বইঃ নর্স মিথলজি
লেখকঃ নিল গেইম্যান
জনরাঃ মিথলজিক্যাল
পৃষ্ঠাঃ ১৬০
মার্ভেলের থর মুভিটা দেখে নর্স মিথলজির প্রতি আগ্রহ জাগে থর সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে, সর্বপিতা ওডিন, লোকি, হেলা, থরের হাতুরি মিওলনির সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল সেই থর মুভি দেখার পর থেকেই। সম্পতি লোকি সিরিজটা দেখার পরে আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো তাই পড়তে শুরু করলাম নিল গেইম্যানের 'নর্স মিথলজি'।
কিন্তু পড়া শুরু করে চমকে গেলাম এতোদিন জানতাম (থর মুভি দেখে) লোকি থরের ভাই অর্থ্যাৎ ওডিনের পালক পুত্র এবং হেলা ওডিনের মেয়ে থরের বোন কিন্তু বই পড়ে দেখলাম তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভিন্ন লোকি হচ্ছে সর্বপিতা ওডিনের রক্ত শপথ করা ভাই ও দানব লাউফির পুত্র এবং হেলা হচ্ছে লোকির মেয়ে। কিএক্টবস্থা? বোন হয়ে গেলো মেয়ে? আর বাবা হয়ে গেলো ভাই? মার্ভেল কি ধোকা দিলো আমাদের!
আচ্ছা আপনার কি কখনো জানতে ইচ্ছে করে এই পৃথিবী সৃষ্টি হলো কিভাবে? পাহাড়,পর্বত,নদী, সাগর, গাছ কিভাবে এলো? কবিতা,গান,গল্প এসবই বা কোথার থেকে শুরু? কিভাবে এলো এসব? জগতের সবার কন্ঠ মিষ্টি না হয়ে অল্পকিছু মানুষের কন্ঠ মিষ্টি কেন যাদের গান কিংবা কবিতা আবৃত্তি শুনে আমরা আনন্দ পাই?
আচ্ছা থরের হাতুড়ি মিওলনির কেন এতো শক্তিশালী যে হাতুড়ি দিয়ে বধ করা যায় পৃথিবীর যেকোন কিছু, যেকোন শক্তি? সেই হাতুড়ি কিভাবে তৈরি হলো কারাই বা কিভাবে তৈরি করলো এমন অমোঘ অস্ত্র? থরের বাবা সর্বপিতা ওডিনের একটা চোখ নেই কেন? ওডিন কেন সর্বপিতা এবং দেবতাদের মাঝে সবচেয়ে সম্মানের? ভূমিকম্প কেন হয় জানেন? এই প্রশ্নগুলোর যদি উত্তর পেতে চান তাহলে পড়তে হবে নিল গেইম্যানের মিথলজিক্যাল বই 'নর্স মিথলজি'। এই বইতেই রয়েছে সব প্রশ্নের উত্তর।
চরিত্রঃ
ওডিন-
ওডিন শক্তিশালী বজ্রদেবতা থরের পিতা। দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানের আসনটা ওডিনের, সবচেয়ে বয়স্ক দেবতাও তিনি। অগনিত রহস্য তার জানা, জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে মহাজ্ঞানী মিমিরের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন একটা চোখ। অনেক নাম আছে ওডিনের তিনি সর্বপিতা, মৃতদের প্রভু নানা দেশে নানা নামে ডাকা হয় তাকে। ওডিনের একটা অভ্যাস আছে তিনি ছদ্মবেশে ভ্রমন করে মর্ত্যলোকে। যুদ্ধে যদি কেউ বেঁচে যায় তাহলে ওডিনের দয়ায় আর কেউ যদি মারা যায় তাহলে ওডিনের সুনজর তার উপর পরেনি। তার দয়ায়ই সবাই বেঁচে থাকে। তিনি মহাজ্ঞানী।
থর-
থর অ্যাসগার্ড এবং মিডগার্ডের রক্ষাকর্তা যাকে বলা হয় বজ্রদেবতা। থর সর্বপিতা ওডিনের পুত্র। আকারে থর বিশাল কিন্তু শান্তশিষ্ট আর মনের দিক দিয়ে সরল। চুল-দাড়ি লালচে রঙের, দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। যখন তার কোমরবন্ধী মেইনগর্ড কোমরে জরায় তখন সেই শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়। থরের হাতুরির নাম মিওলনির, তাকে সেটা বানিয়ে দিয়েছিল বামনেরা (এই হাতুড়ির পিছনে লোকির অবদান আছে)।
থরের স্ত্রীর নাম সিফ যার রয়েছে অসাধারণ সুন্দর সোনার চুল (এই চুল লোকি একবার কেটে দিয়েছিল, যদিও অন্যভাবে আবার ফিরিয়ে দিয়েছিল) থরের দুই পুত্রের নাম মোডি আর ম্যাগনি এবং মেয়ের নাম থ্রুড।
লোকি-
অনিষ্টের বা অনর্থের দেবতা লোকি। লোকি সর্বপিতা ওডিনের রক্ত শপথ করা ভাই।
(মার্ভেল মুভিতে ওডিনের পালক ছেলে)। দেবতাদের মাঝে লোকির চাইতে সুদর্শন দেবতা খুব কম আছে। লোকির মতো ধূর্ত দেবতাও আর নেই যার মস্তিষ্ক চলে বাতাশের আগে। লোকির মাঝে লোভ, হিংসা ও রাগ বেশি। তার মতো অন্য কেউ অন্যের মাঝে বিস্বাস জন্মাতে পারে না। অসম্ভব ধূর্ত লোকি কিন্তু এসির দেবতাদের সাথেই থাকে। লোকি দেবতাদের বিপদে ফেলে আবার সেই বুদ্ধি খাটিয়ে তাদের উদ্ধার করে। লোকির সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে তার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক, অন্য যেকোন দৈত্য কিংবা দেবতার চাইতে চালু তার মস্তিষ্ক। রুপ পরিবর্তনের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে লোকির। লোকির কাজকর্ম দেবতাদের আমোদিত করে আবার বিপদেও ফেলে। লোকি দৈত্যদের পিতা দুশ্চিন্তার জন্মদাতা। পৃথিবী ধ্বংসের দিন অর্থ্যাৎ র্্যাগনোরকের দিন লোকি তার সন্তানদের নিয়ে যুদ্ধ করবে তবে এসির দেবতাদের পক্ষে নয় বিপক্ষে।
মতামতঃ
প্রথমেই নিল গেইম্যাকে ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বই আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। নিল গেইম্যান একজন অসাধারণ প্রতিভাবান লেখক।
তার আরো বই পড়ার ইচ্ছে আছে।
দেবতাদের মাঝে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র থর যার চরিত্র সব সময়ই আকর্ষন করে, অসম্ভব শক্তিশালী সে। তার হাতুড়ি যেদিকেই ছুড়ে মারুক না কেন ঠিক তার হাতের কাছেই আবার ফিরিয়ে আসবে।
লোকি চরিত্র অন্ধকারে ডুবে থাকা এক সত্ত্বা লোকিকে আমার খারাপ লাগেনি আবার খুব ভালো লাগেনি। লোকি এক মজার চরিত্র সবাইকে বিপদে ফেলে আবার সেই উদ্ধার করে। বন্ধু থরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আবার সাহায্য ও করে। লোকিকে ভালো লাগার কারন তার ক্ষুরধার বুদ্ধি। সুদর্শন দেবতা ফ্রে এবং সুন্দরী দেবী ফ্রেয়াকেও ভালো লেগেছে।
বইটির অনুবাদ ছিল যথেষ্ট সাবলীল পড়ে ভালো লেগেছে এমনকি মনে হয়নি এটা অনুবাদ বই। এজন্য ফুয়াদ আল ফিদা ভাই এবং ওয়াসি আহমেদ ভাই অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য এতো সুন্দর অনুবাদ আমাদের উপহার দিয়েছে।
অবশেষে যাদের নর্স পুরানের কিংবা পৌরাণিক কাহিনিতে আগ্রহ আছে তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়া উচিত। তাদের জন্য হাই রিকমেন্ড।
ছবিঃ আদি প্রকাশন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২