somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মি শ না রি : খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘স্বাধীন’ অঞ্চলের পদধ্বনি!

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষয়টি নতুন নয়। যথেষ্ট পুরনো। দুই-আড়াই দশক ধরেই সচেতন নাগরিকরা বলে আসছিলেন। কখনো কখনো কোনো কোনো মিডিয়াতেও খবর প্রকাশ হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বিভিন্ন আলামত দেখে উদ্বেগ ও আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। আলেমসমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ বার বার সতর্ক করে এসেছেন। কিন্তু প্রশাসন ও প্রভাবশালী মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা এ বিষয়টির দিকে মোটেই পাত্তা দিতে চাননি। এখন সেসব খবর, উদ্বেগ ও সতর্কীকরনেরই সত্যতা পাওয়া গেল স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও পরিসংখ্যানগত নির্দিষ্টতার সঙ্গে সে প্রতিবেদনে ধারণার চেয়েও ভয়াবহ সত্য তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা সে প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য প্রকাশ করেছে এই আগস্টের বিভিন্ন তারিখে



একটি দৈনিক পত্রিকার ১২ আগস্ট সংখ্যায় প্রথম পাতায় ছাপানো একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল-‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গড়তে বিভিন্ন তৎপরতা।’ রিপোর্টে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা থেকে তৈরি করা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলাকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গড়ে তোলার তৎপরতা চালাচ্ছে বিদেশি কয়েকটি দাতা সংস্থাসহ কয়েকটি এনজিও। দরিদ্র উপজাতীয় সম্প্রদায়কে অর্থ-বিত্তের লোভ দেখিয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে শুধু খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ১২ হাজার ২শ উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিস্টান বানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন সেবাসংস্থা, এনজিও ও মিশনারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটিতে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এসেছে। এখানে সে চিত্রটি তুলে ধরা হল।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের অন্যান্য সস্থার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলা-খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বর্তমানে ১৯৪ টি গির্জা উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এ গির্জাগুলোকে কেন্দ্র করেই দেশি-বিদেশি এনজিও ও অন্যান্য সংস্থা তাদের সব তৎপরতা চালায়। এনজিওগুলোর মধ্যে খাগড়াছড়িতে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ (সিএফডিবি), বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপ, খাগড়াছড়ি জেলা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপ, ক্রিশ্চিয়ান সম্মেলন কেন্দ্র খাগড়াছড়ি, সাধু মোহনের ধর্মপল্লী, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ক্রাউন ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ইত্যাদি। খাগড়াছড়ি জেলায় ৭৩টি গির্জা রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় ৪ হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান হয়েছে। প্রতিবেদনে বান্দরবান বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জেলায় গির্জা রয়েছে ১১৭টি। এখানে খ্রিস্টান ধর্মবিস্তারে কাজ করছে ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি), গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (গ্রাউস), কারিতাস বাংলাদেশ, অ্যাডভেন্টিস্ট চার্চ অব বাংলাদেশ, ইভেনজেলিক্যাল ক্রিশ্চিয়ান চার্চ (ইসিসি) ইত্যাদি। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনগুলো বান্দরবানে ৬ হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিস্টান পরিবারে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। রাঙামাটিতে ক্যাথলিক মিশন চার্চ, রাঙামাটি হোমল্যান্ড ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ও রাঙামাটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ প্রায় ১ হাজার ৬৯০ উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিস্টান পরিবারে পরিণত করেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, খ্রিস্টধর্মের দ্রুত বিস্তৃতির ফলে উপজাতীয়দের প্রকৃত সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হওয়া সম্প্রদায়ের মতামতকে ভবিষ্যতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা এবং মিজোরামেও অনুরূপ ধর্মান্তর প্রক্রিয়া ১৯৬০ সাল থেকে চলে আসছে। বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গত কারণেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় উন্নত। তাই ওই এলাকার উপজাতীয়রা প্রলুব্ধ হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করছে। এতে পার্বত্য এলাকার বিস্তৃত অঞ্চল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অধীনে চলে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা বৈঠকে সেনা সদর দফতরের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরেকটি ‘পূর্ব তিমুর’ বানানোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এরপরই সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদনটি তৈরি করে। সেই প্রতিবেদনটিরই সারনির্যাস এখন মিডিয়াতে প্রকাশ হচ্ছে। এখানে লক্ষ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর ভিত্তি করে। গোটা দেশের ওপর ভিত্তি করে এখনও খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের ওপর কোনো অনুসন্ধানী কাজ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি। করলে দেখা যেত, রাজশাহী-নওগার সাওতাল, হালুয়াঘাট, দুর্গাপুর ও মধুপুর-শেরপুরের গারো উপজাতীয়দের মাঝেও টাকা-পয়সার জোরে ব্যাপক হারে খ্রিস্টান বানানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সীমান্তঘেঁষা জনপদ ও চরাঞ্চলের দরিদ্র মুসলমানদেরকে খ্রিস্টান বানানোর কাজেও লিপ্ত রয়েছে বিভিন্ন এনজিও। বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশে ভাগ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুরোদমে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করণের তৎপরতা চলছে। ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চল ও মহল্লায় অঘোষিতভাবে খ্রিস্টান প্রভাবিত পল্লী ও ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়েছে।
এসব চিত্রের প্রতিটি টুকরোর ওপর দৃষ্টি দিলে এ কথা বলতেই হবে যে, এ বিষয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ নেওয়ার সময় দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, একথা সত্য। এর সঙ্গে এটাও মিথ্যা নয় যে, এরই মধ্যে দেশজুড়ে খ্রিস্টান কম্যুনিটির অসংখ্য শক্ত ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্গের মতো দুর্ভেদ্য প্রাচীর বেষ্টনীতে দেশজুড়ে শত শত গির্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর কোনোটিই উদ্দেশ্যমুক্ত নয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসবের সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষাগত উদ্দেশ্য। এসব বিষয়ে নীতি নির্ধারকরা উদ্যোগহীন থাকলে অচিরেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিবর্তে শুরু হতে পারে আক্ষেপ। এবং একই সঙ্গে অস্তিত্বের শেকড়ে চলতে পারে চূড়ান্ত কুঠারাঘাত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×