বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে থেকে প্রতি বছর সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় ও সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক প্রদান করা হচ্ছে।এ পুরস্কার দেওয়া হয়। চলতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দেশের ১৭ জন গুণী ব্যক্তিকে একুশে পদক প্রদান করা হেবে । তন্মধ্যে শিল্পকলায় (সঙ্গীত) অবদানের জন্য বাউল শিল্পী সুষমা দাসকে একুশে পদক প্রদান করা হচ্ছে । সুষমা দাসের জন্ম ১ মে ১৯৩০ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামের।তাঁর পিতা রসিক লাল দাশ ও মা দিব্যময়ি দাশ। তাঁর বিয়ে হয়েছে শাল্লা উপজেলার চাকুয়া গ্রামে । প্রাণনাথ দাস ।পারিবারিক জীবনে সুষমা দাসের চার পুত্র ও এক কন্যা। সুষমা দাস একুশে পদক প্রাপ্ত সঙ্গীতে উস্তাদ পন্ডিত রামকানাই দাসের বড় বোন ।প্রথম জীবন গ্রামে কাটলেও ১৯৭২ সাল থেকে সিলেট শহরে বসবাস করছেন।বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর আখালিয়া হালদার পাড়া, মজুমদারপল্লী, ১০নং ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সুষমা দাস গ্রামীণ মেয়েলী আসরে ধামাইল, কবি গান ও বাউল গানের পাশাপাশি হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে এলাকায় একজন নন্দিত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন । পণ্ডিত রামকানাই দাশের (১৯৩৫-২০১৪)অনুপ্রেরণায় সুষমা দাস সিলেট বেতারে অডিশন দেন এবং নিয়মিত সংগীতশিল্পী হিসেবে লোকসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে গান করারও সুযোগ সৃষ্টি হয় তাঁর। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান পরিবেশন করেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি বেগম সুফিয়া কামালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের অষ্টম বার্ষিক অনুষ্ঠান মালায় লোকগীতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস।ঢাকার শিল্পকলা কর্তৃক আয়োজিত “লোকসঙ্গীত উৎসব” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন তিনি এবং ২০১১ সালের ১৬ মার্চ ছায়ানট কর্তৃক আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারক “দেশঘরের গান” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি পিতা রসিক লাল দাশ ও রাধারমণ দত্তের গান পরিবেশন করেন। সুষমা দাস রাধা-রমন দত্তের গান, বাউল শাহ্ আবদুল করিমের গান, কালাশাহ্, দুর্বিন শাহ্, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, হাসন রাজা সহ বহু মরমী কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন। ১৪১৭ বাংলায় ভারতের কলকাতায় “বাউল ফকির উৎসব’’ এবং পরবর্তীতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সুষমা দাশ। সেই মঞ্চে দর্শকের অনুরোধে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন তিনি। সুষমা দাসের বর্তমান তাঁর বয়স একানব্বই। গত বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত উৎসবে প্রথমদিন সুষমা দাসের বাউল গান শোনেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। এরপর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সুষমা দাসের গান শুনে কেদেছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রীসহ হাজারো দর্শক । এ বছর শিল্পকলায় (সঙ্গীত) একুশে পদক পাচ্ছেন সুষমা দাস । এ নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা জন্মগ্রহণ কারী মোট তিনজন পেয়েছেন একুশে পদক ।যথাক্রমে বউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম, সঙ্গীতে ওস্তাদ পন্ডিত রামকানাই দাস, বাউল শিল্পী সুষমা দাস ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮