somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোদার পরে মা - আমার হলে গিয়ে দেখা প্রথম বাংলা সিনেমা।

২৬ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইবার ঈদের শুরু থেকেই মনস্থির করেছিলাম হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখব। ইচ্ছা ছিল ঈদের দিনই যাওয়ার, কিন্তু আজ যাব কাল যাব করতে করতে গেলাম আজ। আজও হয়ত যাওয়া হত না, কিন্তু বন্ধুদের উপর রাগ উঠে যাওয়ায় একা একাই চলে গেলাম। এত অনুরোধ সত্তেও একটা হারামীও গেল না আমার সাথে। বুঝতে পারলাম আমার এই তিন বন্ধুর কাছে বাংলা সিনেমা এবং আমার কোন বেইল নাই। যায় হোক, রেগে-মেগে ঘর থেকে বের হয়ে বুঝলাম ভুল হয়ে গেছে। বৃষ্টি পড়ছে ছাতা নেয় নাই। বৃষ্টিতে ভিজেই গাড়িতে উঠলাম দাড়িয়ে থেকেই পুরো পথ পাড়ি দিয়ে হলে পৌছালাম। হলের নাম "আলমাস" হলে দু সপ্তাহ ধরে শুধু একটা ছবিই চলছে, ছবির নাম "খোদার পরে মা"। বাধ্য হয়েই সেই সিনেমার টিকেট কেটে হলে ঢুকলাম, টিকেটের দিকে থাকিয়ে দেখি দাম ৫৫ টাকা লিখা, অথচ আমার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৬৫ টাকা। সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হল আমি টিকেট কেনার সময় ১ম শ্রেণী দেখেই নিয়েছিলাম কিন্তু পোড়া কপাল সেটা যে ঐ হলের শেষ বিভাগের ১ম শ্রেণীর টিকেট তা বুঝলাম হলে ঢুকার পরে। হলের ভিতরে মানুষের সংখ্যা এত বেশি(!) ছিল যে চেয়ারগুলো সরিয়ে শাকিব খানের সৈজন্য একটা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলা যেত।

সূচনা শেষ সিনেমা শুরু। জাতীয় পতাকা দেখিয়ে আর জাতীয় সংগীত বাজানো হচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দাড়ানো উচিত, কিন্তু পাছে লোকে কিছু বলবে ভেবে দাড়ালাম না। তবে নিজেকে পঙ্গু ভেবে চোখ বন্ধ করেই যথাযথ সন্মান দেখানোর চেষ্টা করলাম।/:)

প্রথম সিনেই বাংলার স্যার ইসলাম শিক্ষার ক্লাস নিলেন, বিষয় মা। তিনি যে বাংলার শিক্ষক তা কোথাও লিখা ছিল না, তবে তার দাড়ি না দেখে এবং পিছনে ব্লাকবোর্ডে বড় করে বাংলায় মা লিখা দেখে এবং শেষে "শুধু আমাদের ধর্মেই না অন্যান্য ধর্মেও..." শুনে নিশ্চিত হলাম। লেকচার শুনে নায়ক এমনভাবে অনুপ্রাণিত হল যে পুরো স্কুল ছুটি হয়ে গেলেও তার হুশ হল না। এরপরের দৃশ্যে এক সন্তানকে বাচাতে গিয়ে মারা যাওয়া মাকে তার কান্নারত সন্তানসহ দেখানো হল। এইবার নায়ক একেবারে ব্রেইন ওয়াশড অনুপ্রাণিত, আর জীবনে মায়ের অবাধ্য হওয়া তো দূরে থাক মায়ের জন্য নিজের বাবাকেও খুন করতে পারবে টাইপ। হলও তাই, তার এক চান্সেই(!) পিতা বৌকে গলা টিপে হত্যা করার সময় নিজ সন্তানের চুরিকাঘাতে খুন হলেন। ঘটনার সময় মাথায় আঘাতজনিত কারনে নায়কের মা কোমায় চলে যায়। আর বালক নায়ককে সেই সন্ধ্যায় আদলতে হাজির করা হয়। অনুমানের ভিত্তিতে বললাম, কারণ এরপরের ডায়লগগুলোতে যেই দিনক্ষনের হিসাব দেখানো হয়েছে তাতে আমার অনুমান সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ঘটনার একমাত্র সাক্ষী কোমাতে থাকায় বালক শাকিবের বিচারকার্য অনির্দিষ্টকালের জন্য স্তগিত করা হয় এবং তাকে কিশোর সংশোধনী কারাগারে পাঠানো হয়। সেইখানে তার একটা অতি মানবীয় গুণাবলির জন্ম হয়, নায়ক রেগে গেলে তার চোখের মণি লাল টকটকে হয়ে যায় আর আশেপাশে সমান সাইজে কাটা পেপার উড়তে থাকে। কিভাবে এই ক্ষমতা পেয়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত না দেখিয়ে সরাসরি একশনে যাওয়া হয়। তারপর সকল কিশোরকে একসাথে আদলতে নেওয়ার সময় পুলিশ ভ্যানে হামলা চালানো হয়। দেখা যায় ভ্যানের নিরাপত্তায় নিয়জিত দুজন পুলিশ একজন অফিসার আর ড্রাইভার নিহত হয়েছে বোমার আঘাতে। ভ্যান থেকে সব কিশোরকে নামতে দেখা গেলেও পরবর্তিতে জানা যায় শুধু ভিলেন "সাদা(মিশা সওদাগর)" আর নায়ক "মুন্না(নাম্বার ওয়ান শাকিব খান)" পালিয়েছে। বাকিরা মনে হয়, ভ্যান থেকে নেমে নিহত কিংবা আহত পুলিশদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছিল। এরপরেই নায়কের মা মমতা বেগম(ববিতা) কোমা থেকে লাফ মেরে জেগে উঠে। গায়ে লাগানো সব তার খুলে ফেলে জিজ্ঞাসা করে তার মুন্না কোথায়? এই সময় আমার মনে প্রশ্ন উদয় হল, উনার জ্ঞান যদি এখন ফিরে তাহলে তার ছেলেকে আদলতে নেওয়া হচ্ছিল কেন? এরপর শাকিব খানের অভ্যুথ্যান, তারপর কি দেখছি না দেখছি তার কোন ঠিক-ঠিকানা নাই, যা মনে আছে পয়েন্ট আকারে লিখে রাখলাম।

১. নায়িকার(সাহারা) মাথার তার ছিড়া নিজের বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী নারীকে(মমতা) নিজের আপন মায়ের চেয়েও বেশি ভালবাসে। প্রেমে পড়ে ভয়ংকর এক সন্ত্রাসীর(শাকিব খান)। শুধু তাই নয় অনেক জল ঘোলা করে, সেই প্রেম আদায়ও করে।

২. নায়িকার বাবার(কাজী হায়াৎ) মাথায়ও ছিট আছে, যে মহিলার জন্য থাকে ৫-৬ বছরের মেয়েকে রেখে মরে যেতে হচ্ছে তার হাতেই তার জীবনের অর্জিত সব সম্পত্তির দায়িত্ব দিয়ে দেন।

৩. প্রায় সবগুলো গানেই পরিচিত কোন না কোন হিন্দি গানের সুর শুনতে পেলাম শুধু শেষের দিকে কাজের বুয়া আর কাজের ছেলের গানটি ছাড়া।

৩.১ গান নং ১ "কি দোষ একটু লাইন মারলে" অসাধারণ ট্র্যাক। সাহারা এই শরীর নিয়ে যেভাবে নেচেছে সত্যিই প্রশংসনীয়।

৩.২ গান নং ২ "প্রথমে একটু একটু, তারপরে বেশি বেশি।" অশ্লীল :P


৩.৩ গান নং ৩ " ও আমার পাগলি তুই যে আমার জানের জান" কাজের বুয়া(নাসরিন) আর কাজের ছেলের (কাবিলা,একমাত্র কমেডিয়ান, একটু হাসাইতে পারে নাই। আমার কথা বাদ, হলের কেউই তার ডায়লগে হাসে নাই। :D) অসহ্য লেগেছে।

৪. নায়কের মাজার ভক্তি অনন্য, শুধু সেই জুতা খুলে মাজারে ঢুকে। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা সেই মাজারে জিকিররত নির্দিষ্টসংখ্যক সাধারণ জনগন থাকে। নায়কের কর্ণবিধারী(!) চিৎকার, কান্না শুনেও তারা একটুও চমকায় না।

৪.১ গান নং চার "মা তুমি আমার আগে যেও না গো মরে", কিন্তু মাজারে দাড়িয়েই গেয়েছে শাকিব খান। :P

৫. পুরো সিনেমায় শাকিবকে শুধু একবার হারতে দেখলাম (সাহারার ২য় চ্যালেঞ্জ সাদা চিঠি ২৪ঘন্টা না পড়ে থাকা)। তার প্রথম চ্যালেঞ্জটাও অভিনব, তার দিকে শাকিব খান এক ঘন্টা তাকিয়ে থাকলেই সে সাহারার প্রেমে হাবুডুবু খাবে। (ইশশ, কোন মেয়ে যদি আমাকে তার দিকে ১০ মিনিট থাকিয়ে থাকতে দিত...................................তাহলে তার একটা স্কেচ একে দিতাম :P ) বলা বাহুল্য শাকিব সেই ১ ঘন্টা ফু মেরে উড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলা সিনেমার কাহিনী এত ভালো হয়েছে আগে জানা ছিল না। বিশেষ করে নাচগুলো অসাধারণ। তবে কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই নোংরা(পুরোপুরি অশ্লীলতা না, নোংরা বলাই ভালো) হয়েছে যে, হাতে রিমোট থাকলে চ্যানেল পাল্টে দিতাম। দূর্ভাগ্য রিমোট ছিল না, তাই চোখ বন্ধ করেই রেহাই পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে হয়েছে।
সবচেয়ে মজার ছিল নায়ক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে এক গাড়িতে ব্যাংকে পৌছেছে, মাঝপথে মারামারি করেছে আরেক গাড়ি নিয়ে সবশেষে ফিরে এসেছে অন্য গাড়ি নিয়ে(খুব সম্ভবত প্রথম গাড়িটি নিয়েই)।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে, নায়ক নায়িকার প্রথম সাক্ষাতের দৃশ্য, একদম অভিনব। আর শাকিব খানের শেষ মারামারির পরের ডায়লগ "তুই জানিস না, আমার কাছে খোদার পরে মা? তুই জানিস না, আমার কাছে খোদার পরে মা?" সত্যিই অবিশ্বাস্য শক্তি ছিল ঐ ডায়লগে। স্বাভাবিকভাবেই, নিজের বাবাকে খুন করাসহ বিভিন্ন মারামারির দৃশ্যে আরো প্রায় ২০-৩০ জনকে হত্যা করার পরেও তাকে নিশর্ত মুক্তি দেয়া হয়েছে।

সবচেয়ে ভাল কথা, এই সুপারহিরো মুভিটা দেখার পর মনটা এমনিতেই ভাল হয়ে গেছে। পুরো ৩ঘন্টার সিনেমায় চিন্তা করার মত কোন দৃশ্যই ছিল না। কখনো কখনো চিন্তা করার মত দৃশ্য এলেও চরিত্রগুলোই বলে দিয়েছে কি হয়েছিল, সাথে ফ্লাশব্যাক। সব মিলিয়ে একেবারে অসাধারণ বিনোদন। মন এতটাই ভাল হয়ে গেছে যে হল থেকে নিজ বাসা মাত্র এক ঘন্টার পথ হেটেই পাড়ি দিয়ে দিয়েছি আর হারামীগুলোকেও ক্ষমা করে দিয়েছি। :((

পুনশ্চঃ এইটা কিন্তু মুভি রিভিউ না।

ছবিটির কিছু তথ্যঃ(কপি-পেস্ট)


হার্টবিট প্রডাকশন পরিবেশিত
শাহীন সুমন পরিচালিত
শাকিব খান ,সাহারা এবং ববিতা অভিনীত এবারের ঈদের ছবি
"খোদার পরে মা "
কাহিনী : আব্দুল্লাহ জহির বাবু
সঙ্গীত : আলি আকরাম শুভ
ছবিটি সর্বোচ্চ ৫২ টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ।:-*

শেষ কথা খুত খুজতে না গিয়ে যদি বিনোদনের জন্য যাওয়া হয় তাহলে বাংলা সিনেমা কিন্তু অতটা খারাপ না।:D
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×