শুভ্র
চিঠির জবাব দিয়েছ, যেগুলো প্রশ্ন হিসেবে লিখিনি সেগুলোরও। তোমার অনেক কথার অনেক উত্তর দিনে ৫০ বার আমার হাতে কাগজ কলম ধরিয়ে দিয়েছে জোর করে। অবশেষে তাদের কাছে হার মেনে লিখতে বসলাম।
তার আগে একটা গল্প বলি। কাল রাতে, অনেক রাতে----- ঘুমের ভেতর শুনলাম সেই স্বপ্নের ফেরীওয়ালা ফিরে এসেছে। আমার ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে ডাকছে " স্বপ্ন নেবে গো, স্বপ্ন?"। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর ঘাড় ধরে জিজ্ঞেস করলাম " সেদিন যে পাঁচ পয়সা ফাঁকি দিয়ে গেলি, তার কি হবে রে?" সে হেসে বললো "সেই ক্ষতিপূরণ দিতেই তো এলাম গো"। ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘোর অন্ধকার, নিঝুম রাতে মনে হল বুকটা বড্ড খালি, বড্ড বেশি খালি।
সেদিন শুনলাম মাহমুদ স্যার তার বউকে ডিভোর্স দিয়েছে। ভাবতে পারো? কত আহ্লাদ করে ক'দিন আগেও বউয়ের গল্প কোরতো সবার কাছে, যেন তার মত সফল মানুষ এই জগতে বড়ই কম!!!!! আচ্ছা বলতো শুভ্র, হাঁটু মুড়ে একদিন যার সামনে নত হয়ে তোমরা হাত পেতে ভিক্ষা চেয়ে বল " will you marry me?" তাকেই আবার দু'দিন পর সামান্য কারনে হাঁটুর নীচে চলনক্ষম পায়ের পাতা দিয়ে লাথি দিয়ে জীবন থেকে বিদায় কর কিভাবে?
চিঠির জবাবে এক জাগায় লিখেছ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। শুভ্র আমার ঢের সারা অপবাদ আছে। যেমন ধর আমি জেদী, আমার নাকের ডগায় রাগ চড়ে থাকে সর্বদা, স্বার্থপর আরও কত কি! কিন্তু অপরকে বিশ্বাস করার বেলায় আমার কৃপণতা আছে এ অপবাদ আজ অবধি কেউ দেয়নি!!
তুমি অনেক কথাই হাসি ঠাট্টার ছলে বলে ফেল, আমি মানা করি। কেন জানো? তোমার কথা গুলোই আমাকে মনে করিয়ে দেয় একদিন আমার সব ছিল। অনেকে ভাবে, আমি বোধ হয় নিজেকে নিয়ে বড় বেশি ভাবি, আমার চেয়ে কত দুঃখি মানুষ আছে জগতে! কিন্তু কি কোরবো বল, যার নিজের সংসারে টানা পোড়েন চলে সে কি অন্যের সংসারের খোঁজ নিতে পারে?
সেদিন বাসায় রওনক এসেছিলো, আমি ওকে নীচে এগিয়ে দিতে গেলাম, বাড়িওয়ালার বড় মেয়েটা এমন করে তাকালো যেন জগতের সবচেয়ে ভয়ানক কোন অন্যায় করেছি আমি। পরে নীপা বৌদীকে নাকি বলেছেও। কি জালা বলতো! আমি ভুলতে চাইলেও কেউ আমাকে ভুলতে দেয়না আমার অতীত!!
বড় ঘেন্না ধরে গেছে আমার সব কিছুর প্রতি। আমার অতি-আবেগী মনে বোধ হয় সব কিছুর পতিক্রিয়া টা বেশি বেশি হয়। মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই আমার সবথেকে বড় অপরাধ যারা বিবেচনা করে রেখেছে তাদেরকে এক হাত দেখে নেবার খুব সখ আমার!! জানি সে আমি কোনদিন পারবো না। তাই চুপ করেই সহ্য সীমার একপ্রান্তে বসে থাকি! তোমার অশায় মনের আকুতি, ঐ লাইন ২ টি তে বড্ড হাসি পেল আমার " ঈশ্বর এত দায়িত্ব যে কেন দিল? নিজের ইচ্ছে মত কিছুই করতে পারিনা!" দায়িত্ব পালন করেও ইচ্ছেপূরন করা যায় শুভ্র! শুধু যথাযথ ইচ্ছেটা থাকতে হয়। আমরা আমাদের একান্ত ইচ্ছেগুলোকে আমাদের মনের দ্বিধা আর দ্বন্দের মাঝখানে রেখে দেই, আর দোষ দেই বেচারা দায়িত্বজ্ঞানের!! আসলে সব কথার বড় কথা হল " আমার প্রয়োজন"। জগতে প্রয়োজনটাই বড়, নইলে পাবার যোগ্যতা কার কতখানি সে বিচারে তো অনেকের পাওয়ার খাতাই খালি থাকতো। প্রয়োজনেই তাই আদায় করে সবাই।
চিঠি দিয়ে তোমার মন খারাপ করে দেই আমি জানি। কিন্তু আমার চারপাশ টাতে না, হাসির উপাদান একেবারে নেই বলতে পারো! আমার চোখ দুটিতে বোধ করি শুধু ভাঙ্গনের দৃশ্যই ধরা পড়ে! শুভ্র, তুমিও চলে যাবে দেশের বাইরে, আমিও সুযোগ পেলেই যাবো। কত স্বার্থপর হয়ে গেছি আমারা তাইনা? এই অভাগা দেশটা ছেড়ে পালাবার জন্য কত ফন্দী ফিকির করি।
কি যে হাবি জাবি লিখছি আজ!! আরও কথা ছিল, পরের বার নিশ্চয় লিখবো। ভালো থেকো, ইচ্ছেমতি কে জিজ্ঞেস কোরো, তার যদি পূর্ন সম্মতি থাকে তো দায়িত্বের বোঝাটা গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে ইচ্ছেমতির পুজোটাও পারলে দিও একবার!
ভাল থাকার শুভকামনায়
সুমনা