আচ্ছা বইয়ের ভিতরের উপাদানের চেয়ে কি বাইরের প্রচ্ছদ কিংবা ডিজাইন বেশি প্রয়োজনীয়? এখন অনেককে দেখছি প্রচ্ছদ দেখে বই কিনে, কোন বইয়ের প্রচ্ছদ চকচকে বেশি কিংবা কোন বইয়ের প্রচ্ছদে প্যাচানো ক্যালিগ্রাফি করা এটা দেখে বই কিনে। কিছু কিছু বইতে তো ক্যালিগ্রাফি এমন প্যাচানো থাকে যে বইয়ের নামই ঠিকভাবে পড়া যায়না প্রকাশকরা এবং লেখকরাও বোধহয় পাল্লা দিয়ে চকচকে সুন্দর প্রচ্ছদ করায় ব্যাস্ত থাকে এমনকি ভিতরে উপাদানের চেয়েও প্রচ্ছদের উপর নজর থাকে বেশি তা না হলে এখন প্রায় বইতেই এতো বানান ভুল থাকবে কেন? কিছু কিছু বানান ভুল এমন পর্যায়ে থাকে যে পড়তে দাত ভেঙে যায়!
বাংলা সাহিত্যের সেরা বইগুলো বোধহয় আনন্দ পাবলিশার্স এর কাছে অথচ তাদের বইগুলো দেখেছেন? কি সাদামাটা প্রচ্ছদ? চোখ ধাধানো প্রচ্ছদ তাদের নেই অথচ এক হাজার পাতার বইয়ে দশটা বানান ভুল খুজে পাওয়া মুসকিল। তাদের চোখ ধাধানো প্রচ্ছদ না থাকলেও প্রুফ/বানান সংশোধন যে খুব ভালোভাবেই করা এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকাশকদের কিন্তু বানান/প্রুফের দিকেই বেশি নজর দেয়া উচিত বেশি।
এগুলো আমার নিজস্ব মতামত। ফেইসবুকে বিভিন্ন বই রিলেটেড গ্রুপে এড হয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেদিন দেখলাম এক পাঠক শুধুমাত্র প্রচ্ছদ দেখে বই কিনেছে কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পড়ার জন্য সে কেনেনি দেয়ালে টাঙিয়ে রাখার জন্য কিনেছে এটা নাকি তার শখ।
বই নিয়ে খুঁতখুঁতে ভাব আমার কোনদিনও ছিলনা মোমের পুতুলের মতো ধরে কোনদিন বই পড়িনি যেভাবে মন চায় সেভাবে পড়ি আমার কাছে আরামে বই পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের কি হলো ওটা গুরুত্বপূর্ণ না। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে যেভাবে মন চায় সেভাবে পড়ি আশ্চর্য বিষয় হলো আমার একটা বইও এখনো নষ্ট হয়নি ছেড়েনি পর্যোন্ত।
ইদানীং দেখছি অনলাইনে বই কিনলে অনেকের বইয়ের সাইড বাকা হয়ে যায় বা অনেকসময় বেশি চাপে বইয়ের কোনা ডেবে যায় এটা বিক্রয়কর্মীর দোষ না। কুরিয়ারের ট্রাকে যেভাবে পন্য উঠানামা করে তাতে একটু আধটু ক্ষতি হওয়া বিচিত্র কিছু না। এ নিয়ে দেখি কিছু মানুষের আপত্তির শেষ নেই কেন বই ডেবে গেলো, কেন বই বাকা হলো। বিক্রয়কর্মীদের নামে অভিযোগ করতে ছাড়ে না।
আমার মাসে মোটামুটি দুইবার বই কেনা হয় আমার প্রায় বই ডেবে যায় বা বাকা হয়ে যায় এমনকি অনেকসময় বইয়ের জ্যাকেট ছেড়া থাকে কোনদিন আমি কারো নামে অভিযোগ করিনি কারন আমার কাছে বইয়ের উপরে কি আছে তার চেয়ে ভিতরের উপাদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি পত্রিকার কাগজ মুরানো বা কাগজ দিয়ে প্রচ্ছদ করা পুরনো বইয়ের পাঠক ওসব চোখ ধাধানো চকচকে প্রচ্ছদ আমার কাছে ম্যাটার করেনা।
যারা বাংলাবাজার থেকে বই কিনেন তারা জানেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সামনে পুরনো বই বিক্রির দোকান আছে। ওখানকার কোন বইতে কভার, প্রচ্ছদ থাকেনা সব বইতে খবরের কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো থাকে কিন্তু ওখানে অনেক ভালো বই পাওয়া যায় দামও অল্প কিন্তু বইগুলো খুব ভালো থাকে। কিছু বইতে বোনাস হিসাবে টাকা কিংবা প্রিয় মানুষকে দেয়া চিঠি বা সুন্দর সুন্দর লেখা পাওয়া যায়। বইতো পড়ার জন্য এটা তো আর ঘরে সাজিয়ে রাখার জিনিস না।
ছবি- গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৪০