somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহেড়া জমিদার বাড়ী।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার প্রাক্তন সহকর্মীরা তাদের গতবারের পিকনিকে আমাকে দাওয়াত দিলে সাথে সাথে হ্যাঁ বলেছিলাম। গন্তব্য টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। পুলিশের ট্রেনিং একাডেমি হিসাবে রাজশাহীর সারদার নামই শুনেছি টাঙ্গাইলে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার আছে জানতাম না। ভেবেছিলাম নূতন স্থাপনা হবে, দেখলাম পুরানো এক জমিদার বাড়ী। মহেড়া জমিদার বাড়ী। পুরানো জমিদার বাড়ীর কথা উঠলে মন খারাপ হয়ে যায়। দেশের অনেক সুন্দর সুন্দর জমিদার বাড়ীগুলো এখন কেবল স্মৃতি, পড়ে আছে শুধু ধ্বংসাবশেষ। নড়াইল, হাটবাড়ীয়া, সাতক্ষীরা আমার দেখা এসব জমিদারবাড়ী গুলো এখন ধ্বংসস্তুপ। মহেড়া জমিদার বাড়ী দেখে মনটা ভাল হয়ে গেল, কারন জমিদার বাড়ীটা এখনো মোটামুটি ভাল অবস্থায় আছে। নেট ঘেটে যে সব তথ্য পেলাম সেগুলো থেকে বাড়ীটার এখনো ভাল থাকার কারন হিসাবে যা ধারনা করলাম :- এই জমিদাররা ১৯৪৭এই ভারতে চলে যাননি ১৯৬৫ পর্যন্ত এখানে বসবাস করছেন এবং ১৯৭২ সাল থেকে এটা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ বাড়ীটির নিয়ন্ত্রন ও রক্ষনাবেক্ষন করছে। সম্প্রতি বাড়ীটার বেশ কিছু সংস্কারএর কাজও হয়েছে। আমার জানা মতে দেশের প্রায় সব জমিদার বাড়ীই নষ্ট হয়েছে অবিভাবকহীন ভাবে পতিত পড়ে থাকার জন্য।

১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর মহেড়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। মহেড়া গ্রামে এসেই তারা এ সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়ি নির্মাণ করার পর তারা মহেড়া গ্রামের গরির মানুষের কাছে টাকা দাদন খাটাতে থাকেন এবং প্রভুত উন্নতি করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। শুরু হয় জমিদারি। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ মোহন সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই শাসকরা এলাকায় বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থাসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজও করেন। এখানে আছে বড় বড় ৩টি ভবন আর কাছারি বাড়ী । এই ভবন গুলো এবং কাছারি বাড়ীর নাম মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ। আরও আছে আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের থাকার বাড়ী এবং প্রার্থনার জন্য মন্দির। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। বাড়ীর সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি নাম বিশাখা সাগর। ভবন গুলোর পিছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দুইটা পুকুর। ভবন গুলোর সামনে সুন্দর ফুলের বাগান। ভবন গুলো আর বিশাখা সাগর এর মাঝখানে রাস্তার পাশে কয়েকটা উচু গোল কারুকার্যময় স্তম্ভ। কালীচরণ লজএর সামনে বেশ বড় একটা খোলা যায়গা বা মাঠ।

আমাদের ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আমরা ধ্বংস করেছি, সামান্য যে কয়েকটা অবশিষ্ট আছে সেগুলোরও নেই তেমন কোন প্রচার। মহেড়া জমিদার বাড়ীর কথা আমি নিজেই জানতাম না, আমার ধারনা অনেকেই জানেন না। অথচ ঢাকার খুব কাছে সুন্দর একটা স্থাপনা। জায়গাটা বেড়ানোর জন্য বা পিকনিকের জন্য একটা আদর্শ স্থান। সামনেই আসছে পিকনিকের সময়, সম্ভব হলে এবারই চলুন না পিকনিকের উছিলায় দেশের একটা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা দেখে আসুন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমনিতেও বেড়াতে যেতে পারেন, ছোট বড় সবারই ভাল লাগবে, আর বেড়াতে গেলে যেকোন সময়েই যেতে পারেন পিকনিক সিজনএর জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা। শৌখিন ফটোগ্রাফার যারা পুরানো স্থাপনার ছবি তুলতে ভালবাসেন আর আর্কিটেকচারের ছাত্র/ছাত্রীদের জায়গাটা পছন্দ হবে বলে আশা করি।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়ি। ঢাকা-টাংগাইল জাতীয় মহা সড়কের জামুর্কী হতে টাংগাইল এর দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে এবং টাংগাইল থেকে ঢাকার দিকে নাটিয়া পাড়া বাসস্ট্যান্ড হতে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ডুবাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছ থেকে মহা সড়কএর পূর্ব- দক্ষিণ দিকে একটু আঁকা-বাঁকা রাস্তায় প্রায় ০৪(চার) কিলোমিটার দুরত্বে মহেড়া জমিদার বাড়ী/ মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার অবস্থিত। কাছাকাছি আসলে একটু খেয়াল রাখবেন, ঢাকা-টাংগাইল জাতীয় মহা সড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারএর দিক নির্দেশনা দেখতে পাবেন।


মহেড়া জমিদার বাড়ীর কিছু ছবি।


মহারাজ লজ


আনন্দ লজ


চৌধুরী লজ


কালীচরণ লজ


বাড়ির দুইটি গেটের একটি (সিংহ দরজা)


কারুকার্যময় স্তম্ভ
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×