আহা পদ্মা সেতু! আমাদের মিথ, আমাদের আবেগ, আকাঙ্খা! যে মায়ের সন্তানকে পদ্মার জল গ্রাস করে নিয়েছে সে জানে পদ্মা সেতুর প্রয়োজন কতটুকু, যার ভাই ফেরি আসতে লেট হওয়ায় এম্বুলেন্সে মারা গিয়েছে সে জানে পদ্মা সেতুর মুল্য আমাদের কাছে কতখানি, যে ছেলে লঞ্চ দেরি করার কারনে পরীক্ষা দিতে পারেনি, যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে কয়েকটি মিনিটের জন্য তারা জানে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য কি আশা আকাঙ্খার বস্তু কি দুঃসহ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের বস্তু।
অবশেষে দীর্ঘ ভোগান্তি ও যন্ত্রনার শেষ হলো পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। এই পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, পদ্মা সেতুর অবয়ব দেখেই ভালো লাগছে আর কখনো ফেরির জন্য ১/২ ঘন্টা বসে থাকতে হবে না, লঞ্চে উঠা নামার ভোগান্তিতে পারতে হবে না। বাবা চাচাদের মুখে শুনে এসেছি এই পদ্মা সেতু হলে নাকি আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের কোন ভোগান্তি থাকবে না, পদ্মা সেতু আমাদের ব্যাপক উন্নতি করবে। সেই ছোটবেলা থেকে এই পদ্মা সেতুকে মনে হয়েছে রুপকথার কাহিনি যা শুধু শোনা যায়, পড়া যায় কিন্তু বাস্তবে যা তৈরি করা কখনো সম্ভব না, সে রুপকথার পদ্মাসেতুর উপরে আজ আমরা হেটে বেড়িয়েছি সব কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষদের জন্য কি আবেগ তা কখনো অন্য কাউকে বোঝানো সম্ভব না। বাবা ছোটবেলা থেকে দীর্ষস্বাস ফেলে বলে আসছে "আমরা কি বাইচা থাকতে পদ্দা সেতু দ্যাখতে পারমু?" মা বলেছে, চাচারা বলেছে দক্ষিনাঞ্চলের সকল মানুষ বলেছে। হ্যাঁ আজ বাবার স্বপ্ন পুরন হয়েছে মায়ের স্বপ্ন পুরন হয়েছে চাচাদের হয়েছে তারা বেঁচে থাকতে পদ্মা সেতু দেখতে পেরেছে, আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পুরন হয়েছে, পুরো দেশের মানুষের স্বপ্ন পুরন হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বস্তু এই বিস্ময়কর, স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমরা আমাদের নিজ অর্থয়নে তৈরি করে দেখিয়েছি
।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যার উদ্যোগে আজ আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চোখের সামনে দৃশ্যমান এবং বিশেষ ধন্যবাদ তাদের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের স্বপ্ন পুরন করেছে, পুরো দেশের মানুষের স্বপ্ন পুরন করেছে এবং পদ্মা সেতুকে বিশ্বের দরবারে বিস্ময়কর বস্তু হিসেবে প্রমান করেছে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেইসব শ্রমিকদের যাদের ঘামের প্রতিটি ফোটা পদ্মা সেতুর সাথে জড়িত।
নোট- কিছু জিনিস হয়তো মিস করবো যা ঢাকা যাওয়ার পথে আমাদের সঙ্গ দিয়েছে আমাদের নিত্যসঙ্গী ছিল তারমধ্যে ভোরবেলা পদ্মার হিমশীতল বাতাশ সাথে চা, লঞ্চের মামাদের স্পেশাল ঝালমুড়ি, লঞ্চের তাজা ইলিশ ভাজা দিয়ে ভাত সাথে শুকনো মরিচ ভাজা এসব উল্লেখযোগ্য যা হয়তো খুবই মিস করবো।
এক নজরে পদ্মা সেতুঃ-
★পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম-পদ্মা বহুমুখী সেতু
★পদ্মা সেতুর দৈঘ্য - ৬.১৫ কি.মি.
★পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক- দুই প্রান্তে ১৪ কি.মি.
★পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা - ৩৮৩ ফুট
★পদ্মা সেতুর ধরন - দ্বিতলাবিশিষ্ট।
★পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা- ৪২ টি
★পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম- চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড
★পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ কর শুরু হয়-৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে
★পদ্মা সেতু - ২১ টি জেলার সাথে সংযোগ হয়েছে
★পদ্মা সেতু পিলার সংখ্যা ৪২ টি
★পদ্মা সেতুর স্পান সংখ্যা ৪১ টি
★পদ্মা সেতুর প্রস্থ-১৮.১০ মিটার বা ৫৯.৪ ফুট ★পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা- ২৬৪ টি ★পদ্মা সেতুর পরিচালক -মোঃ শফিকুল ইসলাম
★ সেতুর সবগুলো স্প্যান বসাতে সময় লাগে- ৩৮ মাস
★পদ্মা সেতুর বিশ্বের- ১১ তম সেতু
★পদ্মা সেতুর ডিজাইনার - AECOM
★পদ্মা সেতুর অবস্থান ৩টি জেলা নিয়ে তা হলো মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর
★পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের তারিখ-২৫ জুন ২০২২
ছবি- ফেইজবুক থেকে সংগ্রহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২২ রাত ৯:০৪