বাংলাদেশের সাথে ভারত আর মায়ানমারের অমীমাংসিত অফশোর ব্লক ছিল ২৮টি, যা ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোর্টে আর্জি জানায়। পরবর্তিতে ২০১২ সালে এর মধ্য থেকে আওয়ামী লিগ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১৯ টি ব্লক ভারত আর মায়ানমারকে ছেড়ে লাস্ট রাউন্ড অফ বিডিং থেকে বাদ দিয়ে দেয়। অত্যন্ত গোপনে মামলার নথি থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এই ১৯ টি ব্লকের অস্তিত্ত্ব। সেগুলো হলো DS-08- 09, 10, 11, 13, 14, 15, 16, 17, 18, 19, 20, 22, 23, 24, 25, 27, 28 , SS-01 and SS-05. সুতরাং ১৯/২৮*১০০= ৬৮% ব্লক আওয়ামী লীগ সরকার আগেই ভারত ও মিয়ানমারের হাতে তুলে দেয়। বাকি রইলো মাত্র ২৮-১৯= ৯ টা ব্লক I এই ৯ ব্লকের অবস্থান ভারত আর বাংলাদেশের delimitation লাইন বরাবর । যার ভৌগলিক অবস্থান ম্যাপ এ দেয়া আছে । PAC এর delimitation লাইন এই ৯টা ব্লক কে ভারতের দিকে কিছুটা ছাড় দিয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে । PCA এর রায় অনুযায়ী এই "boundary should take the form of a 12 nautical mile long geodetic line continuing from the land boundary terminus in a generally southerly direction to meet the median line at 21° 26′ 43.6′′N; 89° 10′ 59.2′′E." যি রেখা টানলে দেখা যায় ৯ টা বিতর্কিত ব্লকের কিছু অংশ ভারতের। যাও বাংলাদেশ দাবি করলো, তাও এখন ভাগাভাগি করতে হবে । একই ভাগাভাগির রায় ITLOS দিয়েছিল বাংলাদেশ-মায়ানমারের ক্ষেত্রে তিনটি ব্লকের ব্যাপারে । সুতরাং hydrocarbon ব্লক এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্দেহাতীত ভাবে হেরেছে ।
আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের দাবি ছিলো সমুদ্র সীমা ভাগ হবে equity (ন্যায্যতা) এর ভিত্তিতে। আর ভারতের দাবি ছিলো সমুদ্র সীমা ভাগ হবে equal distance (সমদূরত্ব) এর ভিত্তিতে। আন্তর্জাতিক আদালত ভারতের দাবি অনুসারে রায় দিয়েছে। একারনেই বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ দক্ষিন তালপট্টি ভারত পেল। রায় দেয়া হলো ভারতের দাবি অনুসারে, এরপর ও জয় হয়েছে আমাদের? রায়ে ধার্যকৃত delimitation লাইন অনুযায়ী তালপট্টি দ্বীপ ভারতকে দেয়া হয়েছে । এই কথা বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছে। কিন্তু চেপে গিয়েছে ন্যায্যতা এবং সমদূরত্বের বিষয়টি। যেটা ছিলো এই মামলার মূল পয়েন্ট। যদিও তালপট্টি দ্বীপটি এখন পানির নিচে, কিন্তু বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় এই দ্বীপ আংশিক জেগে থাকে (২০০৯ সালে তোলা ছবি দেখুন)। আর ভবিষ্যতে যখন দ্বীপটি পুরোপুরি জেগে উঠবে , তখন সেটা হবে ভারতের। তালপট্টিকে বলা হতো বাংলাদেশের নতুন ভূমি। সামুদ্রিক স্রোতের প্রেক্ষিতে তালপট্টি থেকে উপকূলের দিকে বাংলাদেশের সমান নতুন ভূমি জেগে উঠার সম্ভাবনার কথা অগণিত বার বলা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্লেষনে। কাজেই তালপট্টি শুধু একটা সামুদ্রিক দ্বীপই না, এটা ভবিষ্যত বাংলাদেশের ভূমি। আমাদের বাড়ির উঠোনের অংশ এখন দশ মাইল দূরের কোন বাড়ির লোক এসে নিয়ে গেলো। সুতরাং দক্ষিন তালপট্টির ব্যাপারেও বাংলাদেশের প্রশ্নাতীত হার হলো।
এবার দেখা যাক, মোট কত বর্গমাইল সামুদ্রিক অঞ্চল বাংলাদেশ চেয়েছিল আর কতটুকু পেয়েছে । বাংলাদেশ চেয়েছিল ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার আর পেয়েছে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার। সুতরাং বর্গ কিলোমিটার হিসাবেও বাংলাদেশের হার হয়েছে। এই বর্গকিলোমিটারের ব্যাপারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে অংশটা হচ্ছে তা হলো ২৫৬০২ বর্গ কি.মি. এলাকাকে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো ‘বিরোধপূর্ণ এলাকা’ বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সত্য কথাটা হচ্ছে ১৯ টা অফশোর ব্লক ছেড়ে দেয়ার পর এই ২৫৬০২ বর্গ কি.মি. সীমানা বাংলাদেশের নূন্যতম প্রাপ্য। সেই নূন্যতম প্রাপ্য থেকেও প্রায় ৬০০০ বর্গ কি.মি. সীমানা হারিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ নূন্যতম প্রাপ্য সীমানার এক চতুর্থাংশ ও ভারতের দখলেই গিয়েছে।
আরো মজার একটা তথ্য দেই। আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের মামলা ছিলো ভারতের সাথে। অথচ অবিশ্বাস্য রকম বিস্ময়করভাবে আদালতে PCA রুল অনুযায়ী ভারত তাদের নিজ দেশীয় arbitrator নিয়োগ দিলেও বাংলাদেশ নিজের দেশের কাউকে নিয়োগ দেয়নি।আন্তর্জাতিক আদালতের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।
সমুদ্র সীমা রায়ের পর ভারত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে তারা অত্যন্ত খুশি এই রায়ে। আপনি বলুন, এই রায়ে যদি ভারতের শতভাগ স্বার্থ রক্ষা না হয় তাহলে ভারত কি কখনো এই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে? এমনই শোচনীয় ভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে এই রায়ে যে , আওয়ামীলিগের অবৈধ মন্ত্রীরা পর্যন্ত নিচু গলায় বলেছে, ‘এই রায়ে দুই দেশের বিজয় হয়েছে’ সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের দুই দাবি নিয়ে যে মামলা চলে সেখানে দুই পক্ষ কি কোনভাবে বিজয়ী হতে পারে?
সবশেষে সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্যটা জানাই। এত হারের পরে আরো একটা বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, সেটা হলো বাংলাদেশের সমুদ্র এখন ocean locked.মানে আন্তর্জাতিক সমুদ্রে বাংলাদেশের অন্যের সমুদ্র স্থান অতিক্রম ব্যতিত পৌছানোর পথ নেই । বিশ্বের সামান্য কয়েকটা দেশ যাদের বহিঃবিশ্বের সাথে উন্মুক্ত সমুদ্র পথ আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো বাংলাদেশ। এখন আর বাংলাদেশ সেই অবস্থানে নেই।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ তার জলসীমায় চুড়ান্তভাবে সার্বভৌমত্ব এবং সমুদ্র অঞ্চলের খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আওয়ামীলিগের এই আঁতাতের ফলে। আসুন, এবার সব ভুলে যান। প্রথম আলো এবং বাংলা নিউজের সাংবাদিকদের লেখা ‘সমুদ্র জয়’ নামক কল্পকাহিনী পড়ুন। যে সাংবাদিকদের শামীম ওসমান ‘কুত্তা’ বলে ডাকেন। পোষা কুত্তা।
The list of links:
Click This Link
Click This Link
-- Click This Link
Click This Link
http://www1.american.edu/ted/ICE/taplatti.html
Click This Link
-- Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০০