দেশ: ইটালী
সাল : ১৯৯৪
১৯৫২ সাল , কমিউনিস্ট ভাবধারায় বিশ্বাসী চিলির বিশ্বখ্যাত কবি পাবলো নেরুদা নির্বাসিত হয়ে আশ্রয় নেন ইতালীর ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ ক্যাপ্রিতে । অনন্য সুন্দর শান্ত দ্বীপটি হঠাৎ করেই প্রাণ চন্চল হয়ে উঠে । বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কবির কাছে আসতে থাকা চিঠিপত্র আর উপহারসামগ্রীর ঢল সামলাতে নতুন পোস্টম্যান হিসেবে নিয়োগ পান যুবক মারিও রুয়োপ্পলো । নেরুদার সংশ্পর্শ গ্রাম্য তরুণ মারিওর মনোজগতে নিয়ে আসে বিরাট পরিবর্তন , ভালবাসার বন্ধনে আর কাব্যিক সম্মোহনের কাছে একসময় পরাজিত হয় দ্বীপ সেরা সুন্দরী বিয়াত্রিশ রুসো । নেরুদা ফিরে যান তার দেশে , মারিও সর্বান্তকরণে
ধারণ করে চলে নেরুদার আদর্শ । অপেক্ষায় কাটে নেরুদার চিঠির ।এভাবে কেটে যায় ৫ টি বছর , মারিওকে দেখতে নেরুদা ফিরেছেন ক্যাপ্রি দ্বীপে , কিন্তু হৃদয় ভেঙে যায় কবির...................
সুরের মূর্ছনা আর অনন্য দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মিশে যাওয়া নেরুদার কবিতার আবেশ মুগ্ধ হওয়ার মত। ক্রমাগত চাকচিক্য আর ধুম ধারাক্কা মুভির বিপরীতে যারা তুলনামূলক ধীর বা সব ধরণের মুভি ভালবাসেন তাদের মনে অনেকদিন দাগ কেটে থাকবে।
গুড বাই লেনিন(Good Bye Lenin)
দেশ: জার্মানি
সাল : ২০০৩
অক্টোবর , ১৯৮৯ সাল ।পূর্ব জার্মানীর সমাজতান্ত্রিক রেজিমের বিরুদ্ধে উত্তাল বার্লিনের রাজপথ । সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় পূর্ণাঙ্গ আস্থাশীল শিক্ষিকা ক্রিশ্চিয়ান ছেলে অ্যালেক্সকে মিছিলে নির্মমভাবে প্রহৃত দেখে জ্ঞান হারান ।সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কেটে যায় ৮টি মাস । এরই মাঝে ধ্বসের পড়ে বার্লিন প্রাচীর , রাতারাতি বদলে যায় পূর্ব জার্মানী । শপিং মল ভরে উঠে হল্যান্ড , ফ্রান্স আর মার্কিন সামগ্রীতে , কমিউনিস্ট সেন্সরশীপের বিপরীতে পোশাক আশাকে লাগে বৈচিত্রের ছোয়া । রাস্তার পাশে শোভা পায় বিশাল বিলবোর্ড । কোকা কোলা আর বার্গার কিংয়ের সংস্কৃতি বার্লিনের চেহারাই বদলে দেয় । এবার চোখ খোলেন ক্রিশ্চিয়ান , কিন্তু ডাক্তারের কড়া নির্দেশ, কিছুতেই তাকে শক দেয়া যাবে না । ৮ মাস মায়ের পাশে থাকা অ্যালেক্সের শুরু হয় নতুন সংগ্রাম , ছোট্ট ঘরের মাঝে মায়ের জন্য সে গড়ে তোলে পুরনো পূর্ব জার্মানী । সেপ্টেম্বর ১৯৯০,বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ের আনন্দে ভেসে যায় পশ্চিম জার্মানি , ঢেউ আছড়ে পড়ে পূর্বাংশেও, সময় ঘনিয়ে আসে দুই জার্মানির পুনরকেত্রীকরণের । মাকে কি করে জানাবে অ্যালেক্স ?
বার্লিন ওয়াল এবং পূর্ব পশ্চিম জার্মানির রাজনৈতিক ইতিহাস আর মিডিয়া প্রপাগান্ডা সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলে হাস্যরসে ভরপুর আরে মেকিংয়ের অভিনবত্বে মুভিটা এককথায় অসাধারণ লাগবে আপনার কাছে ।
নো ম্যান'স ল্যান্ড (No man-s Land)
দেশ : বসনিয়া
সাল : ২০০২
১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মাঝে বসনিয়ায় সার্বরা চালায় বিপুল মুসলিম নিধন । বিপন্ন হয়ে পড়ে একটি প্রজন্ম । মূল ঘটনাপ্রবাহের বাইরে একটি ভিন্নধর্মী এ মুভিতে সার্ব এবং মুসলিম ফ্রন্টের মাঝামাঝি এক ট্রেন্চে আটকা পড়ে এক মুসলিম এবং এক সার্ব সৈন্য । দু'জনার মাঝে তৃতীয়জন আরেক মুসলিম সৈন্য যার শরীরের নিচে সার্বরা পুঁতে রেখে গেছে ল্যান্ড মাইন ।ব্রিটিশ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকের দক্ষতায় ঘটনাস্থলে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হয় জাতিসংঘ বাহিনীর ফরাসী এবং জার্মান সৈন্যরা , চলতে থাকে নাটকের মহড়া ।
একদমই ভিন্নধর্মী , এক কথায় অসাধারণ । স্মরণকালের মাঝে সবচেয়ে স্বপ্পব্যয়ে নির্মিত অস্কারজয়ী সিনেমা , মিস করবেন না কিছুতেই
মোটরসাইকেল ডায়েরিজ(Motorcycle Diaries)
দেশ : আর্জেন্টিনা (স্প্যানিশ ভাষা)
সাল:২০০৪
পুরনো নরটন ৫০০ মোটরসাইকেলে চেপে বুয়েন্স আয়ার্স থেকে যাত্রা শুরু হয় ২৩ বছর বয়েসী তরুণ চিকিৎসক আর্নেস্টো ফুসার গুয়েভারার যাত্রা । সাথে তার বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদো ।১৩০০০ কিলোমিটারের যাত্রা শেষ হয় ভেনিজুয়েলার কারাকাসের । মাঝে পাড়ি দিতে হয় আর্জেন্টিনার দক্ষিণ , পশ্চিমাংশ , সরলরৈখিক চিলির পুরোটা , ইনকা সভ্যতার তীর্থভূমি পেরুর মাচুপিচু , আমাজান পাড়ি দিয়ে সান পাবলো কুষ্ঠ নিরাময় কেন্দ্র , কলম্বিয়ার গহীন বন । দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে এ যাত্রা বদলে দেয় ফুসারকে । আদিবাসীদের প্রতি ইউরোপীয়দের অবিচার , অত্যাচারের আর মানবতার অবমাননায় বিষিয়ে উঠে তার মন , জীবনের ব্রত বদলে হয়ে উঠেন বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী পুরুষ আর্নেস্টো "চে" গুয়েভারা ।
চে গুয়েভারার ডাইরী উন্মোচন হয় নব্বইয়ের দশকে । ডায়রী অবলম্বনে অসাধারণ মেকিং , ছুঁয়ে যাবার মত মুভি ।
প্যারাডাইস নাও(Paradise Now)
দেশ: প্যালেস্টাইন
সাল: ২০০৫
তেল আভিভে আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য ডাক পড়ে সাঈদ আর খালেদের । সুদর্শন দুই অকুতোভয় যুবক প্রস্তত হয় শহীদ হওয়ার। সাঈদের বিশ্বাসের ভিত খানিক নাড়িয়ে দেয় সদ্য পরিচিতা সুদর্শন তরুণী সুহা । প্রথমবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় , খালেদের বিশ্বাস এবার নড়ে যায় । কিন্তু বদলে যায় সাঈদ , মাতৃভূমির বিরুদ্ধু ইজরায়েলের নৃশংসতার জবাব সে দেবেই । তেল আভিভ পৌছে যায় সাঈদ , সাথে তার বন্ধু খালিদ ।
আলোড়ন ফেলে দেয়া মুভি । ইহুদী লবির বিরোধিতা সত্ত্বেও মুভিটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জয় করতে সমর্থ হয় , দেখা বাধ্যতামূলক
[(সপ্তাহ দুয়েকের জন্য হলিউড মুভি থেকে বিরতি নিয়েছি । অনেকগুলো মুভির মাঝে মাত্র ৫ টির রিভিউ লেখার সময় হল । ফ্রেন্চ এবং স্প্যানিশ মুভিগুলোর উপর আলাদা করে রিভিউ লেখার ইচ্ছা আছে )]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৮