সিহাব!! সব সময় একা একা থাকতে ভালোবাসে।সে মা বাবার একটা মাত্র ছেলে।কলেজ লাইফ এ তেমন কোন ঘনিষ্ট বন্ধু তার ছিল না।কলেজ এ যেত ক্লাস করতো আবার বাসায় চলে আসতো।কোথাও যেত না।এক মিনিট এর জন্য কোথাও দাঁড়িয়ে কারর সাথে কথা বলত না।মেয়েদের থেকে একটু দূরেই থাকতো সে।ক্লাসে দরকারি ছাড়া সে মেয়েদের সাথে কথা বলতো না।এই কারনে মেয়েরাও ছেলেটির সাথে তেমন একটা কথা বলতো না।এইভাবে তার কলেজ লাইফ কেটে গেল।এইচ এস সি এক্সাম শুরু হইল।২ মাসে তার এক্সাম শেষ হয়ে গেল।২ মাস পর তার রেজাল্ট দিল।রেজাল্ট সে ভালই করলো।এর ফলে তার বাবা তাকে ভাল কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দিল।তার ভার্সিটি লাইফ শুরু হইল।নতুন পরিবেশ,নতুন মুখ।সব কিছুই নতুন।এখানেও সে তেমন কারর সাথে কথা বলতে পারলো না।এইভাবে দিনের পর দিন কেটে গেল।ভার্সিটির অনেকেই তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসলো।সিহাব বন্ধুত্ব করলো!!কিন্তু তারপরও সে কারর সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলতে পারে না।
অন্য দিকে তাকে বাসায় অনেক কাজ করতে হয়।তার মা অসুস্থ।রান্না সিহাব কেই করতে হয়।বাসার কাজ আর কলেজ এইভাবেই চলে যায় সারাদিন।
এইভাবেই ১ম বর্ষ কেটে গেল তার।২য় বর্ষের উঠার কিছু মাস পর তার বাবা তাকে বিয়ে দিতে চাইলো।বাবার পছন্দের মেয়ে।মেয়ের নাম শ্রাবন্তী। মেয়ে এইচ এস সি পাস।দেখতে সুন্দরী।ব্যবহার ভাল।সিহাবের বাবা চায় তার ছেলে মেয়ের সাথে দেখা করুক। বাবার কথা মত সিহাব মেয়েটির সাথে দেখা করে।সিহাবের সাথে মেয়েটির দেখা হল।অতঃপর কিছু দিনের মধ্যেই সিহাব আর শ্রাবন্তীর বিয়ে হইল।
তাদের সংসার জীবন শুরু হল।কিন্তু এইদিকে একটা সমস্যা দেখা দিল।শ্রাবন্তী একটুও রান্না করতে পারে না।এই জন্য বাসায় অনেক সমস্যা দেখা দিল।সিহাব এর মা অসুস্থ।শুধু নিজের কাজ ঠিক মত করতে পারে।
বিয়ের পর সিহাব ভেবেছিল বাসার রান্না শ্রাবন্তী করবে আর সে পড়াশুনা শেষ করেই একটা ভাল চাকুরী করবে।কিন্তু তা আর হবে বলে মনে হয় না।বাধ্য হয়ে সিহাব বিয়ের আগের মতই প্রতিদিন রান্না করে।এটা দেখে শ্রাবন্তীর খুব খারাপ লাগে,যদিও সে সিহাব কে রান্নার সময় হালকা সাহায্য করে।
এইভাবে প্রায় কয়েকমাস কেটে গেল।সিহাব এর অনার্স ২য় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম আর কয়েকমাস পর।বাসার কাজ আর পড়াশুনা একসাথে করতে যেন সিহাব এর একটু প্রবলেম হচ্ছিল।সেইটা হইত শ্রাবন্তী ভালই বুঝতে পারলো।
একদিন হটাত শ্রাবন্তী সিহাব কে বলল যে তাকে সিহাব যেন রান্না শিখায়।সিহাব বলল না থাক লাগবে না।কয়দিন পর শ্রাবন্তী কে সে রান্নার ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিবে রান্না শিখার জন্য।কিন্তু শ্রাবন্তী এই কথা শুনে রাজী হইল না।কারন শ্রাবন্তী চায় না যে রান্নার জন্য সিহাব এর এক্সাম খারাপ হক।তাই সে বার বার বলতেই লাগলো যে সিহাব যেন তাকে রান্না শিখিয়ে দেয়।কিন্তু সিহাব ইছু তেই রাজি হচ্ছিল না।শ্রাবন্তী বাধ্য হয়ে তার শাশুড়ি কে সব কথা বলল যে সে সিহাব এর কাছে রান্না শিখতে চায় এতে করে সিহাব কে আর বাসায় রান্না করতে হবে না আর পড়াশুনাও সে ভালভাবে করতে পারবে যেহেতু তার সামনে ফাইনাল এক্সাম।
সিহাব এর মা সিহাব কে ডেকে বলল শ্রাবন্তী কে রান্না শিখিয়ে দিতে।সিহাব তার মা এর কথা তে রাজি হয়ে গেল।
পরের দিন থেকে সিহাব শ্রাবন্তী কে রান্না শিখাইতে শুরু করল।সিহাব এর সুন্দর করে কথা বলার স্টাইল আর ভালভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা যেন শ্রাবন্তী কে মুগ্ধ করতে লাগলো!!
এইভাবেই ধীরে ধীরে শ্রাবন্তী সিহাব কে মন থেকে ভালোবেসে ফেলল।কিন্তু শ্রাবন্তী সিহাব কে বুজতে দিল না যে সে সিহাব কে ভালোবেসে ফেলেছে!!কারন সে চায় সিহাব তার এক্সাম ভালোভাবে যেন দেয়।
শ্রাবন্তী খুব তাড়াতাড়ি রান্না শিখে ফেলল।এখন থেকে সে নিজেই খারাব রান্না করে।সকালের নাস্তা,দুপুরের খাবার রাতের খাবার নিজেই রান্না করে শ্রাবন্তী।শ্রাবন্তীর হাতের রান্না তার শশুর-শাশুরী খুব পছন্দ করে।এইভাবেই দিন এর পর দিন কেটে গেল।শ্রাবন্তী তার শ্বশুর শাশুড়ির খুব সেবা করে।সে যেন তাদের নিজের মেয়ে হয়ে উঠলো।
এইভাবে দিন চলে গেল মাস গেল বছর গেল।সিহাব অনার্স পাস করলো।একটা ভাল চাকুরী শুরু করল।তাদের দিন ভালই চলতেছিল।
বিয়ের ৩ বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনো সিহাব কে শ্রাবন্তী আই লাভ ইউ বলতে পারে নাই।বলতে পারে নাই সে তাকে ভালোবাসে।
সামনে ভালোবাসা দিবস।তাই শ্রাবন্তী ঠিক করল যে সে এই দিনেই সিহাব কে তার মনের কথা বলবে।সে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু ঠিক করল।
সে তার রুম ঠিক করল।খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলো।শ্রাবন্তী ভাবলো রাতে বাসায় এসে রুম দেখে যেন সিহাব অনেক খুশি হয়।
সন্ধ্যা হয়ে গেল।কিন্তু এখনো সিহাব আসলো না।শ্রাবন্তী তাকে মোবাইল করতেছে বার বার কিন্তু মোবাইল অফ।
প্রায় রাত ৯টা বেজে গেল।এখনো সিহাব বাসায় আসে নাই।বাসার সবাই খুব টেনশন করতেছে।হটাত করে বাসার ফোন বেজে উঠলো।
ফোন রিসিভ করতেই যেন সব আনন্দ একেবারে শেষ হয়ে গেল শ্রাবন্তীর।সিহাব এক্সিডেন্ট করেছে।সেখানেই সে মারা গেছে।এই কথা শুনে শ্রাবন্তী যেন পাথর হয়ে গেল।সে অনেক অনেক অনেক বেশি কান্না করলো।সব কিছু যেন সে অন্ধকার দেখলো।বাসার সবাই খুব কাঁদলো।
শ্রাবন্তীর আর ভালোবাসি কথাটি বলা হইল না সিহাব কে।হইত পরের জন্মে বলা হবে।সে আশায় আজও শ্রাবন্তী বেঁচে আছে।বাসা থেকে ২য় বিয়ের কথা বললেও শ্রাবন্তী রাজি হয় নাই হইত আর হবেও না কোনোদিন!!!!