somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যালার্ম

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যালার্ম বাজছে। খুব সুন্দর একটা সুরে। এমন সুরে কারো ঘুম ভাঙ্গার কথা নয়। বরং ঘুম আরো আস্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। আসাদের খারাপ লাগছে। এই সুন্দর সুরটা তার সহ্য হচ্ছে না। সে মোটেও বদমেজাজী না, কখনো কোন কিছুই ভাংচুর করে না। তবু আজকে অ্যালার্ম ঘড়িটা নিয়ে ছুড়ে মারল। ঝনঝন করে তার সবচেয়ে প্রিয় ঘড়িটা ভেঙ্গে গেল। আসাদের খারাপ লাগছে, ভয়ানক খারাপ। কোন কিছুই সহ্য হচ্ছে না। তার মাথার মধ্যে যেন কোন এক বিষাক্ত পোকা ঢুকে গেছে, সব কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে সেটা। তার বুক জ্বলে যাচ্ছে। সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। আশেপাশের সবকিছুই ঝাপসা লাগছে। যেন সে ঘন কুয়াশার মাঝে হারিয়ে গেছে। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাল সে, কয়টা বাজছে? কোনভাবেই বুঝতে পারছে না। রাত দুইটাই বাজার কথা। প্রতিরাতে এই সময়ই ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে। ছাত্র হিসেবে বরাবরই অসাধারণ সে।

আসাদ কোনভাবে বাথরুমে ঢুকল মুখ-হাত ধোয়ার জন্য। বেরিয়ে এল ভেজা শরীর নিয়ে, সারা শরীরটাই যেন জ্বলে যাচ্ছিল তার। তাই যতক্ষন পেরেছে পানি ঢেলেছে। তার মুক্তির দরকার এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির দরকার। হঠাৎ ফ্যানের দিকে নজর গেল তার, অমনি পুরো শরীর স্থির হয়ে গেল। সে কিছু একটা পেয়েছে। হুম, তার মুক্তির একমাত্র পথ। আর কিছুই করার নেই। তার পড়ার টেবিলে বসল সে। ডায়েরী আর কলমটা হাতে নিল। চিঠি লিখবে। কাকে লিখবে, সে জানে না। তবে তার অনেক কিছুই বলার আছে এই পৃথিবীকে।

হে আমার প্রিয় পৃথিবী,

আজ তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার বুকে প্রতিনিয়ত এত অন্যায়, এত অবিচার হচ্ছে, তোমার বুক ছিড়ে খুড়ে খাচ্ছে সবাই তুমি কিভাবে সহ্য করো? আমি তো পারছি না। ও পৃথিবী আমাকে বল তুমি কিভাবে সহ্য করো? তুমি আসলেই অনন্য। জন্মের পর থেকেই তোমার ভালবাসা পেয়ে বড় হয়েছি। তুমি আমাকে পৃথিবীর সেরা বাবা-মা দিয়েছ। তোমার বুকে ঘটে চলা এত অন্যায় অবিচার, কান্না, আহাজারি, হাহাকার আমি কখনো শুনতে পাইনি, আমি কখনো দেখতে পাইনি। এক ভালবাসার পুরু দেয়াল দিয়ে তারা আমাকে সবকিছু থেকে আড়াল করে রেখেছে।

সব বাবা-মা’ই তার সন্তানের কাছ থেকে কিছু না কিছু চায়। কেউ চায় তার সন্তান পড়ালেখা শিখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোক, কেউ চাই তার সন্তান তার মুখের আহার যোগাড় করুক। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার বাবা-মা আমার কাছে কিছুই চায় নি। কখনো না। যখন থেকেই বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই দেখে এসেছি আমি যা করতে চাচ্ছি তাই আমি করছি। আমি যা পেতে চাচ্ছি তাই আমি পাচ্ছি। অন্যে বাবা-মারা আমার বাবা-মাকে কত বলেছে, এমন কর না ছেলে বিগড়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবী কেন আমি বিগড়ে যাব? কেন আমি নষ্ট হব? এত ভালবাসা যার আছে তার কাছে আর কি লাগে।

নীহা, মেয়েটার নাম নীহা। অনেক বেশি ভালবাসি । ঠিক যেমন আমার বাবা-মা আমাকে ভালবাসেন, আমিও তাঁকে তেমনি ভালবাসা দিতে চেয়েছি। ও পৃথিবী, ভালবাসা কাকে বলে আমি জানতাম না। তবে আমার বাবা-মা যেমন আমাকে যেমন আগলে রাখে সবকিছু থেকে। আমিও তেমনি তাঁকে আগলে রেখেছি দুই বছর ধরে। হ্যা, দুই বছর আগেই ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। আমাদের ভার্সিটির একটা ফাংশনে গান গাইবার জন্য মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তখনো দেখিনি ওকে। কথা ছিল আমার সহপাঠীর ঐ বোন গান গাইবে, ভাল গান জানে সে। নাম ঘোষনার পর দেখি আকাশী নীল শাড়ি পরা এক ডানা কাটা পরী আড়ষ্ট ভাবে হেঁটে আসছে আমার দিকে। যেন ডানা ছাড়া হাটতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে। ওর চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অসম্ভব মায়া যেন সে চোখে। বিশ্বাস কর হে পৃথিবী, আমি কখনো পরী দেখিনি। তবে আমি জানি যদি দেখতাম সে দেখতে নীহার মতই হত।



হে পৃথিবী মানুষ এত বোকা হয় কেন? এতদিন ধরে যাকে আমি ভালবাসা জেনে এসেছি। ঐটা আসলে বন্ধুত্ব। আজ সে কি বলেছে জানো?

” আসাদ, আমি তোমাকে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভেবেছিলাম। তোমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার ভেবেছিলাম। আমার মনে হয়ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষটা আমার বন্ধু। আমার বন্ধুটা সবচেয়ে আলাদা, সবার চেয়ে আলাদা। ছিঃ ছিঃ আহাদ ছিঃ”

কথাগুলো বলার সময় ও কাদছিলো আর চিৎকার করছিলো। যেন ওকে কেউ কষ্ট দিয়েছে। ভয়ানক কোন কষ্ট। ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরি, ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওকে সান্তনা দেয়। কিন্তু পৃথিবী, আমিই যে সে পাপী। আমি কিভাবে ওকে বুঝাবো। আমি কিভাবে ওকে সান্তনা দিব।

হে পৃথিবী, কথাগুলো শোনার পর থেকেই মনে হচ্ছে তুমি ভয়ানকভাবে কাপছ। আমার পাপ তোমার সহ্য হচ্ছে না। আমি আসলেই অনেক বেশি বোকা। সবকিছু বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলি। নীহা যে আমার বন্ধু সেটা বুঝতে দেরি করেছি। আমার যে তোমাকে ছেড়ে যাওয়া উচিত তা বুঝতেও দেরি করে ফেলেছি। আমি তোমাকে আর কষ্ট দিব না। আমি আর কাউকেই কষ্ট দিব না। আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। দেরিতে বুঝার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও পৃথিবী। আমার উচিত ছিলো সকালেই কোন এক চলন্ত গাড়ির সামনে ঝাপিয়ে পড়া। আমি বুঝি নি, আমাকে ক্ষমা করে দিও।

বিদায়

এতটুক লিখে ডায়েরীটা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। তাই আবার লিখতে শুরু করল,

পুনশ্চঃ মাগো তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও । আমার আসলেই আর করার কিছু নেই। ভয়ানক একটা পাপ করে ফেলেছি। ভীষন কষ্ট হচ্ছে। এর থেকে বাচার কোন উপায় নাই। আমার আর করার কিছুই নাই।



অ্যালার্ম বাজছে। কোন দরকারই ছিল না। অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভাঙ্গে মিসেস জামান এর। তবু তিনি চান না দেরি হোক। দেরি হলেই যে ছেলেটা দুধ না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার তার এই ছেলে। সবার চেয়ে আলাদা। আর বড্ড বেশি অবুঝ। বড় বেশি ভালবাসেন তিনি তার এই ছেলেকে। ভাবতে ভাবতে দেখলেন দেরি হয়ে গেছে। দুধ বেশি গরম হয়ে গেছে। এখন খাবে কিভাবে। তাড়াতাড়ি নামিয়ে ঠান্ডা করতে লাগলেন। কুসুম কুসুম গরম করেই ছেলের ঘরের সামনে দাড়ালেন। দুইবার টোকা দিলেন। সবসময়ই ভুলে যান। আজ ভুললেন না। টোকা না দিয়ে ঘরে ঢুকলেই ছেলেটা ভীষন অস্বস্তি বোধ করে। দরজা খুললেন, টেবিলে ছেলেকে দেখতে পেলেন না। বিছানায়ও নাই। ছেলে বাতাসে ভাসছে। গলার সাথে দড়ি বাঁধা। দড়িটা ফ্যানের সাথে। দেখেই একটু যেন হেঁসে ফেললেন তিনি। বোকা ছেলে, তারপরই জ্ঞান হারালেন তিনি। হাত থেকে দুধের গ্লাস পরে চুড়মার হয়ে গেল।

আসাদ আসলেই বোকা ছেলে। বোকা আসাদ বুঝল না। এই পৃথিবীতে তার জন্য কত ভালবাসা জমা ছিল। তার সাথে খারাপ ব্যবহার করাটা নীহার একটা ফাজলামো ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে সেও যে তাঁকে মনে প্রাণে ভালবাসত। আর এই পৃথিবীর কেউ জানত পারল না, নিজের বানানো ফাসিতে ঝুলার পর আহাদ বাচতে চেয়েছিল। সে বুঝতে পেরেছিল তার করার আরো অনেক কিছুই ছিল।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×