ফুটবল খেলায় বা যে কোন খেলায় আমাদের প্রিয় দল জয়লাভ করলে আমরা আনন্দিত হই আর পরাজয়ে আমরা ভীষণ কষ্ট পাই। আমার কাছে এখানে কেন জানি মনে হয় ব্যাপারটা ঠিক মানব-মানবির প্রেমের মত। এক জন যেমন অন্য এক জনের প্রেমে পড়ে যায় কোন কারন ছাড়াই। আর তা থেকে আমি বাদ যাই কিভাবে? আমারও ভাল লাগা থাকতে পারে। থাকতে পারে কোন পছন্দের দল। ফুটবলে আমার পছন্দের দল আর্জেন্টিনা আর স্পেন।
প্রতি ৪ বছর পর পর বিশ্বকাপ ঘুরে ফিরে আসে এবং অনেকেরেই হাঁসিয়ে আবার কাউকে না কাউকে কাঁদিয়ে চলে যায়। এই বিশ্বকাপকে ঘিরে অনেকেরেই ফেলে আসা জীবনে কত না সুখ স্মৃতি আবার কতনা দুঃখ স্মৃতি জড়িয়ে আছে? আমার খুব মনে পড়ে গত ২০১০ সালের ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের স্মৃতি। তখন আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের(২০০৯-১০) হায়ার-সেকেন্ডারির ছাত্র। আমি নিজেই ৩টা প্ল্যাগ লাগাই হলের(নিউ হোষ্টেল) ছাদে। প্রত্যেক বারের মত তখনও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল নিয়ে খুব মাতামাতি আর যুক্তি খন্ডের পর্ব চলে ডাইনিং রুম, পুকুর ঘাট, পেপার রুম, ছাদে আর প্রত্যেক রুমে। ভুলে না গেলে খুব সম্ভবত ২ জুলাই, ও ২০১০ রোজ শুক্রবার ছিল নেদারল্যান্ডস vs. ব্রাজিলের খেলা। যুমার পর থেকে হলে টানটান উত্তেজনা। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল ব্রাজিল হারবে সে প্রেডিক্ট থেকে বাজিও ধরতে পেললাম কিছু বন্ধুর সাথে। এক পর্যায়ে সুরমা হোটেল(টমছম ব্রীজ, কুমিল্লা) যা ইচ্ছা তা খাওয়া আর মামুন ভাইয়ের দোকানে(কাশ্মীর সুইটস, টমছম ব্রীজ, কুমিল্লা) ১০০ টাকার নাস্তা। আর পুকুরের পানিতে দলবেঁধে চুবানো তো আছেই!!! শেষ পর্যন্ত দেখা গেল আমার প্রেডিক্ট মিলে গেছে। এতে কোন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের রুমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। চোখে টর্চলাইট লাগিয়ে ৮ নাম্বার রুম থেকে ৪০৮ নাম্বার রুম পর্যন্ত যাকে(ব্রাজিলিয়ান সমর্থক) পাওয়া গিয়েছিল তাকে ৫-৬ জন কোলে করে নিয়ে পুকুরে ফেলে দিই। এই অভিযান চলে রাত প্রায় ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত হটাৎ নিউজ আসে কিছু কাপুরুষ ব্রাজিলিয়ান সমর্থক আশ্রয় নিয়েছে্ রবীন্দ্রনাথ হলে(হিন্দু ব্লকে) হাটি হাটি পা পা করে উৎ পেতে বসে থাকি ৪২ নাম্বার রুমের কোনায় আর ৮ নাম্বার রুমের দেয়ালের ছায়ায়। শেষ পর্যন্ত রাত যখন ১টা থলের বিড়াল বের হয়ে মিউ বলতেই কাউন্টার এট্যাকে ফেলে দেই পানিতে। এতে সাময়িক কষ্ট ছিল ভুক্তভোগিদের। কিন্তু ছিল অফুরন্ত সুখ।
ঠিক এরপর দিনই(৩ জুলাই,২০১০) ছিল আমার আমার পছন্দের টিম আর্জেন্টিনার ম্যাচ। হলে খেলা দেখার সাহস হারিয়ে ফেলছিলাম প্রথম ৩ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে। অতঃপর ডাইনিং রুমের পেছনের দরজা দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম টাউন হল মাঠে। উদ্দেশ্য বড় পর্দায় খেলা দেখবো আর জয়ের আনন্দে একসাথে বীরের মত হলে ঢুকবো। কিন্তু হায় ক্লোজার গোল ৬৮', ৮৯' আর ফ্রিডরিকের ৭৪' মিনিটের সব আশা ছেড়ে দিয়ে পরাস্থ হলাম গতরাতের সাথে। খুব খারাপ লাগছিল রেফারি(রাভশান ইরমাতভ) ইনজাজ করায় । চরম টেনশন আর ব্রাজিলিয়ান বন্ধুদের ফোন কলে বিরক্ত হয়ে সেল ফোনটা বন্ধ করে দিলাম সেই টাউন হলেই। আর চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে থেকে একটা পলিথিন নিয়ে সেলটা ঢুকিয়ে চললাম গত রাতের খায়েশ দিতে। খারাপ লাগতে লাগতে পপুলার হাসপাতাল পার হয়ে হলের সীমান্তে পা দিলাম। এখন চিন্তা হলে ঢুকবো কিভাবে!!! যেইনা মসজিদটা পার হয়ে ঢুকলাম তবেই ঘিরেই ধরা। আমিও কোন বাঁধা না দিয়ে স্বেচ্ছায় চললাম পুকুরের ধারে। হটাৎ মোড় দিতে এক দৌড়ে পূর্ব ব্লকের পুকুর ঘাটলায়। কারণ একটাই এখানে চুবালে দল বেঁধে আর ওই ঘাটলায় স্বেচ্ছায়। ডুব দিয়েই গত রাতের দায় শেষ করি।
আজ সেই সময়ের মত ঘুরে এলো এই বিশ্বকাপের(২০১৪) কোয়াটার ফাইনাল। রাত ১০টায় জার্মানি আর ফ্রান্সের খেলায় সাপোর্ট দিয়েছিলাম ফ্রান্সকে। কিন্তু ১-০ তে জার্মানি চলে গেল সেমি-ফাইনালে। ৪৪ মনিট পরে শুরু হচ্ছে হোষ্ট ব্রাজিল vs. কলম্বিয়া'র ম্যাচ। দুটোই ল্যাটিন আমেরিকান টিম আজকে আমি সাপোর্ট দিচ্ছি ব্রাজিলকে।
কারণ কবি নজরুল বলেছেন,
উহারা চাহুক সন্কীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।