somewhere in... blog

"এদেশে সবই পাবেন, শুধু সার্ভিসটাই পাবেন না "।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই আমার ডাক্তারভীতি আছে । ১৯৮৬-৮৭ সালের কথা । তখন আমার বয়সই বা কতো... !!! গ্রাম থেকে মামার বাসা ঢাকাতে বেড়াতে এসেছিলাম মায়ের সাথে । আম্মু মামাকে বলেছিলেন,ছেলেটা পেটের ব্যাথায় মাঝে মাঝেই চিৎকার করে । আপনি যদি একজন বড় ডাক্তার দেখিয়ে দেন, ও হয়তো ভালো হয়ে যাবে । মামা দেরী না করেই উনার পরিচিত এক ডাক্তার কে ফোন করে বললেন আজকে বিকালে আসবো । মামাই উনার গাড়িতে করে সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন । আমার পেট নিয়ে কিছুক্ষন টেপাটিপি করে ২/৩ টা ঔষুধ লিখে দিলেন । ঐ রাতে আম্মু আমাকে ঔষুধ খাওয়ালেন না । পরের দিন সকালে থেকে শুরু করলেন । ছোট একটা ঔষুধের অর্ধেক খাওয়াতে বলছে বিকালের দিকে । আম্মু আর মামী ঐ ছোট ঔষুধ কে অর্ধেক বানানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে লাগলেন । চামচ দিয়ে কাটতে গিয়ে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছিলো । শেষমেষ আম্মু আমাকে ঐ ছোট ঔষুধের চার ভাগের এক ভাগ খাওয়ালেন ।

বাসার সবাই মোটামুটি বিকেলের ঘুম দিচ্ছে । আমি আর আমার হাইস্কুল পড়ুয়া মামাতো বোন মিলে কার্টুন দেখি । রাত ৮ টার খবর শুরু হবে । হঠাৎ আমার বমি বমি ভাব । না, বমি হচ্ছে না । আমি চিৎকার করছি । আমার মুখের ভেতর থেকে জিভহা বের হয়ে আসছে । আমি কিছুতেই আমার জিভহা কে আটকে রাখতে পারছি না । বাসার সবাই কান্না শুরু করে দিয়েছে । আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছি । সাথে সাথেই ডাক্তার কে ফোন করলেন । যতো দ্রুত সম্ভব ডাক্তার আমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন । আমাকে গাড়িতে উঠানো হলো । আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লাম । আমার আর কিছুই মনে নেই । এর পরের ঘটনা আম্মুর কাছ থেকে শোনা ।

আমরা রোগীরা সব সময়ই ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি । ডাক্তারের মুখ দেখে অনুমান করতে থাকি আমাদের অবস্হা কতোটা ভয়াবহ । আম্মু নাকি ডাক্তারের মুখ কালো দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন । ডাক্তার আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে বলছিলেন, আর ভয়ের কিছুই নেই । ভাগ্যিস, আপনারা অর্ধেক ঔষুধ খাওয়ান নাই । তাহলে হয়তো বিপদ ঘটে যেতে পারতো । আমার আম্মুই আমাকে দ্বিতীয়বার জীবন দিলেন ।

এবার আসি মূল ঘটনায়ঃ

আমি সাধারনতঃ ঔষুধ কে এড়িয়ে চলি । নিজের কিছু হলেই ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করার চেষ্টা করি, কি হয়েছে আমার ? কিছুদিন থেকেই নাক বন্ধ হয়ে আসছিলো । সাথে হালকা কাঁশি ও আছে । আপু বললো, চল, তোকে ল্যাবএইডের একজন ভালো ডাক্তার দেখাই ।

০৩.০১.১২ তারিখে চলে গেলাম ডাক্তারের চেম্বারে । আমার যে অনেক টাকা আছে তা কিন্তু নয় । একটু ভালো সেবার জন্যই ল্যাবএইডে যাওয়া । ল্যাবএইডে অনিয়ম আর কর্মচারীদের ব্যবহার দেখে ভাবতেই পারছিলাম না, এটা বাংলাদেশের ভালো একটা হাসপাতাল । ডাক্তারের সাথে কথা বলেও আমি মোটেই খুশি হতে পারি নি । উনি আমার রোগের বনর্না শুনে হেসে বললেন আমি আপনার অসুখ টা ধরে ফেলেছি । আমি জানতে চাইলাম, অসুখটার নাম কি ? বললেন, "আমার ২৫ বছরের বিদ্যা আপনাকে তো আমি দিয়ে দিতে পারিনা । " উনি প্রচার করতে লাগলেন, উনার অনেক রোগী আছেন ইউরোপ, আমেরিকাতে ও । আমার আগে যে রোগী কে উনি দেখেছেন, সে নাকি কোটি কোটি টাকার মালিক । থাইল্যান্ডে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন । মনে মনে বললাম, ইটস নট মাই বিজনেস টু লিসেন দিস গারবেজ । উনি বললেন, আপনাকে কিছু টেস্ট দিচ্ছি এগুলো করিয়ে নিয়ে আসেন । আমি কনফার্ম হয়ে আপনাকে ঔষুধ দিবো । শেষমেষ বললেন, এদেশে সবই পাবেন, সার্ভিস টা পাবেন না । ভালো কথা, দু'দিন ঘোরাঘুরি করে টেস্টগুলো করিয়েছি ল্যাবএইড থেকেই ।

রির্পোট গুলো দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে তেমন কিছুই হয়নি । রির্পোটগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম ০৪.০১.১২ রাত ১০ টার দিকে । বললেন, তেমন কিছুই হয়নি । আপনার শরীর এই পরিবেশ / আবহাওয়া টা মানিয়ে নিতে পারছে না । আপনাকে কিছু ঔষুধ দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে । দেশে থাকলে আপনাকে ঔষুধ খেতেই হবে ।

০৪.০১.১২ তারিখেই ঔষুধ খাওয়া শুরু করলাম । মাএ ৬ টা ঔষুধ । ০৫.০১.১২ সকালে খেলাম ৩ টা । আবার রাতে ৬ টা । খাওয়া মাএই বুঝতে পারলাম, সামথিং রং । হাতের রগগুলো স্পস্টই দেখা যাচ্ছে । শরীর কাপঁতে শুরু করছে । রাত টা খুব খারাপ ভাবেই কাটালাম । মনে হচ্ছিল এটাই বুঝি শেষ রাত । বাসার কাউকে কিছুই বলিনি । সকালে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, অবস্হা ভয়াবহ । ছোট ভাইকে ফোন করলাম । ফোন ধরলো না । একটু পরে ও ফোন করলো । বিস্তারিত জানালাম, বললো, একটা স্যালাইন বানিয়ে দিতো বলো আর পুরোপুরি রেস্ট নেও । পরে ডাক্তার কে কল করে জানাই ও । সকালে নাস্তা করে আবার বিছানায় । আজকে আর ঔষুধ খাইনি । এখনও বিছানায় শুয়ে আছি । শরীরে কাপঁনি আছে । ভাবছি, মারা গেলেও বাংলাদেশে ডাক্তারের কাছে এবার আর যাচ্ছি না । আমি যতোটা না অসুস্হ ছিলাম তারচেয়ে অনেক বেশী অসুস্হ হয়ে বিছানায় পরে আছি । অনেক কষ্টে টাইপ করলাম -

( প্লিজ, ডাক্তার ভাই, বন্ধুরা কিছু মনে করো না, তোমাদের প্রতি আমার রেসপেক্ট, ভালোবাসার কখনোই কমতি হবে না... তবে একটা কথা বলবো, রোগীরা বড়ই অসহায়, তাদের প্রতি যেন তোমাদের ভালোবাসার কমতি না থাকে... আমার ধারনা, ডাক্তারের ভালো ব্যবহারে রোগীর অসুখ ভালো না হলেও বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরনা জোগায়...) ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পূর্ণাঙ্গ দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ফিকায় উপস্থাপিত

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা মে, ২০২৫ ভোর ৬:১৮




সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপি জামায়াতের শাখা, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করতে হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

প্রিয় রাজীব ভাই,
আপনি আমার আগের পোস্টে কমেন্ট করেছেন যে, এনসিপি জামায়াতের শাখা। আপনার এনালাইসিস ভুল! ওরা জামায়াতের শাখা নয়। এনসিপি-কে বুঝতে হলে, আপনাকে জামায়াতকে জানতে হবে। আমি একটু বিস্তারিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী দলগুলো নারী বিদ্বেষী - এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৯

আরবের দেশগুলোকে আমাদের দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা দেখতে পারেন না হিজাব ইস্যুর কারণে। অথচ, আরব দেশ কাতার বি,এন,পি'র চেয়ারপারসনকে চার্টারড প্ল্যানে করে দেশে পাঠাচ্ছে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। আওয়ামী লীগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×