প্রেমের ফাঁদ পাতা মোবাইলে।
প্রেম তো হবেই। তাকে কি আর আটকে রাখা যায়? তাকে বাধা দেওয়াও দায়। তবু প্রেমেরই নামে নিজেকে হারায় কত মেয়ে। কখনো অন্যের হাতে, কখনো নিজেই হয় নিজের ঘাতক। ভালোবাসা দিবসে প্রেম টিকে থাকুক, প্রেমের ফাঁদ নয়।
'সম্ভবত বেলা ১২টা বাজে তখন। আমার পরীক্ষা ছিল, তাই পড়ছিলাম। সুমি আপু তৈরি হয়ে মাকে বলে বেরিয়ে গেল। আমাকে বলে গেল, রুনি, আমি ঊর্মিকে নিয়ে বিউটি পার্লারে যাচ্ছি। দেখবি, আজ খুব সুন্দর করে সেজে আসব। আপু আর আসেনি'... বলতে বলতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে ওঠে রুনির কণ্ঠ। রুনি সুমির ছোটবোন। ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই।
আফরোজা আক্তার সুমি ও আফরোজা আক্তার ঊর্মি দুই বান্ধবী। দুজনেরই বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে পড়ালেখা করেছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে উভয়েই জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। তাদের দুই 'প্রেমিক' শামীম হাওলাদার (৩৬) ও মনিরুজ্জামান ওরফে হলুদ মিয়া (৩৪)।
সুমির সঙ্গে মুঠোফোনে শামীম হাওলাদারের সখ্য গড়ে ওঠে। শামীম বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। চট্টগ্রামের লালখান বাজারে একটি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানের পরিচ্ছন্নতা কর্মী। কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক তৈরির সময় সে তার পরিচয় দেয় ইলেকট্রিক কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে। তার বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কাওখারা গ্রামে।
একইভাবে আফরোজা ঊর্মির পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনের কনস্টেবল (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) মনিরুজ্জামান ওরফে হলুদ মিয়ার সঙ্গে। হলুদ মিয়া নিজেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেয়। তার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হাটবারেঙ্গা গ্রামে।
এসব ক্ষেত্রে যা হয়, কিছুদিন মুঠোফোনে আলাপের পর পরস্পরের সঙ্গে দেখা করে তারা। এ সময় শামীম ও মনিরুজ্জামানের মধ্যে যোগাযোগ হয়, তারা একে অপরের ফোন নম্বর নেয়। সত্য বেশিদিন চাপা থাকে না। অচিরেই তাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে সুমি ও ঊর্মি। মানসিক টানাপড়েনের সৃষ্টি হয় দুই বান্ধবীর মধ্যে। তারা বুঝে উঠতে পারে না, এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ঠিক হবে কি না।
ওদিকে পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সুমি ও ঊর্মিকে খুন করার পরিকল্পনা করে শামীম ও মনিরুজ্জামান। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দুই বান্ধবীকে কিশোরগঞ্জের একটি বিউটি পার্লার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে তারা। মিথ্যা পরিচয়ে কারওয়ান বাজারের ওয়েস্টার্ন গার্ডেন হোটেলে ৩০৬ ও ৩০৭ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেয়। রাতে প্রেমিকাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কক্ষ দুটিতে তালা দিয়ে খাবার আনার কথা বলে হোটেল থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর হোটেলের দুই মালিক খালেক ও রানা এবং ব্যবস্থাপক আবুল মিয়া খুনের কথা পুলিশকে না জানিয়ে লাশ দুটি সব্জির ঝুড়িতে ভরে, একটি ঝুড়ি মগবাজার হাতিরঝিলের পানিতে ফেলে দেয়। এবং অপর ঝুড়ি তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশের ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়।
ওদিকে সুমি ও ঊর্মি নিখোঁজ হওয়ার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই ঊর্মির বাবা এবং ২২ জুলাই সুমির বাবা স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। একপর্যায়ে সুমির বাবা আবু বাক্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মুঠোফোনে আলাপের সূত্র ধরে শামীম হাওলাদারসহ চার জনকে চিহ্নিত হরেন। একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর তাদের আসামি করে কিশোরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। কিশোরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ তদন্তের পর ২০০৯ সালের ৭ মার্চ, আদালতে শামীম হাওলাদার ও মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এবং আসামি দুজন ধরা পড়ে।
পুলিশ যা করতে পারে
কারওয়ান বাজারের হোটেল মালিক কর্তৃক লাশ গুম করার চেষ্টা এবং হত্যা মামলা প্রসঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম শিবলী নোমান জানান, 'অজ্ঞাত দুই তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রমনা ও তেজগাঁও থানায় একটি করে মামলা দায়ের হয়। তবে মূল মামলা হয় কিশোরগঞ্জ থানায়, নারী ও
শিশু নির্যাতন দমন আইনে। সেখানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে। আসামিরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে।' পুলিশের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ মুঠোফোনে উত্ত্যক্তের অভিযোগ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযুক্তের সংযোগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতারণার অভিযোগ থাকলে প্রতারকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। তবে অবশ্যই প্রথমে অভিযোগ পেতে হবে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করা হয় না।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের করণীয় সম্পর্কে একটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের 'অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক ইমপ্লিমেনটেশন' এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নূর-ই-ইসলাম বলেন, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মোবাইল প্রতিষ্ঠানের আলাদা করে কিছু করার থাকেনা। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ গ্রাহক। তবে কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের নম্বর ব্যবহারের প্রমাণ দেখিয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে প্রতিষ্ঠান 'কল রেকর্ডিং' ও 'কল ট্যাগের' ব্যবস্থা নিতে পারে। পরে নম্বর শনাক্তকরণের মাধ্যমে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা দরকার।
প্রযুক্তির সৃষ্টিগুলো মানুষের মঙ্গলের জন্য করা হয়। তার ভুল ব্যবহার হলেই তা অনাসৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠে। প্রেম হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু সে প্রেম যেন আপনাকে সমৃদ্ধ করে, শূন্য নয়।
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন