somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফারুকুর রহমান চৌধুরীর লেখা একটি বিরহের চিঠি

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিরাই থেকে
১৪ আগষ্ট ২০১৭, সোমবার, রাত ২.০০ টা।

প্রিয়
কেমন আছ ? চিনতে পেরেছ ? আমি ...! না থাক, পরিচয়টা পরেই বলি। প্রচন্ড ইচ্ছে হয় তোমাকে চিঠি লিখি; অব্যক্ত বেদনাগুলো ফুটিয়ে তুলি কাগজের পাতায়। কিন্তু কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি, ভাবতে ভাবতে কেটে গেলো ষোলটি বছর। ডাইরি থেকে ঝড়ে গেলো অনেকগুলো পাতা। ফুরিয়ে গেলো কলমের কালি। আমার আর হয়নি লিখা। যখনই লিখতে বসি, চরম বাস্তবতা উঁকি দেয় মনের কোনে- ফুল পবিত্র, ফুল ছাড়া পুঁজো হয় না, এই ফুল পঁচে গেল, কেউ হাতেও নেয় না। এমনই বিচিত্র আমাদের মানসিকতা। সে যাক, এবার আসি আসল কথায়।

এখন অনেক রাত, প্রচন্ড ঝড়, দমকা হাওয়া, বজ্র সহ বৃষ্টি । যেন, পৃথিবীটাই ভেঙ্গে যাবে। যদি ভেঙ্গেই যায়, লিখা হবে না চিঠিটা। অজানা আশঙ্কায়, লিখতে বসেছি। ষোলটি বছর, অসংখ্য বার, আমি লিখতে চেয়েছি। পারিনি ! আমি লিখতে পারিনি। প্রতিবার অনুভব করেছি তোমার নীরব উপস্থিতি। তুমি যেন বসে আছ, আমার পিছনে, খুব কাছে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে চেয়েছি। তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছ। তবুও রয়েছ পাশে। ঝড়িয়েছে ঝর্ণাধারা তোমার অভিমানি প্রস্থান। এভাবেই কেটে গেলো, ষোল বছরের অনেকগুলো রাত, নীরবে নিভৃতে নির্ঘুম।

আচ্ছা, তোমার মনে আছে ? ঐ সেদিনের কথা ? মাত্র পঁচিশ বছর আগে, বসন্তে প্রস্ফুটিত ফুলের সুবাসে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, গিয়েছিলাম তোমাদের গ্রামে। কালনীর বুক চিড়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এগিয়ে যাওয়া নৌকা থেকে নেমে, সবুজ শ্যামল দিগন্তহীন মাঠ, কুয়াশার শিশির ভেজা মেটো পথ পেরিয়ে, আমারা গিয়েছিলাম হেঁটে। অনেক কথা হলো সেদিন। শুধু রাখা হয়নি হাতে হাত। বিদ্যুৎ বেগে, টকটক করে এগিয়ে গেলো ঘড়ির কাঁটা। মুহুর্তেই ফুরিয়ে গেলো দিন। সেদিন হয়নি বলা...। আমার চোখের কোনে আজো ভেসে আসে সেই লাজুক চাহনি। বাতাসে ভেসে আসে সেই মিষ্টি হাসির ধ্বণি। হয়ত বা ভুলেই গেছো...

কথায় কথায় অনেক কথা মনে পরে, নববর্ষের এক সকালে, তুমি উপহার দিলে, তোমার একমাত্র সম্বল, হাতের চুঁড়ি, সোনালী রঙের। সেদিন আমার হলো রাজ্য জয়, বিজয়ের উল্লাসে, লিখে দিলাম সাদা পাতায় ‘নববর্ষ’ ‘শুভনববর্ষ’। যেন তাজ মহলের স্বত্ত্ব দিলাম তোমার নামে। শুধু হয়নি লিখা ইতিহাসের পাতায়। চলে গেলো অনেক গুলো বছর। স্বপ্নেরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াল মুক্ত আকাশে। একদিন বইয়ের পাতায় অনুভুতি বিনিময়, নিয়ে গেলো অনেক দূর। বড্ড অদ্ভুত আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। সাধ এবং সাধ্যে সৃষ্টি হয় তফাৎ, মানুষে মানুষে পার্থক্য। আচমকা বিপর্যয় নিয়ে গেল অনেক দূর। বাধা হলো সাধ্যের গভীরতা। শুকনো মরুভূমির পথ চলে ফিরে এলাম অনেক বছর পর। তোমার বাড়ির ঝলমলে আলোয় ক্লান্ত বিবর্ণ চেহারা বড্ড বেমানান। দূর আকাশে নির্বিকার তাকিয়ে রইলাম ফ্যাল ফ্যাল করে। এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিলো মুহুর্তেই। যেন উদার প্রকৃতির সহমর্মিতা বহিঃপ্রকাশ। সঙ্গী হলো জগজিৎ সিংয়ের কালজয়ি গান-

বেশি কিছু আশা করা ভূল, বুঝলাম আমি এতদিনে
মুক্তি মেলে না সহজে, জড়ালে হৃদয় কোন ঋণে ।

কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে- ‘এই শূণ্য ঘরে, এই নির্বাসনে কতোকাল, আর কত কাল! আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি, উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস, কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো, কেউ নেই, শুধু শূন্যতার এই দীর্ঘশ্বাস , এই দীর্ঘ পদধ্বনি’। তোমার হৃদয় কোনে করুণার আশ্রয় পেতে কিংবা অশ্রু ঝড়াতে পত্র লিখিনি। বরং বেদনার পাহাড় ডিঙিয়ে একাকিত্বে পথ চলা ক্লান্তির স্বস্থি পেতে এ আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা; জানি না কিভাবে নিলে। প্রকৃতি সবাই ভালবাসে। হিমালয় দেখে মুগ্ধ হয় অনেকেই। কিন্তু কেউ জানে না কত সহস্র কষ্ট চাপা দিয়ে জেগে ওঠে একেকটি হিমালয়। আজ আমাদের মাঝে সাত সমুদ্র ব্যবধান। তবুও তোমার নীরব উপস্থিতি দখলে রেখেছে আমার সমস্ত সত্ত্বা। স্মৃতির পাতায় বারবার ভেসে ওঠে তোমার প্রতিচ্ছবি। এগিয়ে যায় ঘড়ির কাঁটা, বিয়োগ হয় আয়ুষ্কাল। সমাধানের বাইরে থেকে যায় বহু কিছু; কেটে যায় জীবন।

এখন শেষ রাত, ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের পাতা। বইছে বজ্র হাওয়ায়, প্রবল বর্ষন। কলমের কালি ফুরিয়ে এসেছে। অথচ চিঠিটা হলো না শেষ। তবুও দুঃখ নেই। কারণ, অযোদ্ধার সীতাকে যখন বনবাস দেয়া হয়, তখন শ্রী রাম চন্দ্র জানতেন সীতা সতী। পরিচয়টা গোপনই রয়ে গেল। ভালো থেকো।

ইতি
কোন একজন

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×