somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা মামলার লিগ্যাল টীমের উপর একটি বিশ্লেষণ

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলুন দেখি এই মামলার দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে বিচারক মনোনয়নে PCA-CPA এর নিয়মাবলী কি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী বিবাদকারী উভয় দেশ একজন করে অরবিট্ট্রেটর নিয়োগ দিতে পারে। ভারত নিয়োগ করে ভারতীও ডঃ প্রেম্মারাজু শ্রিনিবাস রাও। আর বাংলাদেশ নিয়োগ দেয় ঘানার বিচারপতি থমাস মেনসা, যিনি ১৯৬২ সালে আইন এর স্নাতক লাভ করেন। বয়স নিদেনপক্ষে ৮০ এর কাছাকাছি। মামলা চলাকালে ভারতে্র আইনজীবী ডঃ রাও দুইবার আদালতের প্রসিডিংসের এর উপর আপত্তি উত্থাপন করলেও জাজ মেনসা কোন আপত্তি উত্থাপন করেন নাই। এভাবে কি মামলা লড়েছেন তিনি? কেন আমাদের দেশে কি এমন কোন যোগ্য লোক ছিলেন না যাকে নিয়োগ করলে সে জানপ্রান দিয়ে নিজ দেশের জন্য লড়াই করত? কেন ডঃ কামাল হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হোল না, যিনি ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আওয়ামি লীগের হয়েও আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ পেয়ে আন্তরজাতিক আদালতে দায়েরক্রিত তেল-গ্যাস সংক্রান্ত মামলায় জয়লাভ করেন। বিএনপি জাতিও স্বার্থে নিজের দলের তোয়াক্কা না করে বিরোধীদলীয় ডঃ কামাল হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছিলো, যেটা খুবই জরুরি ছিল।

এবার দেখি প্রধান সলিসিটার হিসাবে কাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সলিসিটারের হিসাবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয় তিনি ইরানের বংশদ্ভুত প্রফেসর পায়াম আখাভাম। ধর্মীয় ভাবে বাহাই। তার নিজস্ব প্রোফাইল এ লেখ আছে "Professor Akhavan teaches and researches in the areas of public international law, international criminal law and transitional justice, with a particular interest in human rights and multiculturalism, war crimes prosecutions, UN reform and the prevention of genocide." অর্থাৎ ইনি কার্যত একজন মানবাধিকার আইনজীবী। এবং প্রচুর মানবাধিকার কেস লড়েছেন। সেই তুলনায় মেরিটাইম কেস লড়েছেন মাত্র তিনটি, আর তার মধ্য থেকে দুটোই লড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। একটি হোল বাংলাদেশ-মায়ানমারের সমুদ্রসীমা বিষয়ক মামলা, যার রায়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু হাইড্রকার্বন ব্লক মায়ানমারকে আংশিক এবং পুরাপুরি ভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তবুও হাসিনা সরকার তাকে দ্বিতীয় কেসটি লড়বার জন্য নিয়োগ দেয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য তিনি ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন এর তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে এ শেখ হাসিনার মুক্তির কেসেরও রিপ্রেসেন্ট করেন। এমন একজন মুলত মানবাধিকার আইনজিবিকে কেন সমুদ্র সীমা বিষয়ক মামলার ব্যাপারে নিয়োগ দেয়া হোল তা পুরাপুরি ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

এবার চলুন দেখি যে ফার্মটি বাংলাদেশের কাউন্সেলর এবং এডভাইসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়ে ছিল। ফার্মটির নাম ফলী এলএলপি। এই ফার্ম এর সাথে বাংলাদেশের চুক্তিতে এমন কোন ক্লস ছিল না যাতে স্পষ্ট করে লেখা ছিল যে ফার্ম এর পক্ষ থেকে কোন ভারতীও বংশদ্ভুত কে এই কেসে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বা এই কেসের ব্যাপারে ভারতীও বুংশদ্ভুতদের কাছ থেকে সর্বচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। যার প্রমান স্বরূপ আমরা দেখতে পাই ভিভেক কৃষ্ণামূর্তি নামক একজন কাউন্সেলর ফলীর বাংলাদেশ টীমে ছিল। আর ভারতীয়দের লব্যিং আর ইনফ্লুএন্স এর উপর কার কোন দ্বিধা থাকা উচিৎ নয়। কি নিশ্চয়তা আছে যে কোন ইম্পরট্যান্ট তথ্য পাচার হয়ে যায় নি? হতে পারে হয় নি, কিন্তু তেমন ব্যাবস্থা তো রাখা হয় নি যেখানে নিসন্দেহে বলা যায় যে গোপনীয় তথ্য বিপক্ষের হাতে চলে যায় নি।

মামলার রিপোর্টে দেখ যায় যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিল উকিল, উপদেষ্টা, এবং পরামর্শদাতা। পুরা দলে ছিল ৮ জন বাংলাদেশি আর ১৫ জন বিদেশি।এই আট বাংলাদেশির মধ্যে ছিল দিপু মনি, এডমিরাল খুরশেদ আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৫ জন, আর আইন মন্ত্রণালয়ের একজন। এদের মাঝে মাত্র ৩ জন টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ছিল।

ভারতের পক্ষ থেকে ছিলো উকিল, প্রতিনিধি, উপদেষ্টা ছাড়াও ৭ সদস্যের এক বৈজ্ঞানিক আর কারিগরিক বিশেষজ্ঞের টীম, এবং ২ সদস্যের এক রিসার্চ টীম। পুরা দলে ছিল ১৬ জন ভারতীও আর ৭ জন বিদেশি।

আপাদদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের টীম অনেক বেশি প্রস্তুত আর শক্তিশালি ছিল। মামলার ময়দানে আমাদের প্রস্তুতি আর শক্তি পর্যাপ্ত না থাকায় আমরা এই মামালায় দক্ষিণ তালপট্টি আর তৎসংলগ্ন জায়গা, আর কিছু গ্যাস ব্লকের পূর্ণ মালিকানা হারিয়েছি। আমাদের সমুদ্র আজ সি-লকড। এই সমুদ্রসীমা মামলায় বাংলাদেশের পরাজয়ের অন্যতম মুল কারন অপর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক/কারিগরিক বিশেষজ্ঞ/রিসার্চ টীম। সঠিক আইনগত টীম এর সাথে সঠিক কারিগরি টীম মামলার ময়দানে থাকলে আমাদের আজ এত কিছু হারাতে হত না।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×