somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানের অর্থনীতি কি সঙ্কটাপন্ন?

০২ রা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মধ্যপ্রাচ্যের এক বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হল ইরান। দেশটির অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর। দেশটি বর্তমানে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করছে। ১৯৭৯ সালের ১লা এপ্রিল আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনির নেতৃত্বে ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটি পশ্চিমা দুষ্টচক্রের হেনস্তার স্বীকার হতে থাকে। একের পর এক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সে দেশের কূটনৈতিক বহিষ্কার, অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করে রাখার চেষ্টা ইত্যাদির মাধ্যমে ইরানকে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু দেশটির নের্তৃবৃন্দের প্রবল মানসিক দৃঢ়তার কারণে এসব বাঁধা উপেক্ষা করে অর্থনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে ইরান স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সহায়তায় বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক ইরানের ওপর রেজুলেশন জারি করছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলাদাভাবে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোপ আরোপ করেছে। সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরো কঠিন করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ছাড় গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরান যে ৯টি দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি করছে, সেসব দেশ থেকে বিক্রিলব্ধ অর্থ ইরানের কাছে সরাসরি যেতে পারবেনা। ওইসব দেশেই তা জমা রাখতে হবে। বিক্রিলব্ধ অর্থ শুধু ওইসব দেশ থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রেই ইরান ব্যবহার করতে পারবে। এমনিতেই পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে গত ৯ মাসে দেশটির তেল বিক্রি থেকে আয় ৪৫ শতাংশ কমে গেছে। মার্কিনীদের নতুন এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান আরও সংকটে পড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার এক রিপোর্টে দেখা যায়, ইরানের দৈনিক জ্বালানি তেল রপ্তানি এ বছরের জানুয়ারিতে সম্ভবত ১০ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে গেছে। অথচ ২০১১ সালের শেষ দিকে দেশটি দৈনিক প্রায় ২২ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করেছিল।
তবে সম্প্রতি রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যতই কঠোর হোকনা কেন তা ইরানের অর্থনীতিতে একবারে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারবেনা। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলী সাবানি বলেন, ‘ইরান সরকার আগে থেকেই অর্থনৈতিক যুদ্ধ মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল। তাই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার পরও এর প্রভাব ততটা পরবেনা। ইরানের অর্থনীতি এখনো সচল রয়েছে, এখনো ভেঙ্গে পড়েনি।’ ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হতে পারে তা বুঝতে পেরে সরকার আগে থেকেই পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছিল। এর অংশ হিসেবে দেশটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং মুঠোফোন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ইরানের অর্থনীতি সচল রাখতে স্বর্ণ রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
কয়েকমাস আগে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের দাম দুই-তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছিল। এ সময় বৈদেশিক বাণিজ্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। রাজপথে বিক্ষোভও করেছিল। তবে তা সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করেছে ইরান সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য, ঔষধসহ জরুরী প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানিকারকদের কাছে কম দামে ডলার বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। আবার যারা বিদেশ থেকে বিলাসবহুল পণ্য আনতে চান বা বিদেশে যেতে চান, তাদের সাধারণ মুদ্রা বাজার থেকেই চড়া দামে ডলার কিনতে হয়। এভাবে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে ডলারের বিরুদ্ধে রিয়ালের দাম কমলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে ইরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যেভাবে এই ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে, তাতে জ্বালানি তেল রপ্তানি আরও হ্রাস পেলেও ইরানকে ভয়াবহ সংকটে পড়তে হবেনা। ইরানি বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ মেহরদাদ এমাদি বলেন, ‘ইরান অন্তত ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ রেখেছে, যার পরিমাণ নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সীমারেখা থেকে অনেক বেশি।’ আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর গত বছরের অক্টোবরের এক হিসাবে দেখা যায়, ইরানের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দেশটির জিডিপির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা কোন সরকারের জন্য তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। তেল সম্পদের প্রাচুর্য্যতা দেশটিকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তাছাড়া ইরানের প্রাচীন ঐতিহ্যও অনেক গৌরবের। রেজা শাহ পাহলভীর আমলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক কার্যক্রম শুরু করেছিল। তখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইরানকে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার জন্য তৎকালীন ইরানকে সহায়তা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর খোমেনি সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সাথে ইরানের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে। তখন হতেই পশ্চিমাবিশ্ব ইরানের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে, যা আজও বিদ্যমান। কিন্তু এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও ইরানের অর্থনীতি একবারে ভেঙ্গে পড়েনি বরং এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ইরান যদি তার পারমাণবিক উচ্চভিলাষ পরিত্যাগ করে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকমাত্রায় মনোযোগী হত, তাহলে হয়তো আজ তারা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর কাতারে পৌছাতে সক্ষম হত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হামিদ ভাই দেশ ছাড়ছে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:৫৩

hahaziz1957-1746715922-38fdac3_xlarge.jpg]







সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী শিক্ষা ইসলামের বিকলাঙ্গ শিক্ষা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৬



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রদের কারা মাইনাস করতে চায় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:১৭


আজ তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম 'কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা' শিরোনামে ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, ইন্টেরিম সরকারের ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। তাই ইচ্ছা করলেই ছাত্র-জনতার সকল দাবী পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধুমাত্র চোর এবং কাপুরুষরাই রাতে আক্রমণ করে

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৩৪



ভারতের সম্প্রতি হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সম্প্রতি একটি আবেগঘন বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন "শুধুমাত্র চোর এবং কাপুরুষরাই রাতে আক্রমণ করে। যদিআ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নবীজির জন্মের আগে আরবে গজব অবস্থা ছিলো

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০২



নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×