সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার বসবাস করে। সনাতন ধর্ম হতে এদের আবির্ভাব। সুনামগঞ্জের প্রচীন বাসিন্দা শ্রীধর রায় এদের পূর্বপুরুষ। জানাযায় শ্রীধর রায় রাঢ় অঞ্চল হতে এই অঞ্চলে আগমন করেছিলেন। শ্রীধর রায়ের দুই ছেলে পাগল রায় ও বীর রায়। পাগল রায়ের নামে পাগলা এবং বীর রায়ের নামে বীরগাঁও নামকরণ হয়েছিল। এ নামেই পাগলা পরগনা নামকরণ হয়েছিল। এটি বর্তমানে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ বাজার এবং বীরগাঁও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের একটি প্রসীদ্ধ গ্রাম। শ্রীধর রায়ের মৃত্যুর পর বীর রায় এবং পাগল রায় উভয়ে নিজ নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে বীর রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে স্থানীয় মুসলিম পরিবারের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বীর রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কোন নাম ধারণ করেছিলেন তা জানা যায়নি । বীর রায়ের অধস্থন পুরুষ এনায়েত মাহমুদ এবং সুলতান মাহমুদ। এনায়েত মাহমুদের বংশধরগণ বীরগাঁও বসবাস করেন এবং সুলতান মাহমুদের বংশধরগণ অদূরেই হাসকুড়ি গ্রামে বসতি পত্তন করেন (হাসকুড়ি বর্তমান দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম)। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বীর রায়ের অধস্থন বংশধরগণ জমিদারি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক বিরোধ কেন্দ্র করে হাসকুড়ির বংশধরগণের জমিদারি সুর্যাস্ত আইনে নিলামে ওঠে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত ময়নুল হক চৌধুরী (হেলাল) প্রণীত হযরত শাহ জালাল (রঃ) পূণ্য ভূমি সিলেট গ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। উল্লেখিত গ্রন্থের ৯৩ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে- ‘সুনামগঞ্জের বীরগাঁও এর নামকরণ স্থানীয় জমিদার বীর রায়ের নামানুসারে ‘পাগলা’ বীর রায় এর ভ্রাতা পাগল রায়ের নামানুসারে ।’ ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত সেলবরষের ইতিহাস গ্রন্থে এই বংশের কুরসী নামা ছাপা হয়েছে। সেলবরষের ইতিহাস গ্রন্থে লিখা হয়েছে- ‘পাগলার শ্রীধর রায়ের বংশধর বীর রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । বীর রায়েরই অধঃস্থন পুরুষ এনায়েত মাহমুদ ও সুলতান মাহমুদ ।’
বীর রায়ের অধস্থন পুরুষ (হাসকুড়ি বাসিন্দা) মুরাদ খাঁর নাতি ‘মোঃ রবি বক্স এঁর ছেলে’ মোঃ আনওয়ার চৌধুরী বিয়ে করেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুরের জমিদার মোঃ হাতিম চৌধুরী মেয়ে মোছাঃ আছিয়া খাতুন চৌধুরীকে। মুরাদপুরের জমিদার হাতিম চৌধুরীর কোন ছেলে সন্তান না থাকায় তাঁর জমিদারি সম্পত্তির লাভ করেন হাতিম চৌধুরীর দুই মেয়ে বংশধরগণ। যথাক্রমে- দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার হাসকুড়ি নিবাসী আনওয়ার চৌধুরীর স্ত্রী আছিয়া খাতুন চৌধুরীর গর্ভজাত সন্তানগণ এবং হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার চারাভাঙ্গা নিবাসী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন র. অধস্থন বংশধর সৈয়দ এবাদুল হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী মোছাঃ রজিবুন নেছা চৌধুরীর গর্ভজাত সন্তানগণ। এবাদুল হোসেন চৌধুরী খানেদামান ছিলেন। তাই চারাভাঙ্গা থেকে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি (পরগণা লাউড়) বসবাস করেন। ডক্তর এস এম ইলিয়াছ প্রণীত সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.) : সিলেট ও তরফ রাজ্য বিজয়ী গ্রন্থের ১০৪৪ পৃষ্ঠায় এর কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।
হাসকুড়ির মোঃ আনওয়ার চৌধুরীর স্ত্রী আছিয়া খাতুন চৌধুরীর গর্ভজাত সন্তান তিন ছেলে; যথাক্রমে মোঃ আনফর চৌধুরী (ব্রিটিশ পুলিশে দারগা পদে কর্মরত ছিলেন), মোঃ সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়া এবং মোঃ আকবর চৌধুরী। আনওয়ার চৌধুরীর সন্তানগণের মধ্যে মোঃ সাদির চৌধুরী স্বগোত্রিয় একজনকে বিয়ে করেন। অল্পকাল পরে প্রথম স্ত্রী এক কন্যা সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে মোঃ সাদির চৌধুরী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার বলগুল মসুদ চৌধুরীর কন্যা হেলালুন্নেছা চৌধুরী (হেলাল বানু)র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হেলাল বানুর গর্ভে কোন সন্তান জন্ম না হওয়া সাদির চৌধুরীকে আলীনগরের ফয়জুননেছার সহিত বিয়ে দেন। তৎগর্ভে চার ছেলে এক মেয়ে জন্ম হয়। এই নাবালক সন্তানগণ রেখে সাদির চৌধুরী ১৯২৬ সালে বৈশাখ মাসে মৃত্যুবরণ করেন। সাদির চৌধুরীর মৃত্যুর পর হেলাল বানু তাঁর স্বপতিœক সন্তানদের নিজ তত্ত্বাবধানে রাখেন এবং গর্ভজাত সন্তানাদি না থাকায় স্বপতিœক পোষ্য সন্তানগণকে তাঁর পৈত্রিক মৌরসি সম্পত্তি ভাটিপাড়া জমিদারির ২৪৬৫৫/৯ তালুকের ২৪টি মৌজা হতে- সাত আনা, এক গন্ডা, দুই কড়া, দুই কাস্তি, ভূমি দান করেন। ১৯৩৫ সালের জানুয়ারী মাসের ৫ তারিখ এই দলিল সম্পাদন করা হয়।
আলীনগরের বর্তমান চৌধুরীগণ হাসকুড়ির মোঃ আনওয়ার চৌধুরীর ছেলে সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়ার বংশধর। উল্লেখ করা হয়েছে মোঃ আনওয়ার চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন মুরাদপুরের জমিদার হাতিম চৌধুরীর মেয়ে মোছাঃ আছিয়া খাতুন চৌধুরীকে। কিন্তু মুরাদপুরের জমিদার হাতিম চৌধুরীর ছেলে সন্তান না থাকায় তাঁর মেয়ের দিকের নাতিগণ মুরাদপুর জমিদারির হাতিম চৌধুরীর জমিদারির অংশ লাভ করেছিলেন। মুরাদপুর জমিদারি হতে প্রাপ্ত এই সম্পত্তির সূত্রধরে মোঃ আনওয়ার চৌধুরীর এক ছেলে সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়া ভাটিপাড়ার অদূরে আলীনগর গ্রাম চলে আসেন। সেই থেকে বীর রায়ের বংশধরের একাংশ আলীনগর বসবাস করছেন। এ বিষয়ে কোন দালিল পাওয়া না গেলেও আলীনগরের চৌধুরীগণ বর্তমানে যে সম্পত্তি ভোগাধিকার আছেন তা ভাটিপাড়া জমিদারির হতে হেলাল বানু চৌধুরীর দানপত্র দলিল বর্তমান বংশধর আশিকুর রহমান চৌধুরীর নিকট সংরক্ষিত আছে। আলীনগরের চৌধুরীগণ বর্তমানে যে সম্পত্তি ভোগধিকার আছেন তা ভাটিপাড়া জমিদারির ৯নং তালকু হতে প্রাপ্ত সম্পত্তি। জানাযায় এই বংশধরগণ ভাটিপাড়া জমিদারি হতে প্রাপ্ত সম্পত্তির পাশাপাশি মুরাদপুর জমিদারি হতে প্রাপ্ত সম্পত্তি এবং হাসকুড়ির মৌরসি সম্পত্তিও ভোগ করেছেন। বর্তমানেও হাসকুড়ি গ্রামে তাঁদের অতি সামান্য সম্পদ আছে ।
হাসকুড়ির চৌধুরী পরিবারের সন্তান নুরুল হুদা চৌধুরী ওরফে গাজী মোঃ আবু শাহজাদা চৌধুরী ওরফে গাজি সাহেবের কন্যা শাহিনা চৌধুরী রুবি বর্তমানে সুনামগঞ্জ এইচ এমপি হাইস্কুলের এইচ এস সি বি এম শাখায় প্রভাষক (ভাষা) হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী- পারিবারিক মনোবিবাদ কেন্দ্র করে এই বংশের এক পুরুষ হাসকুড়ি জমিদারি নিলামে উঠিয়ে নিজ নামে বন্দোবস্ত নেন। পরবর্তীতে তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে এই বংশের উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী হন।
সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ দ্বিতীয় খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা হতে জানাযায় ...পাগলা পারগনার ৮ নং তালুকের অধিকারী মোহাম্মদীয় ধর্ম্ম অবলম্বন করেন; এই বংশীয়গণ পাগলার বীরগাঁওয়ে অবস্থিতি করিতেছেন।’ এই মুসলমান বংধরগণই হাসকুড়ি ও আলীনগরের চৌধুরীদের পূর্ব্বপুরুষ।
আলীনগরের বংশধরগণ অধিকাংশই সরকারী চাকুরীজীবি। পূর্ব থেকে তাঁরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। পুরনো কাগজপত্রে সাদির চৌধুরীর নামের আগে মৌলভি লেখা আছে । সাদির চৌধুরীর ভাই হাসকুড়ি নিবাসী আনফর চৌধুরী ব্রিটিশ আমলে দারগা ছিলেন। সাদির চৌধুরীর সন্তানগণের মধ্যে ফজলুর রহমান চৌধুরী তৎকালীন সময়ে ভারতের আসাম থেকে এন্ট্্রান্স পাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে আসাম থেকে জিটি লাভ করেন । ফজলুর রহমান চৌধুরী প্রথম জীবনে ভারতে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে নিজে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়ে গ্রামেই বসবাস করেন। সাদির চৌধুরীর অপর দুই ছেলের মধ্যে নুরু রহমান চৌধুরী মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, পুরনো কাগজপত্রে তাঁর নামের সাথেও মৌলবী লেখা পাওয়া যায়। সাদির চৌধুরীর নাতি এবং পৌত্রদের মধ্যে সবাই প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথাক্রমে- আতিকুর রহমান চৌধুরী পাকিস্তান আমলেই দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছিলেন। তাঁর ভাই আশিকুর রহমান চৌধুরী এইচ এস সি, সবিরুল ইসলাম চৌধুরী বিকম, শহীদুল ইসলাম চৌধুরী এস এস সি, ছানাদুল ইসলাম চৌধুরী এস এস সি, সাফু চৌধুরী এইচ এস সি, শেফু চৌধুরী এইচ এস সি, তপন চৌধুরী বি এ, পলাশ চৌধুরী এম এ, তিতাশ চৌধুরী এম এ, বিপ্লব চৌধুরী এম এ, মিতা চৌধুরী বি এ, দ্বিপক চৌধুরী এইচ এস সি, সাকি চৌধুরী বি এ এলএলবি, সাগর চৌধুরী আইকম, সচি চৌধুরী আইকম, বাবু চৌধুরী এইচ এস সি পাশ করেছেন। এই বংশের অধিকাংশরাই সরকারী চাকরী করতেন। তবে বর্তমানে এদের একাংশ সুচনীয় ভাবে দিনাতিপাত করছেন।
হাসকুড়ি এবং আলীনগরের চৌধুরীগণ মূলত একই মায়ের সন্তান। পূর্বকালে এ বংশীয়দের আত্মীয়তা হয়েছে অতি উচ্চ বংশীয়দের সাথে। এই বংশের কন্যা (হাসকুড়ির আকবর চৌধুরীর মেয়ে) মুজতবা খাতুনা চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল সুনামগঞ্জের বিখ্যাত আলী-পরিবারের সন্তান আসাম প্রাদেশিক পরিষদের প্রথম মন্ত্রী ও পূর্ববাংলা আইন পরিষদের প্রথম স্পীকার মনাওওর আলীর ভাই মুজাহিদ আলীর সহিত। তাঁর গর্ভজাত সন্তান মাহমুদ আলী পাকিস্তানের আজীবন ফেডারেল মন্ত্রী। তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্বপাকিস্তান গণপরিষদের মন্ত্রী ছিলেন। আহমদ আলী এবং মুশাররফ মুহসীন আলীও মুজতবা খাতুনের গর্ভজাত সন্তান।
আলীনগরের সাদির চৌধুরীর ভাই মোঃ আকবর চৌধুরী হাসকুড়ি গ্রামে বসবাস করতেন। তাঁর বংশধর চার ছেলে এক মেয়ে- আব্দুল মকসুদ চৌধুরী (মক্কু মিয়া), আঃ শহীদ চৌধুরী, মুজতবা খাতুনা চৌধুরী, আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, নছরত জং চৌধুরী (জঙ্গু মিয়া)। হাসকুড়ি অধিবাসি এই বংশধরগণের মধ্যে- আব্দুল ওদুদ চৌধুরীর কোন বংশধর নেই। আব্দুল মকসুদ চৌধুরী মক্কু মিয়া প্রথম বিয়ে করেন সুনামগঞ্জের বিখ্যাত আলী-পরিবারের সন্তান আসাম প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রী মনাওওর আলীর বোন নুরুন্নেছা খাতুন চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান নুর আক্তার খাতুন চৌধুরী, হাবিবা খাতুন চৌধুরী (নেক আক্তার খাতুন চৌধুরী), নুরুল হুদা চৌধুরী ওরফে গাজী মোঃ আবু শাহজাদা চৌধুরী (গাজি সাব)। আব্দুল মকসুদ চৌধুরী মক্কু মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন সিলেট জেলার ভাদেশ্বর গ্রামের খালেছা খাতুন চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান- নুরুল হাদি চৌধুরী (হাসনু মিয়া), নজিবা আক্তার চৌধরী, নুরুল হক চৌধুরী, নুরুল হুসেন চৌধুরী, নজুমা আক্তার চৌধুরী। আকবর চৌধুরীর ছেলে আঃ শহীদ চৌধুরী বিয়ে করেন পাইলগাঁয়ের আকছিরুননেছা চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান- আলী হায়দর চৌধুরী (আবুল ফজল চৌধুরী), আলী আফসার চৌধুরী (বুলু মিয়া), আলী আছকর চৌধুরী (মুছু মিয়া), খুরশেদা বেগম চৌধুরী। আকবর চৌধুরীর অপর ছেলে নছরত জং চৌধুরী (জঙ্গু মিয়া)র বংশধর দুই ছেলে এক মেয়ে- গোলাম আকবর চৌধুরী, মহিবুননেছা চৌধুরী, ...
আলীনগরের সদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়ার অপর ভাই আনফর চৌধুরী দারগা সাহেবও হাসকুড়ি বসবাস করতেন। তাঁর বংশধর এক ছেলে ইউসুফ চৌধুরী। ইউসুফ চৌধুরীর বংশধর- ইদ্রিস চৌধুরী (ইদ্রিস মিয়া), আব্দুল গণি চৌধুরী (গণি মিয়া), আব্দুস সাত্তার চৌধুরী, আব্দুল গফুর চৌধুরী (গফুর মিয়া), আব্দুল জব্বার চৌধুরী (কালা মিয়া), তৈয়রুননেছা চৌধুরী ।
পাগলা পরগণার হাসকুড়ি নিবাসী (বীর রায়ের বংশধর) মোঃ আনওয়ার চৌধুরীর তিন ছেলে- মোঃ আনফর চৌধুরী, সদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়া, মোঃ আকবর চৌধুরীর মধ্যে দুই ছেলে- আনফর চৌধুরী এবং আকবর চৌধুরী হাসকুড়ি গ্রামে এবং এক ছেলে সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়া দিরাই থানা বেতাল খালিশা পরগণার আলীনগর গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। সাদির চৌধুরীর বড় ছেলে ফজলুর রহমান চৌধুরী প্রথম বিয়ে করেন বিখ্যাত মরমীকবি হাছন রাজার মেয়ের দিকের নাতনী সিলেটের কৌড়িয়া রাজাপুরের জমিদার মুনসেফ রাজা চৌধুরীর প্রথম কন্যা মালিকা খাতুন চৌধুরীকে। মালিকা খাতুনের গর্ভে কোন সন্তান না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন সুনামগঞ্জের সেলবরষের জমিদার বিখ্যাত বাঘ শিকারি আঃ রহমান চৌধুরীর কন্যা রেজিয়া চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান আতিকুর রহমান চৌধুরী, আশিকুর রহমান চৌধুরী, আশরাকুর রহমান চৌধুরী, সুফিয়া খাতুন চৌধুরী, মশফিয়া খাতুন চৌধুরী। ফজলুর রহমান চৌধুরীর কন্যা সুফিয়া খাতুন চৌধুরীকে বিয়ে দিয়েছেন কৌড়িয়া রাজাপুরের মশাহিদ খাঁ চৌধুরীর কাছে। অপর মেয়ে মাশফিয়া খাতুন চৌধুরীকে বিয়ে দিয়েছেন নেত্রকোণা জেলার খাসিকোনা মিঞা বাড়ির জমিদারপুত্র মির্জা সিদ্দিক হোসেনের কাছে।
সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়ার দ্বিতীয় ছেলে বজলুর রহমান চৌধুরী ওরফে সফর মিয়া প্রথম বিয়ে করেন বিখ্যাত মরমীকবি হাছন রাজার মেয়ের দিকের নাতনী সিলেটের কৌড়িয়া পরগণার জমিদার মুনসেফ রাজার চৌধুরীর দ্বিতীয় কন্যা ছালিকা খাতুন চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান ফায়দা খানম চৌধুরীকে বিয়ে দিয়েছেন হাসকুড়ি গ্রামের আঃ গফ্ফার চৌধুরীর নিকট। আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী ব্রিটিশ বানিজ্যিক জাহাজের নাবীক ছিলেন। শেষ জীবনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হন। বজলুর রহমান চৌধুরী ওরফে সফর মিয়ার স্ত্রী ছালিকা খাতুন চৌধুরী এক কন্যা সন্তান (ফায়দা খাতুন চৌধুরীকে) রেখে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সফর মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন সেলবরষের জমিদার কন্যা শাহেদুননেছা চৌধুরীকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান মজিবুল ইসলাম চৌধুরী, ছয়দুল ইসলাম চৌধুরী, তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সাদির চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে নুরু রহমান চৌধুরী ওরফে নুরু মিয়া প্রথম বিয়ে করেন কৌড়িয়া পরগণার জমিদার মুনসেফ রাজা চৌধুরীর কন্যা গুলশান খাতুন চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তান ছবিরুল ইসলাম চৌধুরী এবং খাইরুল ইসলাম চৌধুরী। নুরু রহমান চৌধুরী দ্বিতীয় বিয়ে করেন গণখা গ্রামের আব্দুর রশিদ চৌধুরীর কন্যা মেহেরুন নেছা চৌধুরীকে। তাঁর গর্ভজাত সন্তানগণ- শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মশুদুল ইসলাম চৌধুরী, ছানাদুল ইসলাম চৌধুরী, মহিদুল ইসলাম চৌধুরী, জুনেদা খাতুন চৌধুরী, উবেজা আক্তার চৌধরী, মশুদা চৌধুরী, সুহেদা আক্তার চৌধুরী।
সাদির চৌধুরীর প্রথম কন্যা ধলু চাঁন চৌধুরীকে বিয়ে দেন কৌড়িয়া পরগণার জমিদার সুলতান খা চৌধুরীর সাথে। তাঁর বংশধর মোশাহিদ খান চৌধুরী ধন মিয়া, মশারফ খান চৌধুরী আকল মিয়া, দিলাওয়ার খা চৌধুরী কুটি মিয়া।
সাদির চৌধুরীর দ্বিতীয় কন্যা লক্ষি চাঁন চৌধুরীকে বিয়ে দেন নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার বল্লীর জমিদার (হাছান রাজার নানার বংশ) আলম চৌধুরীর ছেলে ইয়াকুব চৌধুরীর সাথে। লক্ষি চাঁন চৌধুরীর সন্তানগণ- আবুল কাশেম চৌধুরী (আবুল মিয়া), মকবুল হোসেন চৌধুরী (মকবুল মিয়া)।
সাদির চৌধুরী ওরফে বাবরু মিয়ার তৃতীয় ছেলে নুরু রহমান চৌধুরীর প্রথম ছেলে ছবিরুল ইসলাম চৌধুরী (ছবির মিয়া) বিয়ে করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল সাহেবের বড় বোন। নুরু মিয়ার মেয়ে জুনেদা খাতুন চৌধুরীকে বিয়ে দিয়েছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার দুহালিয়া গ্রামের দেওয়ান আবুল মহসিন চৌধুরীর কাছে।
সাদির চৌধুরীর চতুর্থ ছেলে ইসমাইল চৌধুরী (ফকির মিয়া), বিয়ে করেন হাসকুড়ি গ্রামের মজিদা খাতুন চৌধুরীকে। তাঁদের কোন সন্তানাদি না থাকায় আফরুজ বক্ত চৌধুরীকে দত্তাক হিসেবে গ্রহণ করেন। এই বংশধরগণ হাসকুড়ি গ্রামে বসবাস করছেন।
লেখক : ফারুকুর রহমান চৌধুরী।
তথ্য উৎস - ১) সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, পিতা আবুল কাশেম চৌধুরী। ২) আশিকুর রহমান চৌধুরী, পিতা- ফজলুর রহমান চৌধুুরী, সাং আলীনগর- ০১৭২৭৭২৬৪০৯, ৩) শাহনেওয়াজ চৌধুরী নেয়াজ, পিতা- নুরুল হুদা চৌধুরী ওরফে গাজী মোঃ আবু শাহজাদা চৌধুরী, সাং হাসকুড়ি, বর্তমানে ঠিকানা জগন্নাথবাড়ি পূর্ববাজা, সুনামগঞ্জ সদর ০১৭২৬৪৩৯৭১৫, ৪) শাহিনা চৌধুরী রুবি, প্রাভাষক (ভাষা) এই এম পি হাইস্কুল এইচ এস সি বি এম শাখা, সুনামগঞ্জ ‘ পিতা নুরুল হুদা চৌধুরী ওরফে গাজী মোঃ আবু শাহজাদা চৌধুরী, সাং হাসকুড়ি, বর্তমান ঠিকানা মহিলা কলেজ রোড, সুনামগঞ্জ’। ৫) সুজাহান চৌধুরী, পিতা- মরহুম আঃ কাইয়ুম চৌধুরী, সাং মুরাদপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ।
। (ছবি : মুরাদপুরের জমিদারের উত্তরপুরুষ সুজাহান চৌধুরীর সাথে লেখক)
(ছবি : মাহমুদ আলী মিনিষ্টার সাহেবের জন্মদাতা মা হাসজুড়ির জমিদার কন্যা মুজতবা খাতুন চৌধুরী)
(ছবি : হাসজুড়ির জমিদারদের উত্তরপুরুষ নুরুল হুদা চৌধুরী ওরফে গাজী মোঃ আবু শাহজাদা চৌধুরী (গাজি সাব),)
(ছবি : সেলবরষের জমিদার বিখ্যাত বাঘ শিকারী আব্দুর রহমান চৌধুরী)
(ছবি : কৌড়িয়া পরগণার জমিদারদের বংশধর রফিকা খাতুন চৌধুরীর সাথে লেখক)
(ছবি : খালিয়াজুড়ি বল্লীর জমিদারদের বংশধর আজিল হক চৌধুরীর সাথে লেখক)
সুনামগঞ্জ ম্যাপ
ফারুকুর রহমান চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৭