আমাদের দৈনিন্দন কাজে সড়ক পথ ব্যবহার করে থাকিন । এই সড়ক পথে প্রতিদিন ঘটে থাকে নানন রকম সড়ক দুর্ঘটনা । যা আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা । এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ । নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যানবনহন । আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য পরিবার । আমি মনেকরি এই সমস্যা সমাধানের যথাযথ উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে বলেই এমনটি হচ্ছে । একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেন্দ্র করে আদালত কর্তৃক সংশ্লিষ্ট চালকের মৃত্যুদন্ড আদেশ প্রদান করে সম্প্রতি দেশে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট চলছে । আদালতের রয়ের প্রেক্ষিতে এমন আন্দোলন আদালত অবমাননার সামিল । আদালত যথাযথ স্বাক্ষী প্রমাণ কেন্দ্র করেই রায় প্রদান করে থাকেন । কিন্তু আদালতের রায়ের বিপরীতে আপীল না করে ধর্মঘট করা যুক্তি সংগত নয় । সে যাহোক, আমাদের দেশে প্রতিদিন যে দুর্ঘটনা ঘটছে তার দায় কি শুধুই চালকের ? মালিক পক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের নয় ?
জানাযায় বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে ভিত্তিতে জানা গেছে- বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে গড়ে ৫৫ জন। এদের ৩২ শতাংশই হচ্ছে পথচারী। এমন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক ব্যবস্থার বেহাল দশা, খানাখন্দেভরা সড়ক-মহাসড়ক, পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার ইত্যাদি । যদি এতসব কারণ থাকে তাহলে এর দায় পরিবহন শ্রমিকদের একা নিতে হবে কেন ?
আমাদের দেশে নিম্নবৃত্তের কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন জীবিকা নির্বাহের তাগীদে বেছে নিয় পরিবহন শ্রমিকের কাজ । শুধুমাত্র বেচে থাকা আর স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য গরীব অসহায় পরিবারের এই মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহের তাগীদে ষ্টিয়ারিং ধরে বের হতে হয় ঘর থেকে । কিন্তু কাজ শেষে যথাযথ ভাবে স্ত্রী সন্তানের কাছে বাড়ি ফিরতে পারবে তাদের সে নিশ্চয়তা কি আছে ?
আমাদের দেশে অধিকাং সড়কের একেবারে বেহাল দশা । সংগত কারণে সড়ক পথে চলাচল করতে যাত্রীদের যেমন কষ্ট হয় তেমনি শ্রমিকগণেরও কষ্ট হয় । শুধুমাত্র বেহাল সড়ক ব্যবস্থার করণে । এই সড়ক পথ আমাদের প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় । অথচ এই সড়ক ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক । এগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয় না যথা সময়ে । যেটুকোই সংস্কার হয় সেটুকো যথাযথ ভাবে কাজ হয় না শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার আর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে । এই সড়কগুলো যথাযথ ভাবে সংস্কার হয়না বিধায় শুধুমাত্র সড়কের কারণে প্রতিনিয়ত চলাচলকৃত যানবাহনগুলোতে দেখা দেয় বিভিন্ন ত্রুটি । এতে মালিক পক্ষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় । মালিক পক্ষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার করণে চালকের শারীরিক মানষিক দিক চিন্তা না করে অধিক লাভের আশায় কিংবা যানবাহন ঘনঘন ত্রুটি দেখা দেয়া কেন্দ্র করে আর্থিক ক্ষতিটুকো পুষিয়ে নেয়ার জন্য দিন রাত কাজ করায় । মালিকদের চাপের স্বীকার হয়ে চাকরী বাচাতে গিয়ে পরিবহন শ্রমিকগণ দৈনিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টাই পরিশ্রম করে এতো সময় পরিশ্রম করে । এতে শ্রমিকগণ তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথঘাটে থাকেন বিধায় তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতার তৈরি হয় এবং এরা শারীরিক ও মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধুমাত্র চাকরী বাচাতে আর মালিক পক্ষকে খুশি রাখতে গিয়ে চালকরা এত পরিশ্রম করেন । অধিক সময় কাজ করে চালকগণ শারিরীক ও মানুষিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কেন্দ্র করেও অনেক ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে । কিন্তু কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে তার সম্পূর্ণ দায় ভার নিতে হয় সংশ্লিষ্ট চালককে, আর্থিক দন্ড দিতে হয় মালিক পক্ষকে । কিন্তু নির্মানের সময় সড়কের নকশাজনিত ত্রুটি কিংবা সড়ক পথ মেরামতের সময় অসাধু কর্মকমর্তা কর্মচারী, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দূর্ণীতির কারণে এমনটি ঘটেলে এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্টরা থেকে যায় ধরা ছুয়ার বাইরে । সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দূর্নিতির কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা সূত্র হিসেবে অভিযোক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয় না কৌশলী কিংবা ঠিকাদার কিংবা অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের । ফলে সড়ক নির্মাণ কাজের সংশ্লিষ্ট লোকজনের খামখেয়ালিপনা আর দূর্নীতি হয়েই চলছে । এর প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে দৃষ্ট সৃষ্টি করার মতো কোন বিচার হয়েছে বলে আমার জানা নেই । এমন খামখেয়ালিপনার কারণেও ঘটছে দূর্ঘটনা । যার ফলে মালিক পক্ষের হচ্ছে জরিমানা , চালকদের হচ্ছে জেল । আর দূর্নীতিবাজদের ছেলে মেয়েরা উন্নত দেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে । অবশ্য আমাদের দেশের চালকরা একেবারে নিস্পাপ তা বলার উপায় নেই । তাদের মধ্যে এক শ্রেণীল মস্তিষ্ক বিকৃত চালকের মাত্রারিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অথবা নেশায় আসক্ত থাকার কারণেই অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে । আমাদের দেশের বেশিরভাগ গাড়িচালক অশিক্ষিত, গন্ডমূর্খ। এদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার করণে তাদের ভিতরে এমন গোঁড়ামি কাজ করে। এই গোড়ামিও সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ ।
আমাদের দেশের চালকদের অনেকেই ট্রাফিক আইন কিংবা ট্রাফিক সিগন্যাল জানে না বিধায় মানে না । যারা জানে তাদের মধ্যেও অধিকাংশ চালক মানেন না। ফলে অনেক ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া আমাদের দেশে ট্রাফিক সিংগনাল ব্যবস্থারও যথাযথ নেই । বাংলাদেশে এখনও অনেক কিছু পুরাতন পদ্ধতি অনুসারে চলছে। ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন না হওয়া গাড়ির গতি পরিমাপক, ওজন পরিমাপক ইত্যাদি যথাযথ ভাবে করা হচ্ছে না । এই সুযোগে পরিবহন শ্রমিকগণ অধিক আয়ের আশায় যানবাহন অভার লোড করতে পারেন । এভাবে রাস্তাঘাটে চলমান অবৈধ যানবাহন, লাইসেন্স বিহীন চালক, ফিটনেসহীন গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হলেও তার অধিকাংশই অর্থ কিংবা তদবিরের বিনিময়ে ছাড় পেয়ে যায় । যার কারণে আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সড়ক পথে যানবাহন চালাতে গেলে চালকের প্রয়োজন লাইসেন্স এবং যানবাহনের প্রয়োজন ফিটনেস সার্টিফিকেট । এ ক্ষেত্রে বি আর টি ’তে কি হচ্ছে তা দেশের সকলের জানা ।
আমার দৃষ্টিতে আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনার পিছনে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হচ্ছে- চালক হওয়ার জন্য সরকার অনুমোদিত পর্যান্ত ড্রাইভিং স্কুল নেই, এমনকি যে কোন উপায়ে ড্রাইভিং শিক্ষার পর চালকদের জন্য কোন প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই । যারা ড্রাইভিং শিখছেন তাদের অধিকাংশই হচ্ছেন হেল্পার থেকে । তাই নিয়ন্ত্রীনহীন ভাবে যে যার মতো করে ড্রাইভিং শিখাচ্ছে । বিধায় সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে । ঠিক এমটি একটি কারণে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ট্রাক উল্টে নিহত হয়ছিল ৪৪ শিশুশিক্ষার্থী। এ ঘটনায় দোষ প্রমাণ হওয়ার পরেও ট্রাকচালক মফিজ উদ্দিনকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৫ বছর ৯ মাসের কারাদন্ড। আইনের দুর্বলতার সুযোগেই পার পেয়েছিল মফিজ।
মিরসরাইয়ের ওই ঘটনার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ভীষণ তৎপর হয়ে উঠেছিল সরকার ও প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে কতটুকো কমেছে । ইচ্ছেকৃত ভাবে অন্যা করলে চালকদের উপর আইনে ব্যবস্থা নেয়া হোক কঠিন থেকে কঠিন তম । তাতে দুঃখ নেই । কিন্তু সড়ক অ-ব্যবস্থাপনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা, কিংবা অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর আইনশ্রংখ্যলা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের উপর কর্তৃত্ব কিংবা তদবীরের বিনীময়ে মুক্ত হওয়া কিংবা আইন শৃংখ্যলা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি বর্গের অসদুপায় অবলম্বন ইত্যাদি কারণও যদি দূর্ঘটনার পিছনে দায়ি থাকে তাহলে শুধুমাত্র চালকদের উপর একক ভাবে কঠোর হলেই বৃহদ এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না । সরকারের উপচিত সড়ক দূর্ঘটনা কামানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা । যেমন
সড়ক নির্মান প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতি কঠিন নজরদারী করা এবং সংশ্লিষ্ট কাজ শত ভাগ বাস্তবায়ন করা । সড়ক পথে দক্ষ জনবল গড়ে তুলা, পথচারীদের ট্রাফিক আইন শিক্ষা দেয়া । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন চালককেই লাইসেন্স না দেয়া । প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে যানবাহন সড়ক পথে চালতে না দেয়া । ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন যেন রাস্তায় বের করতে না পারে সে দিক দিয়ে কঠোর দৃষ্টি রাখার জন্য আইনশৃংখ্যলা বাহিনীকে আদেশ দেয়া । আইন শৃংখ্যলা বাহিনীর উপর কড়া নজরদারি করা । বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করতে চালকদের মধ্যে সচেতনতা মুলক প্রচারণা চালানো । অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা পণ্য পরিবহন বন্ধ করার লক্ষে ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা এবং গাড়ির গতি, ওজন পরিমাপ ইত্যাদি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করার ।
সড়ক পথ আমাদের প্রতিদিনের চলার সঙ্গী । আমরা আমাদের ভ্রমণ শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই । আমাদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং আমাদের আগামী প্রযন্মের জন্য সড়ক ব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন দরকার । সড়ক দূর্ঘটনার জন্য শুধু চালকগণ দায়ি করে কিংবা তাদের কঠিন শাস্তি দিলেই সমাধন আসবে না । বরং কঠিন শাস্তি বিধান চালু করলে এ কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে । এতে করে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি ।
বি: দ্র: : এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:০৪