২০১৩ সালের শেষ দিকে অমিত আশরাফ নামের এক স্বপ্নবাজ তরুণ বানালেন 'উধাও' নামের একটি সিনেমা। তার সাথে শব্দ পরিচালনার কাজ করেছেন কেনেথ এল জনসন; যার আছে দ্য লাস্ট সামুরাই, দ্য ইতালিয়ান জব, মিশন ইম্পসিবল থ্রি এর মত বিখ্যাত ও সফল সিনেমায় কাজ করার অভিজ্ঞতা। স্বভাবজাত মুন্সিয়ানা দিয়ে তিনি 'উধাও' এর প্রতিটি দৃশ্যে এমনভাবে শব্দ গেঁথেছেন, আপনি না চাইলেও আপনাকে মুগ্ধ হতে হবে। আর ভিডিও সম্পাদনা করেছেন ডেভিড ডাইপারস্টেইন। পরিচালনা করেছেন নিউইয়র্ক থেকে 'সিনেমা' নিয়ে পড়াশোনা করে আসা অমিত আশরাফ নিজেই। সবাই মিলে যে গল্পটা বলেছিলেন সেটা কুড়িয়ে এনেছিল ৭টি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড। তখনকার সময়ের দেশীয় প্রেক্ষাপটে এবং দেশীয় দর্শক মানসিকতা, টেকনিক্যাল ক্রুটি আর হাজারখানেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও 'উধাও' ছিল একটি ভিন্ন কিন্তু শক্তিশালী প্রচেষ্টা। সেই সময় 'উধাও' কে বলা হয়েছিল একটি শুদ্ধধারার দেশি থ্রিলার!
খুবই আফসোসের বিষয়, অসাধারণ এই সিনেমাটি তার নামের মতোই যেন 'উধাও' হয়ে গেছে। মুক্তি পেয়েছিল সিনেপ্লেক্স সহ মাত্র ৫টি হলে। তারকাসমৃদ্ধ না হওয়াটাও মনে হয় কম হল পাওয়ার একটি কারণ ছিল। এছাড়া প্রযোজক-পরিবেশকদের প্রচারণার অভাবও হয়তো এই সিনেমাটি 'উধাও' হওয়ার আরেকটি কারণ।
অনেকদিন পর সিনেমাটা একটা অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটে দেখলাম। সাথে সাথে মনে হল, এই সিনেমাটাকে আরেকবার 'উধাও' হতে দেওয়া যাবে না। তাই সারাদিনের ব্যস্ততার ক্লান্তি থাকা সত্ত্বেও লিখতে বসলাম।
গল্প সংক্ষেপ: সিনেমা শুরু হয় পায়ে শিকল বাঁধা আর গলায় সিমেন্টের ঢালা ঝুলানো এক যুবককে দিয়ে। গ্রামে নিজের স্ত্রী-সন্তানকে রেখে শহরেই আঁটকে আছে লোকটা, তাই তার পরিবারের কাছে সে উধাও। সে পালাতে গিয়েও পালাতে পারে না, স্কুল-ভ্যান চালক বাবু তাকে ধরে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়। স্বেচ্ছায় উধাও হওয়া এই মানুষগুলোকে ধরে বেঁধে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই যেন তার কাজ। কেন বাবু এই কাজ করছে? এর পেছনে তার নিজের গল্পটাই বা কী? ঘটনার স্রোতে বাবু কিডন্যাপ করে ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আকবর রহমানকে। ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে যুক্ত আকবর সামনের নির্বাচনের জন্য আপাতত অপরাধ থেকে দূরে আছে। তার ইচ্ছে নির্বাচনে জিতে নতুন উদ্যমে সে আবার সবকিছু শুরু করবে। বাবু এই ভয়ংকর লোকটাকে কেন কিডন্যাপ করলো? কী চায় সে আকবরের কাছে? আর বাবুর উদ্দেশ্যের সাথে সাথেই এগোতে থাকে 'উধাও' নামের শ্বাসরুদ্ধকর সিনেমাটি।
গল্পটা স্লোপেসড, কঠিন আর টুইস্টেড হলেও নির্মাণ আর প্রেজেন্টেশনে আছে নির্মাতার সাবলীলতার নিপুণ ছাপ। প্রতিটা অভিনেতার পরিপাটি অভিনয়ে ডায়লগও ছিল অনেক সুন্দর আর সহজ। বাংলাদেশের কাশেম শাহবাজি আর বৃটিশ চিত্রগ্রাহক কায়েল হাসলপ- দুজন মিলে সিনেমাটোগ্রাফিতে প্রাণ দিয়েছেন। সাউন্ড ডিজাইনার কেনেথ জনসন ও মিউজিক ডিরেক্টর জ্যাকব জোফি কম্বো 'উধাও' এর মিউজিককে করেছেন প্রাণবন্ত আর দেশি। দুই হলিউডি মিলে এই সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ডে তবলা, সেতার, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের এমন ব্যবহার যে আপনাকে একবার হলেও বলতেই হবে - বাহ!
অসাধারণ এই সিনেমাটা দেখে নিতে পারেন। মাত্র দেড় ঘণ্টার সিনেমার প্রতিটি মুহূর্ত আপনি উপভোগ করবেন।
সেইফ ও সিকিউরড অনলাইন ওয়াচ লিংক: এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১০:১৪