আজ আমার মন উথাল পাতাল করছে। কত কত আজগুবি বায়নাও ধরছে, যেন ছোট্ট খুকিটা! আজ আমার অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠতে মন চাইছে। মুড়ির মোয়া আর নাড়ুর সাথে অনভ্যস্ত হাতের বানানো বিস্বাদ চা'য়ে চুমুক দিতে ইচ্ছে করছে। আমি চায়ে চিনি বেশি খাই..... আজ চিনি কম পড়বে। আমি কম চিনির দরিয়ার জল মার্কা চা খেয়ে বলবো "বেশ ভালো হয়েছে!" তারপর আনকোরা হাতে বানানো মোটা রুটি, সেকার সময় যা কাঁচা রয়ে গেছে সেই দিয়ে নাস্তা করবো। একবারও নাম সিঁটকে বলবো না "এহ এগুলো কি মানুষে খায়!"যে আলু ভাজিতে তেলের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে সেটাই খাব গপাগপ। আজকে ডায়েটের চিন্তা নেই। আজ আমি বারান্দায় বসে হাঁসগুলোর প্যাক প্যাক শুনে বিরক্ত হবনা। সত্যি বলতে কি আজ আমি কোন কিছুতেই বিরক্ত হবনা।
আজ আমি সবচেয়ে লম্বা নারকেল গাছটায় উঠবো। অর্ধেক উঠে হাঁপিয়ে গিয়ে আবার সড় সড় করে নীচে নেমে যাব। তারপর পেয়ারা গাছে উঠে মগডালে বসে পা ঝুলিয়ে গান ধরবো "আমার সোনার ময়না পাখি..................." গ্রামের মানুষরা তো মাইকেল জ্যাকসন, ব্রায়ান এ্যাডামস, বব ডিলান কিংবা আধুনিক এনরিক বা আরাশের গানের অর্থ বুঝবেনা। তারা "সোনার ময়না পাখি" শুনলেই তাদের বুকের ভেতরকার ময়না পাখিটা জেগে ওঠে! তারা যখন বলে "গলায় বড় মায়া তোমার গো মেয়ে", আমি তখন মায়াবতী হয়ে যাই...........রাণী মায়াবতী। এই নামে কি কোন রাণী ছিল কোনদিন?
আজ আমি মান্নানদের শসা ক্ষেতে ডাকাতি করবো। সমস্ত কচি শসা সাবাড় করে পাশের ঝিল পুকুরে ঝাঁপ দেব। নুয়ে পড়া খেঁজুরের পাতা ধরে পানির ভেতর দোল খাব---- দোল দোল দুলুনি, রাঙা মাথায় চিরুণি...............আমি আজ কাঁকড়ার ভয় পাবনা। একটুও না। আজ আমি ঝাপাঝাপি করে কানের দুল হারাব। এত পানিতে কে খুঁজে পাবে আমার কানের দুল? আজ আমি কাদা মেখে ভূত হব। স্টাইল করে একবারও বলবো না "ইয়াক! কী নোংরা!" "ইয়াক" বলার সময় অবশ্য অনেক ভঙ্গী করতে হয়। নয়ত সেটা আবার খুব ক্ষ্যাত হয়ে যায়। আজকে আমি সেই ভঙ্গীটা ভুলে যাব।
আজ দুপূরে আমি পানির মত মাছের ঝোল আর খেসারির ডাল দিয়ে মোটা চালের ভাত খাব। ভাতের রঙটা হবে একটু লালচে। আমি একবার বলবো না "এমন চাল মানুষ খায় কিভাবে!" চাপ কলের পানিতে আজ আমার গন্ধ লাগবেনা। আমি বরং খুব তৃপ্তি নিয়ে কল চেপে পানি খাব। আমি আজ দুপূরে ভাতঘুম না দিয়ে ঘর পালিয়ে নৌকা চালাতে যাব। টানা রোদে সানস্ক্রীন ক্রিম ছাড়াই নৌকা চালাব। আজ সান বার্ন হলে হোক! আজ বিকেলে চাইব সেই লাল সাইকেলটা চালিয়ে সে রাস্তার মোড়ে এসে দাড়াক। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাক, সেই যেমনটি দাড়াতো দশ বছর আগে। কতবার জুতা মারতে, থাপ্পড় দিতে চেয়েছি,, তবুও দাড়াতো। শুনেছি এখন আর লাল সাইকেল চালায়না সে, পালসার চালায়। নীল রঙের পালসার! কি জানি, হয়ত পালসার আর ফ্ল্যাটের মালিক হবে জানলে ওর ঐ লাল সাইকেলের ক্যারিয়ারে চড়ে কতই না ঘুরতাম!
আজ আমার অনেক ইচ্ছে......শুধু ইচ্ছে পূরণের প্রদীপ নেই...................
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।