অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে দুই যুগ পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের
ফাইনালে তুললেন গোলরক্ষক সের্হিওরোমেরো। দ্বিতীয় সেমি-
ফাইনালের মাঠের খেলায় সমানে সমান লড়াইয়ের পর নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে পরাস্ত করে ফাইনালে লাতিন আমেরিকার উপস্থিতি নিশ্চিত করলো মেসির দল। মারাকানায় রোববারের ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ব্রাজিলকে আগের সেমি- ফাইনালে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করা জার্মানি। টাইব্রেকারে ডাচদের দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিশ্চিত করেন রোমেরো। নিজেদের পেনাল্টি শটগুলো ঠিক ঠাক নিয়ে ৪-২ ব্যবধানে জিতে যায় আর্জেন্টিনা। প্রথম সেমি-ফাইনালের মতো একতরফা খেলা আর দেখা যায়নি। রক্ষণ সামলে রেখে আক্রমণ গড়েছে দুই দলই। বুধবার সাও পাওলোর আরেনা দে সাও পাওলোয় ১৫তম মিনিটে ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে লিওনেল মেসির চমৎকার ফ্রি-কিকঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক ইয়াসপার সিলেসেন। ৩২তম মিনিটে নেদারল্যান্ডসের প্রথম সুযোগটি তৈরি হয় কর্নার থেকে। বাঁদিক থেকে ভেসলি স্নেইডারের কর্নার ফিস্ট করে ফেরান সের্হিও রোমেরো। ফিরতি বলে গালতাসারই মিডফিল্ডারের ক্রস এগিয়ে এসে ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাঁ প্রান্তে মার্কোস রোহোকে চমৎকার একটি পাছ দিয়েছিলেন মেসি। ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হিগুয়াইন।
কিন্তু রোহোর ক্রস তার মাথার অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
আর্জেন্টিনা দলে চোটে পড়া দি মারিয়ার জায়গায় শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েছেন এনসো পেরেস। দুই হলুদ কার্ডের কারণে কোয়ার্টার- ফাইনাল 'মিস' করা মার্কোস রোহো ফিরেছেন। চোট কাটিয়ে নেদারল্যান্ডস দলে ফিরেছেন নাইজেল ডি ইয়োং।
পেটের পীড়া থেকে সেরে উঠা অধিনায়ক রবিন ফন পের্সিও আছেন শুরুর একাদশে। ৫৮তম মিনিটে আর্জেন্টিনার ভালো একটি সুযোগ আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন স্টেফান ডা ভ্রেই। ডান দিক থেকে লাভেস্সির ক্রস ডি বক্সে হিগুয়াইনকে খুঁজে পাওয়ার আগেই ফিরিয়ে দেন ফেইয়েনুর্ডের ডিফেন্ডার। ৭৫তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পান হিগুয়াইন। এনসো পেরেসের ক্রসে ডি বক্সের
ভেতরে পা লাগাতে পারলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
যোগ করা সময়ে আর্জেন্টিনাকে ভীষন বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন হাভিয়ের মাসচেরানো। স্নেইডারের ডিফেন্স চেরা পাস ডি বক্সে ছুটে এসে নিয়ন্ত্রণে নেন আরিয়েন রবেন। শট নিতে একটু দেরি করেন বায়ার্ন মিউনিখ তারকা ততক্ষণে মাসচেরানো দৌঁড়ে এসে তার
শটে পা ঠেকিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু রোমেরোকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা। যোগ করা সময়ে রদ্রিগো পালাসিওর
ক্রসে ডি বক্সে অল্পের জন্য নাগাল পাননি সের্হিও আগুয়েরো। ১০৫তম মিনিটে ম্যাক্সি রদ্রিগেস নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের
মাথার ওপর দিয়ে বল বাড়ান পালাসিওকে। সিলেসেনকে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি ইন্তার মিলান স্ট্রাইকার। তার দুর্বল হেড ঠেকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি ডাচ গোলরক্ষকের।
দুই মিনিট পর মেসির ক্রস থেকে দারুণ একটি সুযোগ পান রদ্রিগেস। তার হাফভলিতে তেমন জোর না থাকায় ধরতে কোনো সমস্যা হয়নি সিলেসেনের। কোস্টা রিকার বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে শেষ সময়ে সিলেসেনের বদলে টিম ক্রুলকে ন মিয়েছিলেন লুইস ফন গাল। সেই ম্যাচে দুটি শট ঠেকিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন নিউক্যাসেলের এই গোলরক্ষক। রুন ভ্লারের প্রথম শটটি বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন রোমেরো। রবেনের পরের শটটি ঠেকাতে পারেননি তিনি। স্নেইডারের তৃতীয় শটটি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার স্বপ্ন উজ্জ্বল করে তুলেন রোমেরো। ড্রিক কুইটের পরের শটটি লক্ষ্যে পৌঁছালে আশা টিকে ডাচদের। আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম তিন শটে সিলেসেনকে পরাস্ত করেন মেসি, গ্যারায় ও আগুয়েরো। রোমেরো দুটি শট ফেরানোয় দুই যোগ পর ফাইনালে পৌঁছাতে শেষ দুটি শটে একটি গোল পেলেই চলত আর্জেন্টিনার। রদ্রিগেসের শট
হাতে লাগালেও গোল ফেরাতে পারেননি সিলেসেন। তাই পঞ্চম শটটি আর নেয়ার প্রয়োজন
হয়নি।। অভিনন্দন আর্জেন্টিনাকে!!!!!