আটপৌরে কথার ঝাপি খুলে বসছি তাই আটপৌরে কথন । ঠিক লেখার মতো কিছু ভেবে যে বসেছি তা নয়। টাইপ করে যাচ্ছি, যা কল্পনায় ধরা দিবে তাই নিয়েই হবে আমার শব্দের বেসাতি।
অনেকদিন পর রুদ্ধশ্বাস কিছু মুহূর্ত কাটালাম আজ। বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয় দেখতে দেখতে। দারুণ কিছু স্মৃতি হয়ে থাকবে। অভিনন্দন বাংলাদেশ দলকে।
ক্রিকেট দেখতে দেখতে খেয়াল গেল আজ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। আমার আজ আবার ছুটির দিন। খেলা দেখবো বলে আগেভাগেই ভাত খেয়ে নিলুম। আয়েশ করে দুপুরের ভাত খাওয়ার ফল ঠের পেলাম একটু পর, যখন খেলা দেখতে বসে ঢুলুনি আসছিল। খেলা দেখার চাইতে আমার মনে হল ঘুম দেয়াটাই মঙ্গল হবে। এবং মঙ্গলজনক কাজটা সেরে নিতে একটু পর স্বপ্নের ঘোড়া ছুটিয়ে ঘুমরাজ্যে।
ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ পড়লাম। একটা ফাইনাল প্রজেক্টের পেপার।
পড়া শেষে কিছুক্ষণ অনলাইনে আলাপন সেরে নিলুম :-)। তারপর একটা মুভি নিয়ে বসলুম। জনপ্রিয় ইরানিয়ান পরিচালক মাজিদ মাজিদীর, "The song of sparrows"। দেখা শেষ করে একটা ভাবনা এলো মনে। এই যে হলিউডে এত টাকা খরচ করে এতো সব মারদাঙ্গা মুভি বানাচ্ছে, কই বানাক দেখি এমন একটা মুভি যেটাতে এমন করে জীবনের গীত গাইছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, হলিউড এই এতো টাকা খরচ করে সিনেমা নামক এমন এক একটা বিশালাকায় মূর্তি বানাচ্ছে যেটাতে আর সব আছে কিন্তু প্রাণটাই নেই। মুভি দেখে উঠে যে শান্তি, স্নিগ্ধতার এমন একটা রেশ থেকে যাওয়া, জীবনকে নতুন রুপে উপলব্ধি করা, প্রাণের আকাশে সকাল বেলাকার পাখির কিচির মিচিরের মত এমন আনন্দপূর্ণ ডাক, শেষ কোন হলিউড মুভি দেখে এমন সব উপলব্ধি হয়েছে মনে পড়ছে না। আরেক জনপ্রিয় ইরানী পরিচালক মোহসেন মাখমালবাফ হলিউডি মুভির সাথে ইরানী মুভির তুলনা করে বলছিলেন, মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে যে একটা নিবিড় সম্পর্ক সেটি ইরানিরা যেরকম তুলে ধরতে পারে হলিউড তা পারে না। যাক সে কথা, মুভি টা নিয়ে আর বেশী কিছু না বলি। আমি নিজে এখনো সেটি হজম করছি। আগ্রহীরা চাইলে এইখান থেকে দেখতে পারেন -
Click This Link
কাল অন্য একটা ইরানী মুভি দেখছিলাম, নাম "About Elly"। এই মুভি টা কি করে পেলাম এখন আর মনে পড়ছে না। তবে এও আরেকটা চোয়াল ঝুলিয়ে দেয়া মুভি। একেবারে উড়াধুরা যাকে বলে। প্রাণকে এরা এমন করে ফ্রেমে বন্দী করে যে বিস্মিত হয়ে যেতে হয়।
পাখির কিচির মিচিরের কথা লিখতে যেয়ে একটা ঘটনা মনে পড়লো। সেদিন সকালে উঠে শুনি আমার জানালার বাইরে কাক ডাকছে! অবাক করার মতোন ঘটনা। এখানে কাক এর আগে কোনদিন দেখেছি বা কাকের ডাক শুনেছি বলে মনে পড়ে না। ঠিক দেশের কাকের মতোন কা কা করে ডেকে চলেছে। দেশে হলে ঠিক ঠিক 'হতচ্ছাড়া পাখি' বলে গাল পেড়ে উঠতাম, কিন্তু এই কাকের কা কা শুনে মুখে হাসি চলে এসেছিল।
মাজিদ মাজিদীর মুভিটা দেখা শেষ করে রবিঠাকুরের একটা উপন্যাস পড়তে পড়তে রাতের খাবার সাড়ছিলুম। একটা কান্ড দেখে আমার মুভি টা দেখার পর যেরকম সুখের একটা অনুভূতি হয়েছিল, তেমনি কিছু উপলব্ধি হল। ঘটনা হচ্ছে আমার ভাগ্নে, সে তার ছোট দুটি পায়ে মেপে মেপে দরজার কাছে গিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যাপার কি! একটু পরেই বুঝতে পারলাম কি ঘটতে চলেছে। ভাগ্নে আমার সবচে লম্বা দৌড়টা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে তার বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে তাই ওমন দরজার সাথে আঁটসাঁট হয়ে দাড়িয়ে থাকা। তাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, দৌড়ে যেতে দেখে এবং একটু পর পাশের রুমে তাদের বাপ-ছেলের হাসির শব্দ শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমি ঠিক ঠিক যেন ম্যাট্রিক্সের নায়কের মত স্লো মোশনে একে একে জীবনের সব রুপগুলো অবলোকন করে চলেছি।
এ কি কান্ড! আটপৌরে কথন লিখতে বসেছিলাম, কিন্তু উপরে দেখি ঠিক ঠিক আটটা প্যারা হয়ে গিয়েছে :-)। অতসব খেয়াল করে অবশ্য লিখছিলাম না। উপরের প্যারা টা শেষ করে কথাটা মনে হওয়ায় গুণে দেখি ঠিক ঠিক আট :-)। যাক আমার শব্দের ঝাঁপি নিয়ে যাই এবার বিক্রি করতে (মানে পোষ্ট করতে )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:০৬