এত তাড়াতাড়ি মরবে বলেই কি চঞ্চল আর চটপটে ছিল নাকি চটপটে ছিল বলেই এত তাড়াতাড়ি চলে গেল? জানি না, জানতে ইচ্ছা করে না।
- "ঐ চান্দু কার কথা ভাবিস?"
এই মেয়ে আবার হঠাৎ করে কোত্থেকে আসল।
- "তোর কথা।"
মেজাজ বিগড়ে গেল আমার।
- "সারাক্ষন আমার কথা ভাবলে তো আর হবে না। একটু দেখে শুনে চল।"
হঠাৎ মুরব্বি মুরব্বি ভাব নিয়ে বলল চাঁদনী। তারপরেই খিলখিল করে হেসে উঠল।
- "এইভাবে হাসিস না। থাপ্পড় খাবি। তুই নিজে কখনো সাবধানে চলেছিস?"
তার এই খিলখিল হাসি শুনলেই সত্যি সত্যিই থাপড়াতে মন চায়।
- "আরে আমার জন্য তো তুইই সারাক্ষন ভাবিস। আবার আমি ভাবব কেন।"
হাতের ভ্যানিলা আইচক্রিম খেতে খেতে বলল সে।
- "আমি আর ভাবতে পারব না। নিজের জ্বালায় আমি মরে যাচ্ছি। আবার তোর কথা ভাবব। অত সময় নেই আমার।"
কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ করেই যেন চোখ দুটো ভিজে উঠল। কি হত সেদিন যদি আমি তার হাতটা ধরে ফেলতাম। আমি কেন ধরব, আমি তো আর সিনেমার নায়ক না। এক রাস্তা জুড়ে মানুষের সামনে আমি কিভাবে ওর হাত ধরব। আমার কি ভদ্রতার সামান্য জ্ঞানটুকুও নেই নাকি।
-" ঐ চান্দু কি হয়ছে তোর। কোথায় হারায় যাস কিছুক্ষন পর পর। এত কি ভাবিস সারাক্ষন। তোর পাশের বাসার তমার কথা মনে পড়ছে? নাকি সেই ক্লাসমেট সান্তার কথা?"
- "তোর নিজের চড়কায় তেল দেয়। আমি ওদের কথা ভাবতে যাব কেন। আর ভাবলেই বা তোর কি?"
-"আরে বাবা, রেগে যাচ্ছিস কেন। হাজার হলেও আমি তোর একমাত্র বউ। আমার উপর রাগ করলে তোকে কে ভালবাসবে বল, কে আদর করবে। হুহ।"
-"ফাজলামো বন্ধ কর। অসহ্য লাগছে তোকে। আর সারাক্ষন এইভাবে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত লাফিয়ে হাটিস কেন। এত শক্তি পাস কই? এত চপলতা ভালো না।"
- " জ্ঞান দিস না তো। নদী দেখ। কি শান্ত। এখনই ঝাপ দিতে ইচ্ছা করছে।"
- হাটতে হাটতে কখন যে সেতুর উপর উঠে এসেছি, খেয়ালই করি নাই।
-" ঐ তুই একটু দাড়া, আমি একটা ঝাপ দিয়েই আসছি।"
এরপর সেদিনের মত তার হাত ধরার জন্য বাড়িয়ে দেওয়া আমার হাত ফসকে পানিতে পড়ে গেল।
ফাজিল একটা, মরার পর থেকে চাঞ্চল্য আরো বেড়েছে। ভেজা শরীর নিয়ে কাপতে কাপতে চাঁদনী আসছে। একেবারে বাচ্চাদের মত করে এক পা দু পা করে। ওকে দেখতে কি যে ভালো লাগছে। হঠাৎ করেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আর বুঝতে পারছি বুকের ব্যাথাটা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। হাত বাড়িয়ে চাঁদনীর ভেজা মুখটা ধরলাম, আজ দেখুক পুরো বিশ্ব। আজ চাদনীকে ধরতে আমার হাত একটুও কাপবে না। আজ যে আমার মন খারাপের দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৪