somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভর্তি পরীক্ষা স্মৃতি: আর্কিটেকচারে চান্স পাবার ঘোড়ারোগ এবং আমার আঁকাআঁকি বিপর্যয়

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"শুধু ইন্জিনিয়ারিং এ অ্যাপ্লাই করবা কেন ? সবাই ইন্জিনিয়ারিং এর সাথে আর্কিটেকচার পরীক্ষাটাও দিয়েই দেয় "........প্রিয় একবন্ধুর দেয়া "সুচ" হয়ে ঢুকা সাজেশনটাই শেষ পর্যন্ত "ফাল" হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো । স্কুলের হালখাতা আমার ক্লাশ ফাইভে , তার আগে বাসায় বসেই চলেছে আমার শিক্ষাকার্যক্রম ।স্কুলে বা কিন্ডারগার্টেনে ক্লাশ ওয়ান/টু/থ্রি তে যখন মুরগি/ফুল/আম/বাঘ দিয়ে সোনামনিরা ড্রইং খাতা ভরিয়ে ফেলে সে সময়টায় বাসায় পড়ে থাকা আমার রংগিন পেনসিল গুলো অযত্নে অবহেলায় উইপোকার খাদ্য চাহিদা মিটিয়েছে । আঁকাআঁকি বলতে কেবল এস এস সির বায়োলজি । ইন্টারমিডিয়েটে উঠে "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি বলে তওবা পড়ে বায়োলজি ধর্ম ত্যাগ করেছি" । জাতি করজোরে যদি মিনতি করে বসে "তোমার মত এমন পটুয়া আঁকিয়ে আর্কিটেক্ট আমরা চাই না"..........তাহলে খুব কি অন্যায় হবে ?

ইন্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দেয়ার জন্য যোগ্যদের লিস্ট যেদিন করা হলো , সেদিন "engineering+architecture" লিস্টে আমার নামের আশেপাশে চেনাজানা কোন বন্ধুকে খুজে পেলাম না , সবাইকে পাওয়া গেল "only engineering" লিস্টে (এমনকি আমার সুপরামর্শদাতা বন্ধুও) ।

আজ থেকে ৫ বছর আগে ফিরে যাই ................
ডেটলাইন ৯ই জানুয়ারী , থার্মোমিটার রিডিং শো করছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস । ঢাকাবাসীর জন্য রীতিমত মেরুদেশিয় আবহ ।কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার/মেডিকেল কলেজ প্রান্তের গেট গলিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকে পেছন ফিরে একবার তাকালাম ..........শত অভিভাবকের নির্বাক চোখের একই ভাষা .........এ যেন হাশরের দিন , আমলনামার জন্য অধীর উতকন্ঠা ।

ওল্ড একাডেমিক বিল্ডিংয়ে হু হু উত্তরীয় বাতাসে জমে যাওয়া হাতটার সাথে লড়ে ফিজিক্স , ম্যাথ , কেমিস্ট্রি এক্সাম যখন শেষ হলো , হিসেবে ধরা পড়লো ৬০ টির মাঝে ৬ টি প্রশ্ন সময়ের অভাবে পড়তে পারিনি । মনে হচ্ছিল সাধের ডিপার্টমেন্টটা পেয়েই যাবো । একঘন্টা বিরতির
পর শুরু হবে আর্কিটেকচারের জন্য অতিরিক্ত ১৮০ নম্বরের লড়াই ।

ড্রয়িং পরীক্ষা শুরুর পূর্বমুহুর্তে ডানে বামে ঘাড় ঘুরিয়ে সবার দৃপ্ত চোয়াল আর বৈচিত্রময় পেনসিলের সূচালো ফলাসমেত যুদ্ধসাজ দেখে বুঝলাম আমার মত কেউ "মদন" হয়ে আর্কি পরীক্ষা দিতে আসেননি । এরা রীতিমত আঁকিয়ে , আর আমার গুলো ওদের পাশে বড়জোড় "আঁকিবুকি " ।


৪ টা প্রশ্ন ।
প্রথমটা একটি ঘরের সামনে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে ।
শুরু করলাম আয়তক্ষেত্র দিয়ে(ঘরের দেয়াল) , তার মাথায় একটা ট্রাপিজিয়াম(ঘরের চালা) । তাতে মনে হলো ঘরটা পৃষ্ঠার সাথে লেপ্টে গেছে । মানুষ আঁকতে গেলে হয় মনে হবে মানুষটির পায়ের নিচে চ্যাপ্টা ঘরটি হয়ে গেছে(সেক্ষেত্রে সুমো কুস্তিগীর খানিকটা মানানসই) , অথবা নরহত্যার দায় নিয়ে মানুষটিকে ঘরের দেয়ালে লেপ্টে দিতে হবে । নাহ এমন করে হবে না , ঘর হতে হবে থ্রি ডাইমেনশনাল । নৌকার পালের আদলে দু'পাশে দু'টো সংযুক্ত চাল আঁকলাম , তার নিচে একটা কিউব :) । সামনের মানুষটা নিয়ে পড়লাম বিপদে । মাথাটাই আঁকতে পারি না , হাত দুটো শরীর থেকে দূরে সরে গিয়ে কাকতাড়ুয়া সাজতে চায়, পা দুটোর মাঝে মাইলখানেক ফাঁকা জায়গা , ঠিক যেন রণপা। কিছু বুদ্ধি বের হল... মাথায় চেক চেক করে দিলাম , ভাবখানা এমন যেন গামছা পেচিয়ে আছে । মুখের শেপ সাইজের বিপর্য্য় এড়াতে দাড়ি দিয়ে ঢাকলাম । কাধের কাছে আকলাম প্যারাবলা । স্যান্ডো গেন্জির ভাব । ফাঁকা হয়ে থাকা পা দুটো ঢেকে দিলাম একটা চেক করা আয়তক্ষেত্র দিয়ে , যদিও মনে মনে আমি প্রাণপণে বলে যাচ্ছি ..."এটা লুংগি , দেশি চেক লুংগি"কিন্তু লোকটার পা আমাকে ক্ষমা করলো না । লুংগির নিচ দিয়ে পা জোড়া যেন মাটিতে গেঁথে আছে , কিছুতেই মাটির সমান্তরালে নিতে পারছি না । পা দু'টো লুংগি দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করলাম , তাতে গ্রামের কিষাণ মাটি থেকে খানিকটা উপরে ভেসে উঠে , পূর্নাংগ ভূতের রুপ নিয়ে নিল । অনেক ধস্তাধস্তির পর পা মাটিতে নামলো , কিন্তু মানুষের পায়ের বদলে হাঁসের চ্যাপ্টা পা হয়ে ।

নেক্সট ........
একটা পোস্টারের নিমিত্ত আবেদন । বিষয় শিশু পার্ক।
কি করে শুরু করি । পৃষ্ঠার মাঝ বরাবর গোল করে বৃত্ত একে দিলাম । গোল দু'টো চোখ , নাকটাও গোল , গালে ছোপ ছোপ , মাথায় বসালাম একটা চোঙ । চোঙের দুপাশ দিয়ে মেঘের মত কোঁকড়া চুল বের করে দিলাম । "জোকার" সৃষ্টির চেষ্টা ।মুখের কাছে উল্টা ঈদের চাঁদ , হাসছে আমার জোকার । আমার ছবি দেখে স্যারও আমাকে জোকার ভেবে বসতে পারে , আমার অতসব চিন্তার সময় নেই । ভাবছি আমি , শিশুরা আর কি পছন্দ করে ? ...."রোলার কোস্টার ?" । খানিকটা সময় মারামারি করলাম , নাহ রোলার কোস্টার পেচিয়ে বড়জোড় নুডলস হয়ে যায় , শিশুপার্কে খাবার দোকানে নুডলস পাওয়া যায় ,শিশুপার্কে খাবার দোকানে নুডলস পাওয়া যায় , কিন্তু তাই বলে পোস্টারে নুডলসের ছবি দেয়াটা কেমন দেখায় ?তিনপাশে তিনটা বেলুন একে দিলাম , মাঝে বিদঘুটে ফন্টে লিখে দিলাম Amusement park । পোস্টার দেখেই বুঝতে পারছি শিশুরা ভুলেও এমন পার্ক মাড়াবে না । আমার সময় নেই ....

নেক্সট :
তিনটি সিলিন্ডার দিয়ে একটি মডেল তৈরি করতে হবে ।
মাত্র তিনটা সিলিন্ডার ?সিলিন্ডার হিসেবে ভাবলাম তেলের ড্রাম ।ভাবছি আমি........ এমনভাবে সাজাতে হবে যেন মডেলটির সামনে প্রেমালাপে মশগুল কোন বাদাম চিবুনো কোন প্রেমিকের উপর ড্রাম তিনটি ধ্বসে পড়ে মহাকেলেংকারি না হয়ে যায় । কিছুই মাথায় ঢুকলো না , মিতশুবিশির লোগোটা চেনা আছে ? হুবুহু লোগোটা নকল করার চেষ্টা করে গেলাম , তিনটা সামান্তরিকের বদলে বসালাম তিনটি তেলের ড্রাম । মনে মনে মডেলটির নাম দিলাম "বলদ" ।

নেক্সট : এবার এভারেস্ট পেড়িয়ে যাবার হাত্ছানি .......
পথের উপর দু'টো ছোট ছেলেমেয়ে বসে মার্বেল খেলছে ।
শুরুতে আঁকাবাকা পথে আঁকলাম , পথের বদলে নদী হিসেবে মানিয়ে গেল । মুছে ফেলে নতুন করে আঁকলাম । বেশ একটা ভাব আসলো ....পথটা দেখে গাইতে ইচ্ছা করছে ......"এই পথ যদি না শেষ হয়" । কিন্তু ছেলেমেয়েকে দাঁড় করাতেই পারে না যে , সে বসাবে কি করে ?
মোটা, সোজা করে নতুন পথ আঁকলাম , আশে পাশে কিচ্ছু নেই , বাংলায় বানান করে "পথ" লিখে না দিলে পথ বুঝবারও জো নেই ।এমন পথে ছড়িয়ে দিলাম কিছু মার্বেল (নিজেকেও প্রবোধ দিলাম , বলো এগুলো মার্বেল , গোল গোল কিছু না) । দু'পাশে ছেলে মেয়ে বসানোর পালা , হাঁটু বরাবর একটা পা ভেংগে দিলাম । মুগ্ধ হলাম ........(এসএসসি তে ব্যাঙের ঠ্যাং আঁকতে কত কষ্ট হত , এক আঁচরেই ব্যাঙের ঠ্যঙটা দারুণ হয়েছে) । তার উপর পাশ থেকে দেখা শরীর , মাথা । মেয়ের জন্য সেই মাথায় আবার কিছু লম্বা লম্বা দাগ(চুল সৃষ্টির ব্যর্থ প্রয়াস) , বাকানো শরীরের ফ্রক পড়ানোর চেষ্টাটাও মাঠে মারা গেল , পেছন দিকটা উঁচু হয়ে পালকের রুপ নিল , বেশ একটা মুরগী মুরগী ভাব এসে গেল । পা যথারীতি হাঁসের পা । শেষমেষ যা দাঁড়ালো .......একটা আয়তক্ষেত্রের সাথে লেপ্টে থাকা কিছু গোল গোল কি যেন(মার্বেল) , তার দু'পাশে হাস/মুরগী/ব্যাং/মানুষ সহযোগে কোন অন্য সৌরজগতীয় প্রাণী ।

প্রহর ফুরোলো।১৮০ তে পাশ নম্বর ৭২ । ইন্জিনিয়ারিং পরীক্ষা ভালো হয়েছে , বুঝতে পারছি তে কেবল পাশ মার্কসটা পেলেই দু'টো মিলিয়ে আর্কিতে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে একটা জায়গা পেয়েই যাবো । এবার অপেক্ষার পালা ..................
৬৬টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×