ডিসক্লেইমারঃ
ব্লগার নিরন্তর পথচলার স্লেজিং বিষয়ক এই পোস্টটি বেশ মজার। আমার নিজের একটা ব্যক্তিগত ইচ্ছা ছিলো এগুলো নিয়ে পোস্ট দেবার, তবে সময়াভাবে হয়ে উঠেনি। তার পোস্টের অনেকগুলা আগেই শুনেছিলাম, নতুন কয়েকটা শুনেও বেশ মজাই পেয়েছি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি যেগুলোকে সবচে' মজার স্লেজিং হিসেবে মনে করি, তার অনেকগুলাই সেখানে বাদ পড়েছে! প্রথমে ভেবেছিলাম মন্তব্যের ঘরে তাকে সেগুলো জানিয়ে দিবো, কিন্তু সংখ্যায় অনেক বেশী হওয়াতে তাই নিজেই পোস্ট দিয়ে দিলাম!
নিজে পোস্ট দেওয়াটা নৈতিকতার দিক দিয়ে ঠিক হচ্ছে কি না বুঝতে পারছি না; তাই সবাইকে অনুরোধ, আমারটার সাথে সাথে অবশ্যই অবশ্যই ব্লগার নিরন্তর পথচলার পোস্টও পড়বেন! যাই হোক চলুন দেখা যাক আমার পছন্দের কয়েকটাঃ
১। ভিভ রিচার্ডস ও গ্রেগ থমাস
গ্ল্যমারগন ও সমারসেটের একটা কাউন্টি ম্যাচে গ্ল্যমারগনের পেস বোলার গ্রেগ থমাস বল করছিলেন স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান অ্যান্ড্রু রিচার্ডসকে। পর পর দুটি বলে ভিভ রিচার্ডসকে পরাস্ত করার পরে থমাস এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘ তোমার বিস্মিত হওয়ার কিছু নাই! ফর ইয়োর ইনফো - এটা লাল রঙের, গোল আকৃ্তির এবং ওজন প্রায় পাঁচ আউন্স!’
পরের বলেই রিচার্ডস তাকে ‘রয়্যাল ট্রিটমেন্ট’ দিলো, বল হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে গিয়ে পড়লো মাঠের পাশের নদীটাতে! এবার রিচার্ডস এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘গ্রেগ, তুমি তো জানো বলটা দেখতে কেমন; যাও, ওটাকে এখন খুঁজে নিয়ে আসো!’
২। ফ্রেড ট্রুম্যান ও রামান সুব্বা রাও
এটা অনেকদিন আগের, এবং নিজের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই ঘটনা! ব্রিটিশ বোলার ফ্রেড ট্রুম্যান বোলিং করছিলেন। ব্যাটসম্যানের ‘এজ’ হলো, বল চলে গেল ফার্স্ট স্লিপে দাঁড়ানো রামান সুব্বা রাও-এর দু’পায়ের ফাঁকে এবং যথারীতি মিস!
ট্রুম্যান কিছুই বললো না। সে যখন ওভার শেষে রামান সুব্বা রাওকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, রাও লজ্জিত স্বরে মিনমিনে গলায় ক্ষমা চাইলো, ‘স্যরি, আই শুড হ্যাভ কেপ্ট মাই লেগস টুগেদার’!
ক্ষিপ্ত ট্রুম্যান শুধু বললো, ’২৬ বছর আগে তোমার মায়েরও তাই করা উচিত ছিলো’!
৩। শেন ওয়ার্ন ও সৌরভ গাঙ্গুলী
ভারতের মাটিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ম্যাচ হচ্ছে! শচীন-গাঙ্গুলী ওপেনিং জুটি ব্যাটিং করছে অনেকক্ষন ধরে।
একসময় শেন ওয়ার্নের বোলিং-এ গাঙ্গুলী বেশ কয়েকটা বল টাইটভাবে ডিফেন্স করলো! ওয়ার্ন সামনে হেঁটে গিয়ে গাঙ্গুলীকে বললো, ‘শোনো, এই বিশাল সমর্থকরা পয়সা কেটে মাঠে এসেছে শচীনের সুপার শটগুলা দেখার জন্য, তোমার ডিফেন্স করা দেখতে নয়!’
বলার অপেক্ষা রাখে না, এক ওভার পরেই গাঙ্গুলী স্ট্যাম্পড আউট বাই ওয়ার্ন!
৪। রিচার্ড স্টবো ও ড্যানি ওয়াহ
সেন্স অফ হিউমারের দিক দিয়ে এটাকেই আমি সেরা বলে মনে করি!
সিডনীতে একটা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক পেস বোলার রিচার্ড স্টবো বল করছিলো ড্যানি ওয়াহকে। ড্যানি হচ্ছে স্টিভ ও মার্ক ওয়াহ-র আপন ছোট ভাই।
স্টবো-র টানা কয়েকটা ডেলিভারিতে ড্যানি ‘আউটসাইড এজ’ হওয়া থেকে বারবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাচ্ছিলো। স্টবো এগিয়ে এসে বিস্মিতস্বরে বললোঃ ‘মাইট, আর ইউ ফাকিং অ্যাডোপ্টেড?’
৫। ইয়ান হিলি ও অর্জুনা রানাতুঙ্গা
ইয়ান হিলির এই লিজেন্ডারী কমেন্টটা ধরা পড়েছিলো চ্যানেল নাইনের মাইক্রোফোনে!
সিডনিতে একটা ওয়ানডে ম্যাচে প্রচন্ড গরম পড়েছিলো! ব্যাটিং করতে করতে রানাতুঙ্গা অত্যধিক তাপে বেশ পরিশ্রান্ত হয়ে শেষমেষ একজন ‘রানার’ ডাকলো!
পিছন থেকে ইয়ান হিলি বলে উঠলো, ‘আনফিট ভোটকা এক াগী হওয়ার কারনে নিশ্চয়ই তুমি রানার পেতে পারো না!’
৬। মার্ভ হিউজ ও ভিভ রিচার্ডস
মার্ভ হিউজ ও ভিভ রিচার্ডসের শত্রুতা বেশ পুরনো! সঙ্গতকারনেই হিউজ সবসময়ই রিচার্ডসকে স্লেজিং-এর মাধ্যমে প্রায়ই উত্যক্ত করতো!
একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে একটা টেস্ট ম্যাচে হিউজ একটা বাজে শব্দও ব্যবহার করলো না রিচার্ডসের প্রতি! শুধু প্রতিটা বল শেষেই রিচার্ডসের দিকে নির্নিমেষ একটা চাহনি দিতে থাকলো!
বিরক্ত রিচার্ডস বললোঃ ‘এটা আমাদের ভূমি, আমাদের কালচার! আমার দিকে তোমার তাকিয়ে থাকার দরকার নেই। আমাদের কালচারে আমরা শুধু বোলিং-এই মনোযোগ দেই!’
এক্ষেত্রেও হিউজ কিছুই বললো না যেটা তার চরিত্রের সাথে আসলেই যায় না! কিন্তু এরপর যখন সে রিচার্ডসকে আউট করলো, সামনে এগিয়ে এসে ঘোষনা করলোঃ ‘আমাদের কালচারে আমরা শুধু বলি – ফাক অফ!’
৭। রবি শাস্ত্রী ও অসি দ্বাদশ খেলোয়াড়
রবি শাস্ত্রী ব্যাট করছিলো অসিদের বিরুদ্ধে! কাছেই ফিল্ডিং করছিলো অসিদের দ্বাদশ খেলোয়াড় (নামটা মনে নাই)। শাস্ত্রী একটা বলে আলতো শট নিলো ওই ফিল্ডারের দিকে এবং একটা সিঙ্গেলস নেওয়ার চেষ্টা করলো! ওই দ্বাদশ ব্যাক্তি ত্বড়িৎগতিতে বলটা পিক করলো, এবং চেঁচিয়ে শাস্ত্রীকে বললো, ‘তুমি যদি ক্রিজ থেকে এক পা-ও এগিয়েছো, আই উইল ব্রেক ইয়োর ফাকিং হেড!’
শাস্ত্রীর জবাবঃ ‘তুমি যেভাবে কথা বলতে পারো, সেভাবে যদি ব্যাটিংটাও করতে পারতে, তাইলে আজকে আর ফাকিং দ্বাদশ খেলোয়াড় থাকতে না!’
৮। ইয়ান হিলি ও অর্জুনা রানাতুঙ্গা
হিলি-রানাতুঙ্গার আরো একটা এপিক!
একটা টেস্ট ম্যাচে শেন ওয়ার্ন অনেকক্ষন ধরেই চেষ্টা করছিলো অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে প্রলুব্ধ করতে যাতে সে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে ও শট খেলার চেষ্টা করে! কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না, রানাতুঙ্গা অবিচল ক্রিজে দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করেই যাচ্ছে!
পিছন থেকে তাই ইয়ান হিলি বললোঃ ‘‘ওহে ওয়ার্নি, বলটা যেখানে ফেলছো, সেখানে বরং একটা ‘মারস’ চকলেট রেখে দাও, তাইলেই হয়তো ভোটকা খাদকটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে!’’
৯। স্টিভ ওয়াহ ও পার্থিব প্যাটেল
এটা ২০০৪ এর ঘটনা, অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভারতের সাথে টেস্ট সিরিজ! সিরিজে ১-১ এ সমতা। সিডনিতে ফাইনাল টেস্ট হচ্ছে, এবং ভারত ঐতিহাসিক সিরিজ বিজয় থেকে ছয় উইকেট দূরে আছে! ব্যাটিং-এ আছে অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ যে কিনা আগেই ঘোষনা করেছে এটাই তার জীবনের শেষ ম্যাচ! সিরিজ বাঁচানোর তাগিদে স্টিভ এই টেস্টটিকে ড্র করার জন্যে প্রচন্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিছুতেই কোন আজে-বাজে শট খেলছে না! মূলত ভারতের বিজয়ের সামনে একমাত্র বাধা বলতে গেলে এখন স্টিভ ওয়াহই!
তাই স্টিভকে প্রলুব্ধ করার জন্যে ১৬-বছর বয়সী উইকেট কিপার পার্থিব প্যাটেল বললোঃ ‘‘হেই স্টিভ, যাবার আগে তোমার সেই বিখ্যাত কয়েকটা স্লগ সুইপ মেরে দেখলে কেমন হয়, বলো তো?’’
স্টিভের উত্তরঃ ‘বাবু, ইউ বেটার শো মি সাম রেসপেক্ট! মনে রেখো, আমার যখন ডেব্যু হয় তখন তুমি ডায়াপার ভিজিয়ে বেড়াও!’