সমু'দা,
কেমন আছিস?খুব অবাক হয়েছিস না?আরে আমিও এমনিই অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে আমি তোকে চিঠি লিখছি!হ্যা রে আমিই!এখন তোর কথা বল।তোর বউটা কেমন আছে রে?শুনেছি খুব নাকি লাজুক?!ইস্,তাহলে তো তোর খুব জ্বালা!হ্যারে তেমনি বোকা আছিস তুই,নাকি বুদ্ধি-সাদ্ধি কিছু হয়েছে?
ভাবছিস তোকে খুব মনে পড়ছে তাই চিঠি লিখতে বসেছি?মোটেও না।আমার বর টা যেন কেমন।শুয়েই ঘুম,ঘুমিয়েই নাক ডাকতে শুরু করে!সারাদিন কত কাজ করে,তাই ক্লান্ত থাকে। বড্ড গৃহস্থি কি না।এখনো নাক ডাকছে।তুই তো জানিসই ছোট খাটো শব্দেও আমার ঘুম হয়না।তাই ভাবলাম শুধু শুধু জেগে না থেকে তোকে একটা কিছু লিখি।কতদিন কোন যোগাযোগ নেই তোর সাথে।
খুব কি বুড়িয়ে গেছিস?মোচ রাখিস নি তো?ছি!ছি!।তাহলে আমার সামনে আসবিনা।তোর কি মনে আছে সেই দিন গুলো।কত্ত মজা ছিল, না রে?ইস কত বোকা ছিলি,মুখ ফুটে একটি বারের জন্যও কিছু বলিস নি।আমি ও একটা বোকার হদ্দ ছিলাম।কেন যে কিছুই বুঝলাম না।না বুঝেই ভালো হয়েছে।না হলে তোর মত একটা ভোম্বল রাম কে সারাজীবন সহ্য করতে হত।মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে হয়ত বলতি "চল পুকুর ঘাটে বসে চাঁদ দেখি"।ধ্যাত,এটা কোন কথা হল!আমার বর টা দেখ্ কত ভাল,৯টা ৫ টা অফিস করে সন্ধায় ফিরে এক কাপ চা,সাথে কুকিজ বিস্কিট।তারপর টেলিভিশন খুলে ২-৪টা নাটক বা সংবাদ।তারপর রাতে খাওয়া।যেদিন খুব ইচ্ছে হয়,বউয়ের সাথে আদিম খেলা তারপর দিব্যি ঘুম।সকালে আবার অফিস।ব্যাস!কি সুন্দর রুটিন মাফিক জীবন! আর তুই!!!!বড্ড বাঁচা বেঁচেছি বলা যায়।
কত কথাই যে মনে ভাসছে.......সেই যে শরতের সকালে পড়তে যেতাম ঘুম ঘুম চোখে।কি যেন নাম ছিল স্যার টার?! মনে পড়ছে না।তুই দৌঁড়ে আসতি আমাকে হেড়ো গলায় ডাকতে ডাকতে,তার পর পিঠ পিছে লুকানো কাগজ থেকে এক গাদা শিউলি ফুল আমার পায়ে ফেলে বলতি,"দেবীর অর্ঘ্য না দিলে আমার দিনটা কি করে ভালো যাবে" আমি হেসেই লুটোপুটি। "দুর,বোকা আমি কিভাবে দেবী হলাম,তোদের দেবী তো মাটি দিয়ে গড়া"!হি হি হি। তুই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতি "তুই বুঝবিনা,বুঁচি"। সত্যি বলছি,এই তোর মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি আমি কিছুই বুঝতাম ন।খোলা পায়ে হাঁটতে বড্ড ভাল্লাগতো আমার।শীতের দিনে যখন শিশির পড়ত ঘাসে,তখন।মনে আছে তোর, খুব ভোরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাঁটতে বেরোতাম দু'জন?তুই আগে আগে হাঁটতি যদি পথে কোন কাঁটা থাকে এই ভেবে।কতদিন কত কাঁটা দেখে তুই সোৎসাহে উঠিয়ে বলেছিস "দেখেছিস,আমি না দেখলে তুই ঠিকই পায়ে ফুটিয়ে কান্না জুড়ে দিতি" আমি হেসেই মরি তোর পাগলামি দেখে।মনে আছে তোর,ঐ যে একবার রীতু দের বাগানে বরই পাড়তে গিয়ে পড়ে গিয়ে আমার হাত কাটলো তুই কেঁদেই ফেললি,রেগেও গেলি ভীষন।সেই বুঝি প্রথম রাগ করেছিলি আমার উপর। বারে, আমি বুঝি জানতাম আমার হাতে চোট লাগলে তোর বুকে লাগে?!বর্ষার সময় যখন কদম ফুল ফুটতো তুই স্কুল ফাঁকি দিয়ে আসতি আমাকে ফুল দিতে।ইস্,কাকাবাবু কত মার দিত তোকে!ঠিকই কোরত!সেই যে সেইদিন বকুল ফুলের মালা গেঁথে নিয়ে এলি।তারপর পায়ে পারালি আমার,মল বানিয়ে।আমি বল্লাম "দূর বোকা, মালা বুঝি কেউ পায়ে পরায়?" তুই হেসে বললি "দেবীর অঞ্জলী পায়েই দেয়,বুঝলি বুঁচি?" আমি না বুঝেই হেসেছিলাম।আমি কি করে জানবো ওটা বকুল মালা ছিল না,ছিল তোর হৃদয়! তুই কতদিন বলতি একদিন সীঁদূর পরতে।আমি বারবার বলতাম"যাহ্,আমি কি হিন্দু? মা দেখলে মারবে"! তুই মুখ নীচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তি। জানিস সেদিন শুনলাম এক হিন্দু আর মুসলমান খুব লড়াই করেছে।তুই আমি তো লড়িনি কোনদিন! হিন্দু রা মুসলমান দের মারে কেন?তুই তো মারিসনি কখনও আমাকে।মুসলমান রা হিন্দুদের কেন তাড়িয়ে দেয় ড়ে সমু'দা?তুই কতদিন আমার পাশে বসে থেকেছিস আমি তো তোকে তাড়িয়ে দেইনি!আমার বিয়ের দিন অমন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিলি কেন রে? আমি জানি,সব উপহারের ভিড়ে ঐ যে বাক্স ভর্তি সীঁদূর আর আলতা ওটা তোর দেয়া।ঠিক বলেছি না?
এখন আর আমার চাঁদ দেখতে ভালো লাগেনা।কি সেকেলে ঘটনা! ছি! ভাগ্যিস আমার বর টা তোর মত হয়নি।আমি কত ভালো আছি তুই ভাবতেই পারবিনা।আমার শাড়ি আর গহনার হিসেব দিতে গেলে রাতটাই পার হয়ে যাবে!ঘর ভর্তি বিদেশী ফার্নিচার।আরো কত্ত কি! তোর ঘরে গেলে সমাজ ছাড়া,ঘর ছাড়া ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হত।খুব সুখে আছি আমি।সত্যি বলছি। তোকে খুশি করার জন্য না।মাসে মাসে নতুন শাড়ি আর সোনা চাঁদির গহনা পেলে কোন মেয়ে খুশি হবেনা বল্!তুই গোটাকতক কবিতা,চাঁদের জ্যোৎসা আর আজলা ভরে ভালবাসা ছাড়া কি দিতে পারতি আমায়?শুনলাম তোর মেয়েটার নাম রেখেছিস পারমিতা?আমার নামটা মেরে দিলি?চোর কোথাকার!আমাকে যদি এভাবে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সাহস তোর হত!
এই, তুই আমার এত কষ্টে লেখা চিঠিটায় চোখের জল ফেলে ভিজিয়ে দিলি?!ধ্যাত,কিচ্ছু হবেনা তোকে দিয়ে।কিচ্ছু না।কিছু হয়ও নি।
একবার আসবি সমু'দা আমাকে দেখতে?সত্যি বলছি মারবো না তোকে।খুব যত্ন করে খাওয়াবো তোকে।আসবি?!!
ভাল থাকিস রে সমু'দা।ঘুমাতে যাই।অনেক রাত হল।চোখ দুটো ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।দূর,কাঁদছি ভাবিস না কিন্তু।ঘুম লেগেছে তো চোখে,তাই।
উত্তর দিস সময় করে।
তোর বুঁচি
মিতা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:১২