শুভ্র
কত দিন বলেছ তোমাকে লেখার জন্য, কিন্তু যন্ত্রের যুগে মন্ত্র পড়তে ভাল্লাগে না। রোজ রোজ কাগজ কলম নিয়ে বসি লিখবো মনে করে।ঐ পর্যন্তই, লেখা আর হয়ে ওঠেনা কিছুতেই! তারপর? কেমন আছো বলো?
কি লিখবো আজ তোমাকে সেই ভাবছিলাম বসে বসে। হঠাৎ মনে হল যে কথাটা আমি কিছুতেই তোমাকে মুখে বলতে পারিনা সেটাই না হয় লিখে দেই। তুমি প্রায়ই বল আমি তোমাকে একদমই পছন্দ করিনা, তুমি ভাল মানুষ নও এমন সম্ভাবনা নিয়েও কথা বল। শুভ্র, খারাপ মানুষরা যদি তোমার মত হয়, তবে তাতে আমার অরুচি আছে সে আমি জোর গলায় কিন্তু বলতে পারবো না! তোমাকে উপেক্ষা করবার সখও আমার নেই, সামর্থও না। কিংবা তোমার বৈশিষ্ট্যে আমার কোন ভয় বা আপত্তির কারন সে ভাবাও নিষ্ফল! ভয় যদি কিছুমাত্রও থাকে সে নিজেকে নিয়ে। বড্ড লোভী আমি। বড্ড লোভী।
ছোট বেলা থেকেই আমি কেমন উল্টো স্বভাবের। যে পরিস্থিতিতে যেমন হওয়ার কথা আমি তার বিপরীত দিকে চলি। বাবা-মায়ের অসূস্থ দাম্পত্য দেখে সন্তানরা ঘর-সংসারের উপর বিতৃষ্ণ হয়ে পড়ে আর আমার হল উল্টো টা। বাবা মায়ের তর্ক যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পেতে চোখ বন্ধ করে ভাবতাম। ভাবতাম ঠিক না, লিখতাম মনের খাতায়, সুন্দর সুন্দর গল্প। সেই গল্পের নায়িকা হতাম আমি। আমার বিপরীতে যে মানুষ টি থাকতো সে একটুও কষ্ট দিতনা আমাকে, আমিও মহা সুখে ঘরকন্না করতাম। সেখানে মায়ের মত আমাকে কখনও কাঁদতে হয়নি জায়নামাজে বসে, তাকেও বাবার মত মুখ গোমরা করে বসে থাকতে হয়নি। আমি রোজ রাতে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতাম। কত সামান্যতে কত মান অভিমান করেছি দু'জন, আবার অল্পতেই কেঁদে কেটে মিটিয়ে নিয়েছি। কল্পানার সেই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কতদিন যে বাস্তবে কেঁদে বুক ভাসিয়ে বালিশ ভিজিয়েছি তার হিসেব করতে বসলে বুঝি শেষই হবেনা। আমার পুতুলের বাক্সেও ছিল আমার এবং আমার সেই মানুষটার দুটি অবয়ব। একা একা বিড় বিড় করে পুতুল গুলো নাড়াচাড়া করতাম আর প্রেমালাপের বুলি ফোটাতাম দুটি নিথর কাপড়ের কাঠামোতে!
যেদিন সত্যিকারের সাঁনাই বাজলো আমার বাড়ির উঠোনে, সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম "বোধ হয় নির্ঘুম চোখে মিছে স্বপ্ন দেখার দিন শেষ হল আমার"। শেষ হয়েছিল ঠিক। তবে পরের সেই স্বপ্নগুলো সবই ছিল দুঃস্বপ্ন! চোখমুখ বুজে কাটলো অনেকটা দিন। আবার একা হওয়া। আবার নির্ঘুম চোখে স্বপ্ন বোনা।
সবই তো জানো তুমি, তবুও বলছি। আবার একদিন ঘরের সামনে ডুগডুগি বাজিয়ে এক ফেরিওয়ালা এল, স্বপ্ন বেঁচতে। বোকার মত পাঁচ পয়সায় কিনে নিয়ে এলাম স্বপ্ন। ভালবাসার মূল্যমান তো এখন পাঁচ পয়সাই! ঘরে নিয়ে ঠোঙ্গা খুলে দেখি সব টাই মাটির ঢেলা!!! ব্যাস আর পারলাম না। একেবারে গড়িয়ে পড়লাম। ঐ পাঁচ পয়সাই যে সম্বল ছিল আমার!!
তাই নিজেকে দূরে রাখি তোমার থেকে। ঐ যে বললাম লোভ!! যদি লোভ হয় আবার! যদি বলে বসি " সম্রাজ্ঞী কর আমায়, একটা ছোট্ট রাজত্ব দাও, হলামই বা একাবার পরাজিত রানী, লোকে হয়ত বলবে দেওলিয়া রানীর প্রজা তুমি, বলুক না, আমার জন্য না হয় এটুক করলে। একজীবনে কি মানুষ সব পায়? তুমি না হয় পরাজিত রানীরই প্রজা হলে!!" তাই দূরে থাকি। কি লাভ বল। বিষয়াসক্তি আমার কোনকালেই ছিলনা, আজও নেই। চাই শুধু ঐ পাঁচ পয়সার স্বপ্ন। সে যে বড় দূর্লভ আজ, কে জানতো সে কথা?
অবাক হোচ্ছ? এই সত্য গুলো বড্ড কঠিন। আমি কিন্তু সামলে আছি এখন। কিন্তু কে জানে কখন আবার নির্লজ্জের মত লোভের থলিটা নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে বসি "থলি ভরে দাও"! এক জীবনে ঈশ্বর শুধু লোভই দিয়েছে আমাকে অথচ সম্বল দিয়েছে মাত্র পাঁচটি পয়সা!!!
ভাল থেকো,সময় পেলে জবাব দিও,স্রেফ কুশল জানিয়ে। বাকি যা কিছু বললাম সেগুলো কে প্রশ্ন হিসেবে নিওনা, তাই উত্তরও আশা করিনা।
সুমনা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৪২