খাবারের সন্ধানে বের হয়েছে একদল কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে যদি শুধু খাবার সন্ধান করেই যায় তাহলে তারা নিজেরাই অন্য কারো শিকারে পরিণত হয়ে খাবার হয়ে যাবে। তাই সর্বপ্রথম ভাবতে হয় নিজেদের নিরাপত্তার কথা আর এই নিরাপত্তার কথা ভেবে দলনেতা দলের আকার বুজে একজন বা দুইজনকে ঠিক করে দেন কে নিরাপত্তার কাজটি করবে। নিরাপত্তা প্রহরী উঁচু টিলা বা গাছে উঠে যায় যাতে মাথা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে চারদিক ভাল করে নজর রাখতে পারে। প্রশিক্ষিত কড়া প্রহরী তার দলের নিরাপত্তায় কাজ করে যায় পরবর্তী প্রহরী তার স্থানে না আসা পর্যন্ত। যতক্ষণ এলাকা বিপদমুক্ত থাকে ততক্ষণ মৃদু শব্দ করতে করতে জানিয়ে দেয় সব কিছু ঠিক আছে তোমরা খাবারের সন্ধান চালিয়ে যাও। যদি কখনো যদি সামান্যতম বিপদের গন্ধ পাওয়া যায় বেজে উঠে তীব্র হুইসিল দলের সবাই আশ্রয় নেয় নিরাপদ জায়গায়। নিদিষ্ট সময় পর পর পরিবর্তন হয় প্রহরী কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও পাহারা দেওয়ার এই নিয়ম পরিবর্তন হয় না। এটা কোন প্রশিক্ষিত সেনা বাহিনীর কথা বা গল্প নয় এটা একটা প্রাণীদের প্রতিদিনের জীবন কথা আর এই প্রাণীটির নাম হল “মীরক্যাট” (Meerkat).
পরিচিতিঃ
মীরক্যাটরা আমাদের দেশের বেজী গোত্রীয় এক ধরণের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের পাওয়া যায় আফ্রিকা মহাদেশের বোতসোয়ানার কালাহারি মরুভূমি, নামিবিয়ার নামিবিয়া মরুভূমি, এঙ্গোলা ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে। এরা দলবদ্ধ হয়ে থাকে এক একটা দলে প্রায় ২০-৫০ জনের মত সদস্য থাকে। এদের দলকে মব বা গ্যাং বলা হয়। প্রকৃতিতে এরা ১২ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
নিরাপত্তা প্রহরী এরা মূলত পতঙ্গ-ভোজী বা পোকামাকড় খায় তারপরেও কিছু সরীসৃপ, সাপ, ছোট স্তন্যপায়ী, বিচ্ছু, মাকড়সা, ছোট পাখি ও শিকার করে। এদের শরীরে কিছু বিষ নিরোধক কিছু এন্টিবডি আছে যা মরুভূমির বিষাক্ত বিচ্ছু বা স্করপিয়নের কামড়ের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাদের শরীরে চর্বি বা খাদ্য সঞ্চয়ের কোন ব্যবস্থা নাই মানুষের মত তাদেরও প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন খুঁজে খেতে হয়।
এক বছর বয়সেই এরা প্রজনন-ক্ষম হয়ে যায় এবং বছরের যেকোনো সময়ই এরা সন্তান জন্ম দিতে পারে। এরা সাধারণত একসাথে ৩ টি বাচ্চা প্রসব করে যদিও মাঝেমাঝে ৫ টি বাচ্চা ও দেখা যায়। জন্মের তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চারা গর্তের বাহিরে আসার অনুমতি পায় না। আর যেই দিনটিতে বাচ্চারা প্রথম বাহিরে আসে সেটা হয় একটা উৎসবের মত। দলের সব সদস্য বাচ্চাদের গিরে দাঁড়ায় এবং নবাগত অতিথিদের এই ভুবনে স্বাগত জানায়।
গুরু শিষ্য দলের তরুণ ও দক্ষ শিকারিরা তাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেয় যাতে এই নতুন শিশুরাও একদিন ভাল শিকারি হয়ে উঠতে পারে। তাদের শিখানো হয় কি করে কামড় না খেয়ে বিচ্ছুর বিষাক্ত লেজ কেটে তাদের হত্যা করতে হয়, কি করে সাপের ডিম চুরি করে খেতে হয়, কি করে শত্রুর চোখে ধূলা দিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়। কি করে একজন ভাল সেন্ট্রি বা নিরাপত্তা প্রহরী হতে হয়। শিখানো হয় নানান কলাকৌশল যা তাদের এই দয়া মায়া হীন ও সার্বক্ষণিক প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে টিকে থাকতে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।
মীরক্যাটদের জীবনযাত্রা খুব অবাক করার মত আর মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণীয় তাইতো শুধু মীরক্যাটদের নিয়ে বিবিসি তৈরি করে এক অতি সুন্দর মুভি “দ্যা মীরক্যাটস” যা লক্ষ লক্ষ দর্শকের হৃদয় জয় করে মীরক্যাটদের পৃথিবীবাসীদের খুব পরিচিত এক প্রাণী হতে সাহায্য করেছে। তাদের সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট আর মীরক্যাটদের বাসস্থানও হয়েছে আগের থেকে অনেক বেশী নিরাপদ। বেঁচে থাক মীরক্যাট টিকিয়ে রাখো তোমাদের বংশধর অনন্তকাল ধরে।
প্রাণিজগতের নিয়ে ফেইসবুক পেইজ প্রাণিজগতের অজানা রহস্য