প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বুয়েট, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার আলোচনার মাধ্যমে মেট্রোরেল রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে মেট্রোরেলের গতিপথ বারবার ঘুরছে, তা সত্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের মূল নকশার বড় ক্ষতি আগেই করা হয়েছে। এখানে ক্রিসেন্ট লেকের ওপর সেতু তৈরি ও মাজার করা হয়েছে। মসজিদ ও মিউজিয়ামও নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো লুই কানের নকশায় কখনোই ছিল না।
জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর-পর্বে বেনজীর আহমেদের লিখিত প্রশ্ন এবং ফজলে রাব্বী মিয়ার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই টেলিভিশনে টক শোতে বলেন, মেট্রো রেলপথ হলে সংসদ ভবন এলাকার কয়েকটা খেজুরগাছ কাটা যাবে। কেউ কেউ খেজুরগাছ বাঁচাতে বিমানবন্দর ধ্বংস করতে চান। বিমানবন্দর বড়, না খেজুর গাছ বড়? জিয়াউর রহমানকে কবর দেওয়ার সময় হাজার খানেক গাছ কাটা হয়। তখন কেউ টুঁ শব্দও করেনি।
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টক শোতে যাঁরা আলোচনার তুফান তুলে দেন, তাঁদের অনুরোধ করব, লুই কানের মূল নকশাটা দেখেন। সত্যিকার অর্থে কারা নকশা নষ্ট করেছে, তাদের কথাটা একটু মুখ ফুটে বলেন।’
অধিবেশনকক্ষে উপস্থিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরশাদ সাহেব এখানেই আছেন। তিনিই একটি বাক্স এনে বললেন, এখানে জিয়াউর রহমানের লাশ রাখা হবে। আমাকেও ওই সময় বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়া থেকে এনে ওখানে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি তাতে রাজি হইনি।’ তিনি বলেন, লুই কানের নকশায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বাড়ির কথা থাকলেও অনেকেই তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এ নিয়ে মামলাও হয়। কিন্তু যেখানটায় ক্ষতি হলো, তা নিয়ে কেউ কথা বলেন না। তিনি আরও বলেন, মূল নকশায় ক্রিসেন্ট লেক আছে, তারপর সংসদ। কিন্তু লেকের মাঝামাঝি সেতু নির্মাণ করায় তা তীর-ধনুকের মতো হয়ে গেছে। এটা যুদ্ধের প্রতীক। আর ক্রিসেন্ট শান্তির প্রতীক।
শেখ হাসিনা বলেন, তেজগাঁও বিমানবন্দর সম্পূর্ণ সচল বিমান ঘাঁটি। সামরিক ঘাঁটি ও ত্রাণ তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এটি ব্যবহূত হয়ে আসছে। এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল) পথ বিজয় সরণি দিয়ে নির্মিত হলে তা বিমানের অ্যাপ্রোচ পথে আড়াআড়িভাবে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এমআরটি লাইন-৬-এর উচ্চতার কারণে বিমান অবতরণকালে ল্যান্ডিং অ্যাপ্রোচের উচ্চতা বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিমানকে রানওয়ের প্রথম ভাগের একটি বড় অংশ বাদ দিয়ে অবতরণ করতে হবে। ফলে ব্যবহার্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে। যা বিমানবন্দরটিকে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমানের অবতরণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। এ ছাড়া মেট্রোরেল বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের কাছ দিয়ে গেলে শব্দদূষণ বাড়বে, ভবনটির কাঠামোয় প্রভাব পড়বে এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমআরপি-৬ বিজয় সরণি দিয়ে নির্মিত হলে নভোথিয়েটার ভবন আড়ালে পড়ে যাবে। ফলে ভবনটি সৌন্দর্য হারাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, এমআরটি-৬ পথটি বিজয় সরণির মধ্যবর্তী সড়কদ্বীপ দিয়ে গেলে ফার্মগেটে মোড় নেওয়ার সময় ব্যক্তিমালিকানার দুটি ছয়তলা ভবন ভাঙতে হবে। বিজয় সরণির দক্ষিণ পাশের ফুটপাত দিয়ে গেলে ব্যক্তিমালিকানার ছয় থেকে আটটি বাড়ি ভাঙতে হবে। কিন্তু খামারবাড়ি হয়ে গেলে একটি মাত্র সরকারি ভবনের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। এ ছাড়া এমআরটি-৬ লাইনটি সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের রাস্তা অতিক্রম করার আগে ও পরে বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করবে। এর ৩০-৪০ ফুটের মধ্যে বহু ভবন ও স্থাপনা রয়েছে। সংসদ ভবনের মূল স্থাপনা পূর্ব পাশের রাস্তা হতে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ ফুট দূরে থাকায় তা শব্দদূষণ বা কম্পনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
বিকল্প অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না: এস কে আবু বাকেরের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা সাময়িক। এটি নিরসনের উদ্যোগ চলছে। আশা করা যায়, শিগগির এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বিকল্প অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না।
সামসুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে বর্তমান সরকার মিরপুর-বিমানবন্দর সড়কে ফ্লাইওভার, বনানী ও জুরাইন রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-তারাব-কাঁচপুর সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ, যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর পোল্ডার রোডকে আট লেনে উন্নীতকরণ, গাবতলী-সোয়ারীঘাট সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বাইপাস সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মিরপুর-ধউর-কড্ডা সড়ক নির্মাণ এবং সোয়ারীঘাট-সদরঘাট-পোস্তগোলা সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নিকট ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তির আশাবাদ: মজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করা যায়, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিকট ভবিষ্যতে স্বাক্ষরিত হবে। ভারতের সঙ্গে ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত যৌথ ইশতেহার অনুযায়ী আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সুলতানপুর-চিনাইর-আখাউড়া-সেনারবাদি (আগরতলা) সড়কপথে ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো পরিবহনের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয়। গত ২৮ মার্চ থেকে এই পথে ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো পরিবহন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে এ পথে ভারতীয় পণ্য সীমিত আকারে পরিবহন করা হচ্ছে।
-- ভাই আমরা সাধারন মানুষ কোনদিকে যাব???