somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. তপন কুমার বাগচী : যেভাবে পরিচয় ও দেখা

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. তপন কুমার বাগচী

ফারুকুর রহমান চৌধুরী : হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ । এই জেলার একটি দূর্গম জনপদ দিরাই উপজেলায় আমার জন্ম বেড়ে ওঠা ও বসবাস । দিরাই থেকে ঢাকা শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা সাধারণ বাস । কোন কাজে ঢাকা যেতে হলে সারা রাত বাসে ভ্রমণ করতে হয় । তাই বিশেষ কোন কাজ না থাকলে ঢাকা যাওয়া হয় না । একটু আধটু লেখালেখি করি । এই লেখালেখির সূত্র ধরে বছরে এক দুইবার ঢাকা যাই । তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বরচিত গানের বই ‘ভাবের পান্থশালা’ পান্ডুলিপি নিয়ে ঢাকা গেলাম । প্রকাশনীর সাথে আলাপ আলোচনা চলছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এমন স্টেটাস দেখে পিংকু দাদা ফোন করলেন । পিংকু দাদার বাড়ি দিরাই উপজেলায়, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন চাকরী করেন । পূর্বপরিচয় না থাকলেও এলাকার লোক হিসেবে ফেইসবুকের পরিচয়কে খুব গুরুত্ব দিলেন । পরামর্শ দিলেন পান্ডুলিপি নিয়ে ড. তপন বাগচী স্যারের সাথে কথা বলার জন্য । তপন বাগচী স্যারের সাথে আমার পরিচয় নেই, তবে তাঁর অসংখ্য লেখা এবং বই পড়েছি । তপন বাগচী স্যার বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও ফোকলোরবিদ। তাঁর জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৩ অক্টোবর, মাদারীপুর জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা সমন্বয়ক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটের গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলা একাডেমীর গবেষণা-সংকলন-ফোকলোর বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। ড. তপন বাগচী স্যার একাধারে শিশু সাহিত্যিক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভূক্ত গীতিকার। তিনি লেখালেখির জন্য ইতিমধ্যে- মাইকেল মধুসূদন পদক (রাষ্ট্রীয়), ডেইলী স্টার জীবনের জয়গান গীতিকাব্য পদক, জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, জসীম উ্দদীন পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি গান নিয়ে এক রকম গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন। বিশেষ করে লালন সাঁই, হাসন রাজা, রাধারমণ দত্ত, আলেপচান দেওয়ান, দুরবীন শাহ, মুকুন্দদাস, আরকুম শাহ, জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, শচীন দেববর্মণ, বিজয় সরকার, রবীন্দ্রনাথ মিশ্র, আবদুল করিম শাহ, নীলকমল মিশ্র, খবিরউদ্দিন দেওয়ান, রামকানাই দাশ, মযহারুল ইসলাম, শামসুজ্জামান খান, আবুল আহসান চৌধুরী প্রমুখের ওপর প্রবন্ধ লিখেছেন। তপন বাগচী স্যারের সাথে পরিচয় না থাকলেও বই এবং অনলাইনের মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কে জানা এবং তাঁর লেখা পড়ে ভালো লাগা থেকে জন্ম নিয়েছিল অন্যরকম একটা শ্রদ্ধাবোধ । সংগত কারণেই এ পর্যায়ে তাঁর সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়ে প্রচন্ড ইচ্ছা জেগে গেলো । তাই, পিংকু দাদার দেয়া ঠিকানা এবং রেফারেন্স নিয়ে চলে গেলাম বাংলা একাডেমি । আমি মফস্বল এলাকার মানুষ । নিজের লেখা গানের পান্ডুলিপি নিয়ে তপন বাগচী স্যারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি । পূর্বপরিচয় নেই, দেখা করার সুযোগ পাব কি না, পাত্তা দিবেন কি না ইত্যাদি জল্পনা কল্পনা করতে করতে হাজির হলাম বাংলা একাডেমির ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভবনের ৭০৪ নং কক্ষে । রুমের ভেরত একজন মাত্র লোক, খুব মনযোগ দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছেন । ইতস্ততা বোধ করেই দরজার বাইরে দাড়িয়ে অনুমতি চাইলাম । সম্মতি নিয়ে টেবিলের সামনে গিয়ে পরিচয় দিলাম, স্যার আমি সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে এসেছি । সুনামগঞ্জ আর দিরাই নাম শুনে স্যার চেয়ার থেকে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন । হাত মিলিয়ে বসার অনুমতি দিলেন । এইটুকু পরিচয় পেয়েই নিজের ব্যস্ততা রেখে অনেক কিছু আলোচনা করলেন । বুঝতে বাকি থাকল না সুনামগঞ্জের প্রতি স্যারের আলাদা একটা টান আছে । যে কারণে পিংকু দাদার পরিচয় দিতেই ভূলে গিয়েছিলাম । এক পর্যায়ে স্যার নিজে থেকেই জানতে চেয়ে বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি । আমি এবার বিস্তারিত খুলে বল্লাম । ঝুলি থেকে ২২০টি গানের পান্ডুলিপি ‘ভাবের পান্থশালা’ স্যারের হাতে তুলে দিলাম । স্যার খুব মনযোগ দিয়ে গানগুলো দেখলেন আর বিষয় ভিত্তিক তত্ত্ব নিয়ে আমার সাথে আলোচনা করলেন, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিলেন, ইমেইলের মাধ্যমে পান্ডুলিপির সফট কপি রাখলেন, ফেইসবুকে ফ্রেন্ড বানালেন, ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যোগাযোগ রাখতে বল্লেন । ততক্ষণে দুই ঘন্টার বেশি সময় চলে গেল, আমি বুঝতেই পারলাম না । দীর্ঘ আলোচনার পর স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিলাম । প্রথম স্বাক্ষাতে ড. তপন কুমার বাগচী স্যারের কাছ থেকে পেয়ে এলাম বুক ভরা ভালোবাসা । তাঁর প্রতি জন্ম নিলো গভীর শ্রদ্ধা । বেঁচে থাকুন স্যার, হাজার বছর, মানুষের অন্তরে ।

ফারুকুর রহমান চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×