যাদের শৈশব কলোনি বা গ্রামে কেটেছে তারাই মূলত এই খেলাগুলোর সাথে পরিচিত। আমার শৈশব পুরোটাই কেটেছে চট্টগ্রামে এক রেলওয়ে কলোনিতে। হাজার চেষ্টা করলেও সেই শৈশবের স্মৃতি ভুলার নয়।
ডাংগুলীঃ প্রথমেই এই খেলাটার কথা উল্লেখ করলাম কারণ হল এটাকে বলা হত বদমাইশ পোলাপাইনের খেলা। এই খেলা খেলতে যেয়ে অনেকে আহত হইত, এমন কি পথচারীটাও আহত হত। আমি যদিও পিচ্চি কালে অনেক ভদ্র ছিলাম, মাগার এই খেলার লোভ সামলাইতে পারতাম না। আম্মুর হাতে এই জন্য কত মাইর খাইছি, এখনও ওই মাইরের কথা মনে পরলে চোখের জলে মুখ ভিজ্জা যায়।
মার্বেলঃ আমগো পিচ্চিকালে এই খেলা খেলতো না এমন কুনু পুলাপাইন নাই। মাম্মি ডেডিগো পোলাপাইন বাদ, ওরা কোন পাড়ার খেলাই খেলে না। মাঝে মাঝে বড় ভাইরাও খেলত আমগো লগে। এই খেলার জন্য কোন সিজন ছিল না। যখন ইচ্ছা তখন খেল। এখনও কোথাও এই মার্বেল দেখলে দাঁড়াইয়া পরি আর চিন্তা করি "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইটাম"।
লাটিমঃ সম্ভবত মার্বেলের পর লাটিম ছিল অন্যতম জনপ্রিয় খেলা।লাটিমের দাম ছিল অতি সস্তা ২,৩,৫ টাকা।তবে গাব গাছের লাটিম ছিল সবথেকে ভাল, বলতে গেলে লোহার মত শক্ত।
ঘুড়িঃ ঘুড়ি বলেন আর ঘুড্ডি বলেন, জিনিস একই। নিজে না হয় আকাশে নাই উড়তে পারলাম কিন্তু ঘুড়ি তো উড়াইতে পারছি, তাই অনেক মজা। তবে ঘুড়ি উড়ানো সব সিজনে সম্ভব না। কর্দমাক্ত আকাশ এবং মেঘযুক্ত মাঠ, এই ঘুড্ডি উড়ানোর জন্য ছিল চরম সর্বনাশ।
সাতচাড়াঃ ওমাগো গেছিরে........সাতচাড়া খেলেছেন অথচ টেনিস বলের আঘাত পান নাই এমন ব্যাক্তি খুব কমই আছে। এই খেলার জন্য সাতটি চাড়া একটার উপর একটা বসিয়ে স্তম্ভের মত বানানো হত। একদল টেনিস বল দিয়ে এই স্তম্ভ ভাঙত আরেক দল অপর পক্ষকে টেনিস বল দিয়ে আঘাত করত বা ফাটিয়ে দিত।
বেয়ারিং গাড়িঃ রিক্সার তিনটি বেয়ারিং আর কিছু কাঠের তক্তা দিয়ে ত্রিভুজাকৃতির এই গাড়িটি বানানো হত।ছোট বেলায় একজন এটাতে বসত আরেকজন পিছন থেকে ঠেলা দিত। অবশ্য আমার বাসা চট্টগ্রামে পাহাড়ের সাথে হওয়াতে আমি এবং আমার বন্ধুরা পাহাড়ের ঢালেই এটা চালাতাম। ফুল ইস্প্রিডে পাহাড় থেকে নিচে নামার মজাই আলাদা।
পটাশঃ পটাশ নামের এক গাছের ফল এটাতে ব্যবহার হত বলে এই অস্ত্রের নাম পটাশ। ছোট বাঁশ দিয়ে বানাতাম পিস্তলের মত অস্ত্র আর পটাশ গাছের ফল ছিল তার বুলেট। পটাশ মারার সাথে সাথে বাঁশের নল দিয়ে ধোঁয়া বের হত, আর গায়ে লাগলে কি যে ব্যাথা।
আরও অনেক খেলা খেলেছি সেই দুরন্ত শৈশবে- কানামাছি, গোল্লাছুট, দারিয়াবান্ধা,বোউচি ইত্যাদি। আরেকদিন না হয় সেইসব বর্ণনা দিব। সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৮