somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তিবাদ , বস্তুবাদ ও মুক্তমনা কি??

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তিবাদঃ

দর্শন ও বিজ্ঞানের বিকাশের যুগ থেকে যুক্তিবাদ বলতে দর্শনশাস্ত্রে গাণিতিক পদ্ধতির সম্পৃক্তকরণকেই বোঝানো হয়ে থাকে, যেমনটি দেকার্ত, লিবনিৎজ্ এবং স্পিনোজা করেছিলেন। একে মূলত ইউরোপীয় যুক্তিবাদ বলা হয়, কারণ ইউরোপে যখন এই মতবাদ কর্তৃত্বময় ছিল তখন ব্রিটেনে অভিজ্ঞতাবাদের রাজত্ব চলছিল।
যুক্তিবাদকে প্রায়ই অভিজ্ঞতাবাদের বিপরীতে দাড় করানো হয়। বিস্তীর্ন অর্থে এই দু’টো দৃষ্টিভঙ্গী একটা আরেকটা থেকে স্বতন্ত্র্য নয়, কারণ একজন দার্শনিক একই সাথে যুক্তিবাদী ও অভিজ্ঞতাবাদী হতে পারেন।[১]অভিজ্ঞতবাদের সবচেয়ে চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গী বলে যে অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন হয়, হয় পঞ্চইন্দ্রীয় দিয়ে নয়ত বেদনা-সুখের মত গহীন অনুভূতি দিয়ে। জ্ঞানের ভিত্তি অভিজ্ঞতা, আবার অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অবরোহিতও হয়। দন্দ্ব মূলত জ্ঞানের উৎস এবং জ্ঞান যাচাইয়ের উপযুক্ত পদ্ধতি নিয়েই।
যুক্তিবাদের কয়েকটি তরিকার সমর্থকরা বলেন যে ভিত্তিপ্রস্তরমূলক নীতি থেকে, যেমন জ্যামিতির সূত্র, অবরোহী পদ্ধতি দ্বারা সব প্রকার সম্ভাব্য জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। বারুচ স্পিনোজা এবং গটফ্রিড লিবনিৎজ্ এই মতের অনুসারী ছিলেন এবং তাঁরা দেকার্তের উপস্থাপিত কিছু জ্ঞানতাত্ত্বিক এবং অধিবৈদিক সমস্যার সাথে লড়তে গিয়ে তাঁরা যুক্তিবাদের মৌলিক তরিকার জন্ম দেন। স্পিনোজা এবং লিবনিৎজ্ দাবি করেন যে তত্ত্বীয়ভাবে সব প্রকার জ্ঞান (যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত) যুক্তি দ্বারা আহরণ করা সম্ভব, যদিও তাঁরা দু’জনই পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে গণিতের মত কিছু ব্যতিক্রমী শাখা বাদে আর কোন ক্ষেত্রেই এই কাজ সম্ভব না। আচরণকে যুক্তির উপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করাকেই যুক্তিবাদ বলে।

যুক্তিবাদী ও অভিজ্ঞতাবাদীদের মধ্যে পার্থক্যটা পরে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং একারণে উভয় তরিকার দার্শনিকরা এই পার্থক্যীকরণ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এছাড়া এই পার্থক্যের করণটা আপাতদৃষ্টিতে যত পরিষ্কার মনে হয়, বাস্তবে মোটেই তা নয়; যেমন, প্রধান তিন যুক্তিবাদী অভিজ্ঞতাবাদী বিজ্ঞানের গুরুত্বের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, ওদিকে অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদীরা তাঁদের কর্মপদ্ধতি এবং অধিবৈদিক তত্ত্বের দিক দিয়ে দেকার্তের সাথে স্পিনোজা এবং লিবনিৎজের থেকে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।

বস্তুবাদঃ

দর্শনের সবচেয়ে প্রাথমিক মতবাদগুলোর একটি হল বস্তুবাদ। আমাদের চারপাশের জগতের যেসব অস্তিত্ত্ব আমরা পর্যবেক্ষণ করি বস্তুবাদ অনুযায়ী তারা যেকোন প্রকার চেতনা নিরপেক্ষ। যে দার্শনিক ধারায় ধরে নেওয়া হয় যে পৃথিবী বস্তুগত, তার অস্তিত্ব আছে বিষয়গতভাবে, চৈতন্যের বাইরে ও চৈতন্য-নিরপেক্ষভাবে, বস্তুই মুখ্য, তা কারো দ্বারা সৃষ্টি হয়নি এবং আছে বাহ্যিকভাবে, চৈতন্য, চিন্তন হল বস্তুরই একটি গুণধর্ম; পৃথিবী ও তার নিয়মগুলি জ্ঞেয়। বস্তুবাদ ভাববাদের বিরোধী এবং তাদের সংগ্রামই ওইতিহাসিক-দার্শনিক প্রক্রিয়ার আধেয়। বস্তুবাদ কথাটি ১৭শ শতাব্দীতে ব্যবহৃত হয়েছিল প্রধানত বস্তু সম্বন্ধে পদার্থবিদ্যাগত ধারণাগুলির অর্থে এবং ১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে তা ব্যবহৃত হয়েছে দার্শনিক অর্থে, ভাববাদের বৈপরীত্যে।

মুক্তচিন্তাঃ

মুক্তচিন্তা (ইংরেজি: Freethought) হল এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী যা বলে যে বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা এবং যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত; মতামত গঠণের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধ বিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া বাঞ্চনীয় নয়। সচেতনভাবে মুক্তচিন্তার প্রয়োগকে বলে মুক্তচিন্তন এবং এর অনুশীলনকারীদের বলে মুক্তমনা।

মুক্তচিন্তা বলে যে জ্ঞান ও যুক্তির অনুপস্থিতিতে দাবিকৃত কোন মতকেই সত্য হিসেবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা উচিত না। সুতরাং, মুক্তমনারা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, বাস্তব সত্য এবং যুক্তির আলোকে মত গড়ে তুলে এবং হেত্বাভাস অথবা কর্তৃপক্ষ, পক্ষপাতদুষ্টতা, লোকজ্ঞান, জনপ্রিয় সংস্কৃতি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, প্রথা, গুজব এবং অন্য সব গোঁড়া, বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতার উৎসাহদাতার ভূমিকা পালনকারী শাস্ত্র থেকে নিজেদের বিরত রাখে। ধর্মের ক্ষেত্রে মুক্তমনারা সাধারণত বলে যে অলৌকিক অবভাসের পক্ষে প্রমাণ যথেষ্ট নয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক উইলিয়াম কিংডন ক্লিফোর্ডের “ক্লিফোর্ডস্ ক্রেডো” এর একটি বাক্যকে মুক্তচিন্তার ভিত্তি বলা যায়- “যে কোন ব্যক্তির যে কোন জায়গায় উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কোন কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয়”।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×